অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
এবার ফেনী নদী থেকে পানি নেওয়ার সমঝোতা সই করেছে বাংলাদেশ। সই হওয়া সমঝোতা স্মারকের আওতায় বাংলাদেশের ফেনী নদী থেকে পানি প্রত্যাহার করতে পারবে ভারত। সেই পানি যাবে ত্রিপুরার সাবরুম শহরে পানি সরবরাহ প্রকল্পে। এছাড়া আরও ছয়টি অভিন্ন নদীর (মনু, মুহুরি, খোয়াই, গোমতী, ধরলা, দুধকুমার) জল কীভাবে ভাগাভাগি করা যায়, অবিলম্বে তার একটি খসড়া কাঠামো প্রস্তুত করতে দুই নেতা যৌথ নদী কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন।
ভারতের হায়দরাবাদ হাউসে আজ শনিবার অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা-নয়াদিল্লির মধ্য দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ বৈঠক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বৈঠকে নিজ নিজ দেশের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন। বৈঠক শেষে তাঁদের উপস্থিতিতেই সাত চুক্তি সই হয়। এ সময় দুই দেশের সরকারপ্রধান তিনটি যৌথ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।
টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর এটাই শেখ হাসিনার প্রথম দিল্লী সফর। এর আগে ২০১৭ সালে তিনি সর্বশেষ দিল্লি সফর করেন। কিন্তু যেসব ইস্যুকে বাংলাদেশের নেতারা এর আগে গুরুত্বপূর্ণ বলে বর্ণনা করেছেন, সেগুলো নিয়ে বৈঠকে কী কথাবার্তা হয়েছে?
জানা গেছে, প্রত্যাশিতভাবেই তিস্তা নিয়ে আলাদা কোনও সমঝোতা বা চুক্তি এই সফরে স্বাক্ষরিত হয়নি। এমনকি তিস্তার পানিবন্টন নিয়ে ২০১১ সালে দুই দেশের সরকার যে অন্তর্বর্তী চুক্তির কাঠামোয় একমত হয়েছিল, তার বাস্তবায়ন হওয়ার আশায় বাংলাদেশের জনগণ কিন্তু অধীর আগ্রহে সেই অপেক্ষায় থাকলেও এবাররের সফরে তার কোন সমাধান মেলেনি।
এছাড়া রহিঙ্গা ইস্যুতে নিয়ে আলোচনায় রোহিঙ্গা শব্দটি অবশ্য ব্যবহার করা হয়নি, বলা হয়েছে ‘মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে আশ্রয়চ্যুত মানুষজন’।
এই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে ভারত আরও সক্রিয় ভূমিকা নিক, মিয়ানমারের ওপর আরও বেশি করে তাদের প্রভাব খাটাক – বাংলাদেশ এই অনুরোধ জানিয়ে আসছে বহু দিন ধরে।
জানা গেছে, “রোহিঙ্গাদের দ্রুত ও নিরাপদ প্রত্যাবাসনের পথ প্রশস্ত করতে যে অধিকতর প্রয়াস দরকার, তারা সে ব্যাপারে একমত হয়েছেন।”
“মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের নিরাপত্তা পরিবেশ ও আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটিয়েই” যে সেটা করতে হবে, সে কথাও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
ভারত যে রাখাইন প্রদেশে ইতোমধ্যেই ২৫০ বাড়ি বানিয়ে ফেলেছে এবং ফিরতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের জন্য সেখানে আরও বাড়ি নির্মিত হচ্ছে সেটাও উল্লেখ করা হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের জন্য গত দু’বছর ধরে ভারত যে মানবিক ত্রাণ পাঠিয়ে আসছে, তার জন্য ধন্যবাদও জানিয়েছে বাংলাদেশ।
কিন্তু এগুলোও কোনটাই বিশেষ নতুন কোনও কথা নয়। বরং রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারকে চাপ দেওয়ার প্রশ্নে ভারতের কাছ থেকে যে আরও বলিষ্ঠ ভূমিকা বাংলাদেশ আশা করছিল, তা তেমন পূর্ণ হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না।
ভারত এক্ষেত্রে তার দুই বন্ধু দেশ, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে একটা ভারসাম্যের নীতি নিয়েই এতকাল চলেছে – শেখ হাসিনার এই সফরেও দিল্লির সেই মনোভাবেরই প্রতিফলন দেখা গেছে।
এছাড়া ভারত ও বাংলাদেশ এদিন যে যৌথ বিবৃতিটি জারি করেছে, সেই সুদীর্ঘ বয়ানের কোথাও এনআরসি শব্দটির উল্লেখ পর্যন্ত নেই।
ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, “আমরা তো বরাবরই বলে আসছি জাতীয় নাগরিকপঞ্জী বা এনআরসি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তাহলে আন্তর্জাতিক স্তরের একটি যৌথ বিবৃতিতে কেন তার উল্লেখ থাকতে যাবে?”
কূটনৈতিক যুক্তি হিসেবে হয়তো ঠিকই আছে, কিন্তু ঘটনা হল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চেয়েছিলেন এনআরসি নিয়ে বাংলাদেশের দুশ্চিন্তার কিছু নেই – এই আশ্বাসটা সরাসরি প্রধানমন্ত্রী মোদীর মুখ থেকে আসুক।
সপ্তাহখানেক আগে নিউ ইয়র্কে দুজনের বৈঠকের পর নরেন্দ্র মোদীকে উদ্ধৃত করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, তিনি শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করে বলেছেন এতে বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কিছু নেই।
এই কথাটাই দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে বলুন, বা ভারত সরকার অন্য কোনোভাবে প্রকাশ্যে জানাক – এটাই ছিল বাংলাদেশের প্রত্যাশা করলে মোদি এ ব্যাপারে কোন কথা বলেননি।
এদিকে ভারতের সাথে ফেনী নদী চুক্তির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, বছরের পর বছর ধরে কাকুতি মিনতি করে পাচ্ছিনা তিস্তা নদীর পানি। কিংবা অন্য কোন নদীর পানি। আর আচমকা সরকার রাজী হয়ে গেলাম আমাদের ফেনী নদীর পানি ভারতকে দিতে। এটা চরম অন্যায়। একটা দেশ আরেকটা দেশের স্বার্থ দেখে বিনিময়ে কিছু পেলে। কি পেয়েছে বাংলাদেশ যে আমাদের পানি দিতে হবে ভারতকে? কয়েক দশক যাবত আমাদের ন্যায্য পানি দিচ্ছে না ভারত। বাংলাদেশ সরকার কেন রাজী হলো তাদেরকে বাংলাদেশের পানি দিতে, সেও আবার দেশের মানুষকে অন্ধকারে রেখে? তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি ফেনী নদীর পানি নিয়ে ভারতের সঙ্গে সমঝোতার।
আরও পড়ুন:
হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানাতে একজন মন্ত্রীও পাঠাননি মোদি!
এবার আগরতলা-ঢাকা ফ্লাইট চাইলো ভারত