অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
যুবলীগ নেতা ক্যাসিনো সম্রাটের গ্রেফতার নিয়ে গুঞ্জন ছিল বেশ কয়েক দিন ধরেই। কিন্তু উপরের গ্রীণ সিগনালের অভাবে তাকে গ্রেফতার দেখাতে পারছিলো না র্যাব আর পুলিশ। বেশ কয়েকটি পত্রিকা দাবি করেছিল যে, গোয়েন্দা জালে রয়েছেন ক্যাসিনো সম্রাট। ভারতের সাথে অসম ও দেশের সার্বভৌমত্ব বিরোধী বেশ কিছু চুক্তি যখন জনগণের মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়ালো, ঠিক সেসময়ে গ্রেফতার দেখানো হলো ক্যাসিনো সম্রাটকে।
কিন্তু সে গ্রেফতার নিয়ে প্রশাসন ও মিডিয়ার পক্ষ থেকে তৈরী করা হলো ধূম্রজাল। ডজন ডজন মিডিয়া আর হাজারও গোয়েন্দার চোখ ফাঁকি দিয়ে যুবলীগ নেতা ক্যাসিনো সম্রাট চলে গেল রাজধানী থেকে বহুদূরে ভারতের সীমান্তের কাছাকাছি নিভৃত পল্লীতে। যুবলীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা হয়েও আশ্রয় নিলেন জামায়াত নেতার বাড়িতে! কল্পকাহিনী বললেও তো ভুল হবে এমন সিনেমাকে। হয়তো এটাকে সিনেমা বললেও ভুল হবে। কি বলতে হবে তা নিরূপন করার দায়িত্ব রইল পাঠকের উপর।
গুজব নিয়ে বিশ্ব ব্যাপি মানুষ সোচ্চার হচ্ছে। অথচ শুনতে খারাপ লাগলেও সত্য যে, আমাদের দেশে সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার গুজব ছড়ানো হয়েছে। এমনকি দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট অনেক সত্য ঘটনাকেও সরকার ও প্রশাসন গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের মেইনস্ট্রিম মিডিয়া অধিকাংশ সময়েই সত্য উদঘাটনের চেষ্টা না করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিপথগামী কর্মকর্তাদের রটিয়ে দেয়া অসত্য খবরকেই জোরেশোরে প্রচার করে আসছে। এতে তারা পাঠকদের পর্যাপ্ত নিন্দা কুড়ালেও সত্যে ফেরার সাহস দেখাতে পারেনি কোনো গণমাধ্যমই।
ঢাকার যুবলীগ নেতা সম্রাটকে গ্রেফতার নিয়েও একই ধরণের আচরণ করেছে দেশের মেইনস্ট্রিম মিডিয়াগুলো। এখানে শুধুমাত্র সুপরিচিত গণমাধ্যমের ওয়েব ভার্সনের স্ক্রীনশট তুলে ধরছি।
ইত্তেফাক খবর দিয়েছে এভাবে – ‘জামায়াত নেতার যে বাড়িতে লুকিয়েছিলেন সম্রাট’।
ডেইলি স্টারের বাংলা সংস্করণ লিখেছে- ‘জামায়াত নেতার বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন যুবলীগ নেতা সম্রাট’।
যুগান্তর বলছে- ‘জামায়াত নেতার বাড়িতে আত্মগোপন করেছিলেন সম্রাট’।
ইনকিলাব লিখেছে- ‘জামায়াত নেতার বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন, পালাতে চেয়েছিলেন ভারতে’।
এনটিভি লিখেছে- ‘জামায়াত নেতার’ বাড়িতে আত্মগোপন করেছিলেন সম্রাট।
ইটিভি লিখেছে- ‘জামায়াত নেতার বাড়িতে ছিলেন সম্রাট’।
এভাবে আরও অনেক মিডিয়া খবরটি ছেপেছে। অথচ এর স্বপক্ষে তেমন কোনো প্রমাণ তারা উপস্থাপনের প্রয়োজন মনে করেনি। র্যাব কিংবা স্থানীয় আওয়ামী লীগের একজন চেয়ারম্যানের বক্তব্যকেই তারা সূত্র হিসেবে গ্রহণ করেছে।
তবে স্থানীয় চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের আমীর মাহফুজুর রহমান জানান মনির চৌধুরীর সাথে জামায়াত-শিবিরের কোন সম্পৃক্ততা ছিল না। সে কখনো আমাদের রাজনীতি করেনি, আমরা জানি তিনি একজন পরিবহন ব্যবসায়ী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই বাড়িটি স্টার লাইন পরিবহনের মালিক হাজী আলা উদ্দিনের ভগ্নিপতি ও স্টার লাইন পরিহনের পরিচালক মনির চৌধুরীর। মিডিয়াগুলোর দাবি যদি সত্য হয় তাহলে বহুল পরিচিত স্টার লাইন পরিবহনের সাথে জামায়াত শিবিরের সম্পৃক্ততা রয়েছে। সত্যি কি তাই? যদি তাই না হয় তাহলে প্রশ্ন হলো, মিডিয়া কি গুজব ছড়াতে পারে? গণমাধ্যম কি গুজবের বাহন হতে পারে?
আমাদের প্রতিনিধি ছুটে গিয়েছিলেন কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সেই আলকরা গ্রামে। সেখানে গিয়ে জানা যায়, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সদ্য বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাটকে র্যাব যে বাড়ি থেকে গ্রেফতারের দাবি করেছে সে বাড়ির মালিক মনির চৌধুরী সরাসরি রাজনীতিতে নেতৃত্ব না দিলেও মূলত সে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তার অর্থায়ন গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়।
অথচ দেশের প্রায় সকল গণমাধ্যম বিনা বিচার বিশ্লেষণে প্রচার করে এ কথা প্রায় প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে যে, জামায়াত নেতার বাড়িতে আত্মগোপন করেছিলেন সম্রাট! কালের আবর্তনে এই পত্রিকাগুলোই হবে ইতিহাসের উপাদান। কোনো একসময় যদি কোনো সরকার জামায়াত নেতাদের ক্যাসিনোর মূল হোতা বলে প্রচার প্রচারণা কিংবা ট্রাইব্যুনাল তৈরী করে বিচারের নামে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করতে চায়, তাহলে এই পত্রিকাগুলোই শক্তিশালী প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। অথচ এখানে জামায়াতের কোনো নেতা তো দূরের কথা একজন সমর্থকেরও অংশগ্রহন ছিল না!