অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন বহুল সমালোচিত যুবলীগ ও ছাত্রলীগ এক সময় শেখ হাসিনার ভ্যানগার্ড হিসেবে খ্যাত ছিল। শেখ হাসিনাও প্রায় সময় বুক ফুলিয়ে বলতেন আমার ছাত্রলীগ, আমার যুবলীগ। আর সংগঠন দুইটির নেতাকর্মীরাও নিজেদেরকে শেখ হাসিনার ভ্যানগার্ড হিসেবে নিজেদেরকে পরিচয় দিতেন। কালের পরিক্রমায় বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সেই যুবলীগ-ছাত্রলীগ এখন শেখ হাসিনার গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। দুইটি সংগঠনকে তিনি এখন গিলতেও পারছেন না আবার ফেলতেও পারছেন না।
বিগত ১১ বছর ধরে শেখ হাসিনা সংগঠন দুইটিকে ক্ষমতার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। অবৈধভাবে দখল করা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য যখন যা করার দরকার ছিল যুবলীগ-ছাত্রলীগকে দিয়ে শেখহাসিনা সবই করিয়েছেন।
দেখা গেছে, বিগত দিনগুলোতে জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের সময় নৌকার প্রার্থীকে জেতাতে এই যুবলীগ-ছাত্রলীগ কেন্দ্রদখল,জালভোট, ব্যালট ছিনতাই, হামলা-ভাঙচুরসহ ভয়াবহ তাণ্ডব সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। নির্বাচনের আগের রাতেই তারা ভোটডাকাতি করেছে।
দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দখলে রাখতে সাধারণ শিক্ষার্থীসহ ভিন্নমতের ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের ওপর এমন কোনো নির্যাতন নেই যা ছাত্রলীগ করেনি। ছাত্রলীগের এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সর্বশেষ উদাহরণ হলো বুয়েটে মেধাবী ছাত্র আবরারকে পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনা।
এছাড়া, বিরোধী দলের মিছিল-সমাবেশে বাধা দেয়া, হামলা, ভাঙচুর, আগুন, মারধরসহ সবই ছাত্রলীগকে দিয়ে সবই করিয়েছে শেখ হাসিনা।
সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় ছিল হাজার অপকর্ম করার পরও যুবলীগ-ছাত্রলীগের এসব সন্ত্রাসীকে শাস্তি না দিয়ে তাদেরকে পদ পদবীসহ বিভিন্নভাবে পুরষ্কৃত করা হয়েছে। দেখা গেছে, কোটা আন্দোলন ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে যুবলীগ-ছাত্রলীগকে দিয়ে শেখ হাসিনা প্রতিপক্ষকে দমন করেছেন। এ কাজে যার ভুমিকা যত বেশি ছিল তাকেই কাছে টেনেছেন হাসিনা।
এভাবে যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হাসিনাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার পাশাপাশি জড়িয়ে পড়ে খুন-হত্যা, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি, মানুষের বাড়িঘর ও জমি দখল, জুয়া, মাদকব্যবসাসহ নানা অপকর্মে। যুবলীগ-ছাত্রলীগের এসব অপকর্মের বিস্ফোরণ ঘটার পর এখন শেখ হাসিনার টনক নড়েছে।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দলটির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা যুবলীগ ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড নিয়ে দলের সভাপতি শেখ হাসিনাকে অনেক আগেই সতর্ক করেছিলেন। সংগঠন দুইটির লাগাম ধরে টানার জন্যও তারা শেখ হাসিনাকে বলেছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনা তখন তাদের কথার কোনো পাত্তাই দেন নি।
সূত্রগুলো বলছে, যুবলীগ-ছাত্রলীগ এখন শেখ হাসিনার গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। এদেরকে সহজে গিলতেও পারছেন না আবার ফেলতেও পারছেন না।
আরেকটি সূত্র বলছে, গত সংসদ নির্বাচনের আগ থেকেই শেখ হাসিনা যুবলীগ-ছাত্রলীগের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। নির্বাচন সামনে থাকায় তখন তিনি কোনো অ্যাকশনে যাননি। তখন অ্যাকশনে গেলে দলের মধ্যে গ্রুপ সৃষ্টি হয়ে যেত। ভোটডাকাতিতে এদেরকে ব্যবহার করতে পারতেন না। এ কারণে, নির্বাচনের আগে তিনি যুবলীগ-ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে কোনো অ্যাকশনে যাননি।