• যোগাযোগ
বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৩, ২০২৩
Analysis BD
  • মূলপাতা
  • বিশেষ অ্যানালাইসিস
  • রাজনীতি
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • মতামত
  • কলাম
  • ব্লগ থেকে
No Result
View All Result
  • মূলপাতা
  • বিশেষ অ্যানালাইসিস
  • রাজনীতি
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • মতামত
  • কলাম
  • ব্লগ থেকে
No Result
View All Result
Analysis BD
No Result
View All Result
Home Home Post

ঢাবিতে প্রশাসনের প্রশ্রয়ে ছাত্রলীগই হর্তাকর্তা!

অক্টোবর ২১, ২০১৯
in Home Post, বিশেষ অ্যানালাইসিস
Share on FacebookShare on Twitter

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নির্মম নির্যাতনে চোখ হারাতে বসেছিলেন এহসান রফিক। দেশ-বিদেশে দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর তাঁর চোখ রক্ষা পেয়েছে। কিন্তু নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আর ফিরে আসার সাহস করেননি তিনি। পাড়ি জমিয়েছেন মালয়েশিয়ার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

ক্যালকুলেটর ধার নেওয়া নিয়ে গত বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি সহপাঠী ছাত্রলীগ নেতারা হলের একটি কক্ষে আটকে রেখে নির্যাতন করেছিলেন এহসানকে। তাঁর একটি চোখের কর্নিয়া গুরুতর জখম হয়। এ ঘটনায় তুমুল সমালোচনার মুখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসএম হল শাখা ছাত্রলীগের সাত নেতাকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করেছিল। তাঁদের ছয়জন এরই মধ্যে ক্লাস শুরু করেছেন।

২০১৫ সালের ২ আগস্ট রাতে বিজয় একাত্তর হলে আন্তর্জাতিক ব্যবসায় (আইবি) বিভাগের শিক্ষার্থী মো. হোসাইন মিয়াকে ছাত্রশিবিরের কর্মী আখ্যা দিয়ে বেধড়ক মারধর করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। অথচ হোসাইন ছিলেন ছাত্রলীগেরই কর্মী। ওই ঘটনায় হলের তদন্ত কমিটি হল শাখা ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি শেখ ইনান ও সাধারণ সম্পাদক ফুয়াদ হোসেনসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে। সাড়ে তিন বছর পার হলেও সেই সুপারিশ বাস্তবায়ন করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরে হলের নেতা থেকে পদোন্নতি পেয়ে শেখ ইনান এখন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক। ফুয়াদ হয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটির আইনবিষয়ক সম্পাদক।

১০ বছরের বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের ভ্রাতৃপ্রতিম ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের এখন একচ্ছত্র আধিপত্য। একসময়ের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলের কার্যক্রম ক্যাম্পাসে নেই বললেই চলে। প্রায় ৯ বছর ক্যাম্পাসে তাদের উপস্থিতিই ছিল না। গত মার্চ মাসে ডাকসু নির্বাচনের পর থেকে তারা ক্যাম্পাসে যাতায়াত শুরু করেছে। এর বাইরে ক্রিয়াশীল রয়েছে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলো।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, আবাসিক হলগুলোতে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে ছাত্রলীগই সেখানে ‘হর্তাকর্তা’। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও নীতিনির্ধারণী সব জায়গায় এখন আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকেরা রয়েছেন। তাই সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা নির্যাতন চালালেও প্রশাসন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয় না। কোনো কোনো ঘটনায় তদন্ত কমিটি হলেও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় না। এ কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের নির্যাতনও বাধাহীন চলতে থাকে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কদাচিৎ ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে সাজার সুপারিশ করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেই সুপারিশ বাস্তবায়িত হয় না। আবার যেসব ছাত্রলীগ নেতা অপরাধ বা নির্যাতন করেন, তাঁরা পরে সংগঠনে ভালো পদও পান। এ কারণে তাঁরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগের সত্যতা মেলে ২০১৭ সালের ১৩ মার্চ বিজয় একাত্তর হলের একটি ঘটনায়। সেদিন রাত ১২টা থেকে ভোর সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বিভিন্ন কক্ষে ছাত্রলীগের কর্মীদের তুলে দেওয়া, ভাঙচুর ও বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটে। হলের আবাসিক শিক্ষকদের ধাওয়া দেয় ছাত্রলীগ, ভাঙচুর করে প্রাধ্যক্ষের কক্ষ। এ ঘটনায় হলের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, দীর্ঘ পরিকল্পনা ও কয়েক দফা বৈঠক করে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফকির রাসেল ও সাধারণ সম্পাদক নয়ন হাওলাদার কক্ষগুলো দখল করতে চেয়েছিলেন। কমিটি তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করলেও তা কার্যকর হয়নি।

তবে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান মনে করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যা ঘটে, তার চেয়ে বেশি রটে। তাঁর ভাষ্য, ছাত্রলীগ যেভাবে নির্যাতন করে বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়, তার সত্যতা তাঁরা পান না। এসব ঘটনার সঙ্গে তাঁরা পরিচিতও নন। নিজে একটি হলের প্রাধ্যক্ষ ছিলেন—এই উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, মাঝেমধ্যে বন্ধুবান্ধব ও সহপাঠীদের মধ্যে দু-একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। নালিশ আকারে যেসব ঘটনা কর্তৃপক্ষের কাছে আসে, অধিকাংশেরই কমবেশি বিচার হয়।

অথচ শীতে বারান্দায় ঘুমানো ও রাতে ছাত্রলীগের ‘গেস্টরুম কর্মসূচিতে’ কয়েক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এসএম হলের শিক্ষার্থী হাফিজুর মোল্লা মারা গিয়েছিলেন। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারির সেই ঘটনায় হল প্রশাসন তদন্ত কমিটি করেছিল। আড়াই বছর পরও সেই কমিটির প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হাফিজুরের অটোরিকশাচালক বাবাকে চার লাখ টাকা অনুদান দিলেও ওই ঘটনায় কারা জড়িত ছিলেন, তা জানার সুযোগ কারও হয়নি।

সাজা কমেছে নির্যাতনকারী নেতাদের

এহসান রফিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ক্যালকুলেটর ধার নেওয়াকে কেন্দ্র করে নির্যাতনের পর নিরাপত্তাসংকটের কারণে আবাসিক হলের বরাদ্দ পরিবর্তনের জন্য তিনি প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছিলেন। কর্তৃপক্ষ এহসানকে হল পরিবর্তনের সুযোগ না দিলেও তাঁকে নির্যাতনের ঘটনায় বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতাদের সাজা কমিয়ে দিয়েছে।

নির্যাতনের ঘটনায় এসএম হল শাখা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক ওমর ফারুককে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া শাখা ছাত্রলীগের প্রশিক্ষণবিষয়ক উপসম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে হিমেল, সহসম্পাদক রুহুল আমিন ব্যাপারী, সহসম্পাদক ফারদিন আহমেদ, কার্যকরী সদস্য আহসান উল্লাহ ও সামিউল হককে দুই বছর এবং সহসভাপতি আরিফুল ইসলামকে এক বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সাতজনেরই সাজার মেয়াদ কমিয়ে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। স্থায়ীভাবে বহিষ্কৃত ওমর ফারুকের সাজা কমে হয়েছে দুই বছর আর পাঁচজনের দুই বছরের বহিষ্কারাদেশ কমে হয়েছে এক বছর।

ওমর ফারুক বলেন, বছরের শুরুতে তাঁরা এহসানের বাবার কাছে গিয়ে ক্ষমা চেয়েছিলেন। তিনি তাঁদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। ফারুকের দাবি, এহসানের বাবার একটি লিখিত চিঠি নিয়ে এসে সেটি যুক্ত করে উপাচার্যের কাছে সাজা মওকুফের আবেদন করেন তাঁরা। উপাচার্য সেটি আমলে নিয়ে তাঁদের সাজা কমিয়ে দিয়েছেন।

এসএম হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহবুবুল আলম জোয়ার্দার বলেন, বহিষ্কৃতদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত পর্যালোচনা কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সাজা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এহসানের বাবা রফিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পর থেকেই ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা ঝিনাইদহের স্থানীয় নেতাদের দিয়ে তাঁদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছিলেন। এহসান বিদেশে চলে যাওয়ার পর ছাত্রলীগ নেতারা তাঁর কাছে যান। তাঁরা এক শিক্ষককে মুঠোফোনে ধরিয়ে দেন। তখন তিনি বাধ্য হয়ে তাঁদের পক্ষে কথা বলেন। তবে তিনি কোনো লিখিত চিঠি দেননি।

উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলেন, এহসানের বিষয়টি তাঁর মনে নেই। তবে নিয়ম মেনেই সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছিল বলে দাবি করেন তিনি।

ছাত্রলীগের অপরাধের বিচার হয় না

গত ১৫ মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও হলগুলোতে অন্তত ২২টি নির্যাতন ও অপরাধের ঘটনায় খবরের শিরোনাম হয়েছে ছাত্রলীগ। ঘটনাগুলোর পর ছাত্রলীগের দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে কখনো বলা হয়েছে, ঘটনার বিষয়ে তারা অবগত নয় কিংবা ছাত্রলীগের কেউ জড়িত নয়; আবার কখনো বলা হয়েছে, তদন্ত করে ‘সাংগঠনিক ব্যবস্থা’ নেওয়া হবে। তবে পরে আর কিছুই হয়নি, প্রায় প্রতিটি ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও থেকেছে নীরব।

সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটে গত ২৭ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের অতিথিকক্ষে। ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে না যাওয়ায় রানা আখন্দ নামের এক শিক্ষার্থীকে স্টাম্প দিয়ে পেটান হল শাখা ছাত্রলীগের কর্মী রাব্বী আহমেদ। এক দিন পর হল থেকে রাব্বীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হলেও ছাত্রলীগ তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

কর্মসূচিতে না যাওয়ায় ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে সূর্য সেন হলের একটি কক্ষে হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা ইমরান সাগরের কর্মীরা প্রথম বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে স্টাম্প দিয়ে পেটান। একই ‘অপরাধে’ ১৩ জুলাই মধ্যরাতে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের একটি কক্ষে ডেকে প্রথম বর্ষের ২৫ জন শিক্ষার্থীকে বেধড়ক পেটান ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে নির্বাচিত হল সংসদের এজিএস আবদুল্লাহ আল মুমিনের অনুসারীরা। ছাত্রলীগের পদচ্যুত সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে ‘প্রটোকল’ দিতে মধুর ক্যানটিনে না যাওয়ায় ৮ সেপ্টেম্বর রাতে সূর্য সেন হলের চারটি কক্ষে তালা দেন হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শরিফুল আলম।

ছাত্রলীগ ছেড়ে ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দেওয়ায় গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর রাতে জগন্নাথ হলে শিক্ষার্থী অনিন্দ্য মণ্ডলকে মারধর করে ছাত্রলীগ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে মারধরের শিকার হন ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক রাজীব দাস। অনিন্দ্য মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগ নিয়ে তাঁরা প্রক্টরের কাছে গেলে প্রক্টর তাঁদের হল প্রশাসনের কাছে যেতে বলেছিলেন। হল প্রাধ্যক্ষকে বিষয়টি জানালেও পরে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

হলগুলোতে নির্যাতনের ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে দায় এড়িয়ে গিয়ে প্রক্টর গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘ওগুলো হলের বিষয়, হল প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলুন।’

শিবির সন্দেহে মারধর, প্রশ্রয় প্রশাসনেরও

ছাত্রশিবিরের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ছাত্রলীগের পিটুনির ঘটনা শুধু বুয়েটে নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রায়ই ঘটে। সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এটি নিত্যদিনের দৃশ্য থাকলেও চলতি বছরে এ ধরনের ঘটনা কিছুটা কমে এসেছে। ছাত্রলীগের ভিন্নমতাবলম্বী হলে, এমনকি কারও সঙ্গে ব্যক্তিগত শত্রুতা থাকলেও তাঁকে ‘শিবির কর্মী’ আখ্যা দিয়ে মারধরের ঘটনার নজির রয়েছে।

২০১৭ সালের ১৩ আগস্ট রাতে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে প্রথম বর্ষের ছাত্র মনিরুল ইসলামকে একই অপবাদে পিটিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও রাতেই হলে ফিরিয়ে আনা হয়। পরে জানা যায়, মনির ছাত্রশিবিরের কেউ নয়, ছাত্রলীগেরই কর্মী। তাঁর পরিবারও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

ওই ঘটনার চার দিন পর হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের পাঁচ শিক্ষার্থীকে শিবির কর্মী সন্দেহে মারধর করে পুলিশে দেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। পরে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হাসান জানান, শিবির-সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

অভিযুক্ত ও বহিষ্কৃতরা ভালো পদ পান
রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীরা গত বছরের জানুয়ারিতে আন্দোলন করেছিলেন। আন্দোলন ‘দমাতে’ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা আন্দোলনকারীদের বেধড়ক পেটান, কয়েকজন ছাত্রীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতও করেন। ঘটনা তদন্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অভিযোগের সত্যতা পায়নি। অথচ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের ছাত্রী লাঞ্ছনার বিষয়টি তখন টেলিভিশনগুলোর ফুটেজে উঠে এসেছিল। ওই হামলায় যাঁরা সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন, তাঁরা পরে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন।

ভর্তি পরীক্ষার সময় ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মারামারির ঘটনায় বরকত হোসেন হাওলাদারকে ২০১২ সালে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তিনি এখন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি।

২০১৭ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি সূর্য সেন হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আরেফিন সিদ্দিকের কক্ষ থেকে চায়নিজ কুড়াল, রামদা, খেলনা পিস্তল, ককটেল তৈরির সামগ্রী এবং ইয়াবা তৈরির প্যাকেট উদ্ধার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে কেউ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। পরে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সহসভাপতিও হয়েছেন তিনি।

একই বছরের ১ জুন রাতে বিজয় একাত্তর হলের এক শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু ইউনূসকে হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। ২১ জুন এক প্রাক্তন শিক্ষার্থীকে আটকে রেখে নির্যাতন, মোবাইল ফোন ছিনতাই এবং চাঁদা দাবি করেছিলেন তিনি। ‘পুরস্কার’ হিসেবে এই নেতা ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে হল সংসদের এজিএস হয়েছেন।

কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণবিষয়ক উপসম্পাদক মেশকাত হোসেন ২০১৪ সালে সূর্য সেন হলের একটি কক্ষ থেকে ল্যাপটপ, মুদ্রা ও জামাকাপড় চুরি করলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। মেশকাতের দাবি, হলে ছাত্রলীগের দলাদলির কারণে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগটি উঠেছিল। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁর বহিষ্কারাদেশ তুলে নেয়।

ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্যানেলের বাইরে থেকে প্রার্থী হওয়ার জের ধরে গত ১ এপ্রিল রাতে এসএম হলে মাস্টার্সের ছাত্র ফরিদ হাসানকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেন হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তাহসান আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান এবং হল সংসদের জিএস জুলিয়াস সিজার। বিচার চেয়ে পরদিন প্রাধ্যক্ষের কাছে স্মারকলিপি দিতে গিয়ে ছাত্রলীগের হাতে লাঞ্ছিত হন ডাকসুর ভিপি নুরুল হক। লাঞ্ছনা ও মারধরের শিকার হন কয়েকজন নারীনেত্রীও।

ঘটনা তদন্ত করে হল প্রশাসন ৭ মে উপাচার্যের কাছে প্রতিবেদন দেয়। এরপর ২৮ মে শৃঙ্খলা বোর্ডের (ডিবি) সভায় প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে সুপারিশ দেওয়ার জন্য চারজন প্রাধ্যক্ষকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। দুই সপ্তাহের মধ্যে সুপারিশ দেওয়ার কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

শৃঙ্খলা বোর্ডের সদস্যসচিব ও প্রক্টর এ কে এম গোলাম রাব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবেদনটি তাঁরা পেয়েছেন। ডিবির পরবর্তী সভায় সেটি উত্থাপন করা হবে।

তবে এরই মধ্যে গত ১৩ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তাহসান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আর মেহেদী মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক হয়েছেন।

জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব পেয়েছি বেশি দিন হয়নি। সত্যতা পাওয়া গেলে ছাত্রলীগ অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। তবু যদি কোনো ত্রুটি থেকে থাকে, ভবিষ্যতে সেগুলো যাতে না হয়, আমরা সেই চেষ্টা করব।’

ছাত্রী হলের পরিস্থিতি অন্য রকম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের ১৩টি আবাসিক হলে আসন বণ্টনের ক্ষেত্রে প্রশাসনের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। কিন্তু ছাত্রীদের পাঁচটি হলে এই চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। এখানে বেশির ভাগ কক্ষের আসন বণ্টন প্রশাসনিকভাবেই হয়ে থাকে। প্রথম বর্ষেই আসন পেয়ে যান অনেক ছাত্রী। স্নাতকোত্তর শেষেই হল ছাড়তে হয় ছাত্রীদের।

অবশ্য তুলনামূলক কম হলেও ছাত্রীদের হলগুলোতে নির্যাতনের ঘটনার নজির আছে। গত বছর কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলে আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্রীদের নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা তখন হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির ওপর চড়াও হয়েছিলেন।

ছাত্রী হলগুলোর অবস্থা তুলনামূলক ভালো হওয়ার পেছনে আসন বণ্টনে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ ও হলের ছাত্রীদের সাহসী ভূমিকার কথা বলছেন হল সংসদের জিএস মনিরা শারমিন। তিনি বলেন, হলের শিক্ষার্থীরা অন্যায়ের প্রতিবাদে সরব থাকলে প্রশাসনও অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার সাহস পায়। ছাত্রদের হলগুলোতে ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণ বেশি থাকায় ছাত্ররা কথা বলার সাহস পান না, প্রশাসনও বিভিন্ন ঘটনায় নীরব থাকে।

প্রয়োজন জবাবদিহি
২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি এফ রহমান হলে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত হয়েছিলেন আবু বকর সিদ্দিক। এক মাস পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঘটনার তদন্ত করে বলেছিল এফ রহমান হলে প্রশাসন বলতে কোনো কিছুর ‘অস্তিত্ব নেই বললেই চলে’। হল প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ও আসন দখলের রাজনীতি বন্ধ করার তাগিদ দিয়েছিল কমিটি। শুধু এফ রহমান হল নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ছাত্র হলেই প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ নেই। আবু বকরের মৃত্যুর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই বিষয়টি উপলব্ধি করেছিল। কিন্তু ৯ বছরেও হলগুলোর অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি।

ছয় দশকের বেশি সময় ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ব্যর্থতাটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। তাদের প্রথম দায়িত্ব পরিবেশ যথার্থ রাখা। শিক্ষার্থীদের নিরাপদ রাখা। তারা কোনো রকম নির্যাতনের শিকার হবে না, সেটা নিশ্চিত করা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পাশাপাশি রাষ্ট্রেরও একই দায়িত্ব। কিন্তু এসবের কিছুই হচ্ছে না। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয় হোক আর রাষ্ট্র হোক, কারও কোনো জবাবদিহি নেই। যাঁরা রাষ্ট্রের দায়িত্বে রয়েছেন, তাঁদেরই একাধিপত্য। অন্যদের কণ্ঠস্বর নেই। এই সমস্যা এখন প্রকট।

প্রবীণ এই অধ্যাপক বলেন, জবাবদিহি নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে। তাঁর মতে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নিশ্চিত করতে পারলে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৮ বছর পর ডাকসু নির্বাচন হলেও সেটি কার্যকর নয়। প্রতিবছর ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিশ্চিত করলে শিক্ষার্থীরা তাঁদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার হতে পারবেন। শিক্ষক সমিতির সমালোচনা করে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে শিক্ষক সমিতিরও ভূমিকা থাকার কথা ছিল। কিন্তু দেখা গেছে, সরকার-সমর্থকেরাই সেখানে থাকায় তারাও কিছু বলে না।

সূত্র: প্রথম আলো

সম্পর্কিত সংবাদ

শিক্ষা সন্ত্রাসের ইতিহাস!
বিশেষ অ্যানালাইসিস

শিক্ষা সন্ত্রাসের ইতিহাস!

ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৩
হিন্দুত্ববাদের কবলে পাঠ্যপুস্তক পর্ব ০২ (৭ম শ্রেণি)
বাংলাদেশ

হিন্দুত্ববাদের কবলে পাঠ্যপুস্তক পর্ব ০২ (৭ম শ্রেণি)

জানুয়ারি ২২, ২০২৩
হিন্দুত্ববাদের কবলে পাঠ্যপুস্তক পর্ব ০১ (ষষ্ঠ শ্রেণি)
বিশেষ অ্যানালাইসিস

হিন্দুত্ববাদের কবলে পাঠ্যপুস্তক পর্ব ০১ (ষষ্ঠ শ্রেণি)

জানুয়ারি ২১, ২০২৩

জনপ্রিয় সংবাদ

  • বসুন্ধরার মালিকের পরিবারে চাঞ্চল্যকর যত খুন

    বসুন্ধরার মালিকের পরিবারে চাঞ্চল্যকর যত খুন

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • মামুনুল হক স্ত্রীসহ লাঞ্ছনার ঘটনা ক্ষমতাসীনদের পূর্ব পরিকল্পিত

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • শাহ আব্দুল হান্নান : একটি নাম একটি ইতিহাস

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে নয় বিরোধিতা করে জেলে গিয়েছিল মোদি

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • আ.লীগ নেতারাই পূজা মন্ডপে কোরআন রেখেছিল

    0 shares
    Share 0 Tweet 0

সাম্প্রতিক সংবাদ

আজ শহীদ শায়খ আহমেদ ইয়াসিনের শাদাতবার্ষিকী

আজ শহীদ শায়খ আহমেদ ইয়াসিনের শাদাতবার্ষিকী

মার্চ ২২, ২০২৩
নতুন কারিকুলামের নামে মাউশি’র তামাশা

নতুন কারিকুলামের নামে মাউশি’র তামাশা

মার্চ ১৪, ২০২৩
এমন জনপ্রিয়তার দৃষ্টান্ত বাংলাদেশে অদ্বিতীয়, বিশ্বে বিরল

এমন জনপ্রিয়তার দৃষ্টান্ত বাংলাদেশে অদ্বিতীয়, বিশ্বে বিরল

ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৩
পিলখানা ট্রাজেডি, অন্তরালের কিছু কথা!

পিলখানা ট্রাজেডি, অন্তরালের কিছু কথা!

ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৩
মিরাজের রাতে কী ঘটেছিল?

মিরাজের রাতে কী ঘটেছিল?

ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৩
  • Privacy Policy

© Analysis BD

No Result
View All Result
  • মূলপাতা
  • বিশেষ অ্যানালাইসিস
  • রাজনীতি
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • মতামত
  • কলাম
  • ব্লগ থেকে

© Analysis BD