অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহর আলেম-ওলামাকে কুকুরের সঙ্গে তুলনা ও ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ পবিত্র হজকে কুকুরের খাদ্য হিসেবে এক কেজি গোস্তের সঙ্গে তুলনা করে দেয়া বক্তব্য নিয়ে সারাদেশে এখনো সমালোচনার ঝড় বইছে। আর দায় এড়ানোর জন্য ধর্মপ্রতিমন্ত্রী জামায়াত-শিবিরের ওপর দোষ চাপিয়ে একটি বিবৃতি দিয়ে বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তার এই দুঃখ প্রকাশকে বাঁচার একটা কৌশল বলেই মনে করছেন সকল শ্রেণি পেশার মানুষ।
এদিকে, ধর্মপ্রতিমন্ত্রীর সমালোচনার পাশাপাশি কওমী আলেমদের নিরব ভুমিকা নিয়েও চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ধর্মপ্রাণ তৌহিদী জনতা। কারণ, ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শুধু আলেমদেরকে কুকুরের সঙ্গে তুলনা করে ক্ষান্ত হননি, তিনি পবিত্র হজকে কুকুরের খাদ্য হিসেবে তুলনা করেছেন। ধর্মপ্রতিমন্ত্রীর এমন গর্হিত বক্তব্যের পরও দেশের কওমী আলেম ও বিপ্লবী হেফাজতে ইসলাম নিরব কেন? এনিয়ে তারা কোনো প্রকার বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছে না কেন? তাদের ইমানী চেতনা কি দুর্বল হয়ে গেছে? নাকি ধর্মমন্ত্রীর নিকট থেকে বড় ধরণের সুবিধা পেয়ে চুপসে গেছে? এসব প্রশ্ন এখন সাধারণ মানুষের মুখে মুখে।
এসব প্রশ্নেন উত্তর খুঁজতে গত তিন দিন ধরে অনুসন্ধান চালায় অ্যানালাইসিস বিডি। অনুসন্ধানে এসব নিয়ে কওমী, আলিয়াসহ মাদরাসার আলেমসহ একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয়। ধর্মপ্রতিমন্ত্রীর এমন গর্হিত বক্তব্যের পরও তারা চুপ কেন এটার দুইটি কারণের খোঁজে পাওয়া যায়।
প্রথমত: গত বছর হজে সরকারি খরচে যারা হজে গিয়েছিল তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়েছেন কওমী মাদরাসার আলেমরা। হজে যাওয়া আলেমদের তালিকায় কওমীর শীর্ষস্থানীয় বেশ কয়েকজন আলেমসহ একাধিক হেফাজত নেতা রয়েছেন। হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফীর ছেলে মাওলানা আনাস মাদানীও এ তালিকায় ছিলেন। অন্যদের মধ্যে ছিলেন, হেফাজত নেতা ও আল হাইয়াতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়্যা’র কো-চেয়ারম্যান মাওলানা আশরাফ আলী, পটিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুল হালিম বোখারী, গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা রুহুল আমীন ও তার ছেলে মাওলানা ওসামা আমিন, ঢাকার গেন্ডারিয়ার মাদ্রাসা বায়তুল উলুমের প্রিন্সিপাল মাওলানা জাফর আহমাদ, চট্টগ্রামের জিরি মাদ্রাসার মাওলানা শাহ মো. তৈয়্যব, হেফাজত নেতা ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার মহাসচিব মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ, মাওলানা সালাহউদ্দীন নানুপুরী, চরমোনাই পিরের ভাই ও চরমোনাই কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মুসাদ্দিক বিল্লাহ মাদানী, পিরোজপুরের শর্ষিনা দারুস সুন্নাত আলিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ শরাফত আলী, হেফাজত নেতা ও আকবর কমপ্লেক্স এর প্রধান মুফতি মাওলানা দিলাওয়ার হুসাইন, শায়াখ জাকারিয়া ইসলামিক রিসার্স সেন্টার কুড়িলের মুহতামিম মুফতি মীযানুর রহমান সাঈদ, বনশ্রীর দারুল উলুম রামপুরা মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা ইয়াহইয়া, মুফতি মোহাম্মদ আলী, জামিয়া কুরআনিয়া লালবাগ মাদ্রাসার মুফতি মুহাম্মদ ইয়াহইয়া, মাওলানা নিয়ামত উল্লাহ ফরিদী, মাওলানা শামছুল হুদা খান, হেফাজত নেতা ও বড় কাটারা মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মুফতি সাইফুল ইসলাম, সিলেটের গওহরপুর মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মোসলেউদ্দীন রাজু, ইকরা বাংলাদেশের প্রিন্সিপাল মাওলানা সদরুদ্দীন মাকনুন, মাওলানা আবদুর রাজ্জাক, মাওলানা ওসমান গনি, পটিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা রেজাউল করীম, মাওলানা আবুল কাশেম ফজলুল হক।
দেখা গেছে, দেশে কেউ ইসলাম, আল্লাহ ও রাসুলকে নিয়ে কটূক্তি করলে তারাই আগে প্রতিবাদ করতেন। বিক্ষোভের ডাক দিতেন। কিন্তু, সরকারি টাকায় হজ করে এসে তারা এখন ধর্মপ্রতিমন্ত্রীর এমন ইসলাম বিরোধী ও গর্হিত বক্তব্যেরও কোনো প্রতিবাদ করছেন না। বিশেষ করে চরমোনাই গোষ্ঠী সব সময়ই প্রতিবাদের ক্ষেত্রে অগ্রগামী ছিল। কিন্তু পীরের ভাই মাওলানা মুসাদ্দিক বিল্লাহ মাদানী সরকারি টাকায় হজ করার কারণে সৈয়দ রেজাউল করিমও চুপসে গেছেন। এছাড়া নিজের ছেলে সরকারি টাকায় হজ করে আসায় হেফাজত আমির আহমদ শফীর ঈমানী চেতনাও দুর্বল হয়ে গেছে।
সরকারের সমালোচক কওমী মাদরাসার একজন শীর্ষ আলেম ও হেফাজত নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকারি হালুয়া-রুটি খেয়ে ওদের ইমানী চেতনা নষ্ট হয়ে গেছে। ওরা এখন বিক্রিত। ওদের দিয়ে এদেশে ইসলামের কোনো উপকার হবে না। তিনি বলেন, ওয়ালী উল্লাহ আরমানরা সারাদিনই ফেসবুকে লাফালাফি করে। ধর্মপ্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে তারা চুপ কেন? ওরা আসলে সরকারের দালাল।
দ্বিতীয়: অনুসন্ধানে কওমী আলেমদের চুপ থাকার আরেকটি কারণ জানা গেছে। ধর্মপ্রতিমন্ত্রী আব্দুল্লাহ তার বিবৃতিতে বলেছেন-আমি স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত-শিবিরকে ইঙ্গিত করে বক্তব্য প্রদান করেছি। হাক্কানী কোনো আলেম ওলামাকে উদ্দেশ্য করে বলিনি।
জানা গেছে, কওমী আলেমরা তার এই বিবৃতিতে পরম শান্তনা পেয়েছেন। মন্ত্রী তাদেরকে কিছু বলেনি। বলেছেন-জামায়াত শিবিরকে। অথচ, সেদিন ধর্মপ্রতিমন্ত্রী তার বক্তব্যে জামায়াত-শিবির নিয়ে একটি টু শব্দও করেন নি। তিনি সরাসরি পবিত্র হজকে কুকুরের খাদ্যের সঙ্গে তুলনা করেছেন। কিন্তু, এসব আলেম প্রতিবাদ তো করেই নাই, বরং উল্টো ধর্মপ্রতিমন্ত্রীর পক্ষে কথা বলছে।