অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সারা দেশের মানুষ যখন পেঁয়াজের দাম নিয়ে ক্ষুব্ধ সামাজিক মাধ্যমেও যখন পেঁয়াজ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার পাশাপাশি রসিকতা চলছে তখন নতুন করে সমালোচনায় এলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নানের দেওয়া একটি বক্তব্য।
সোমবার একটি অনুষ্ঠানে এম এ মান্নান বলেছেন, বর্তমান সরকার দেশের যে উন্নয়ন করেছে সেই উন্নয়নের পুণ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেহেশতে যাওয়ার অধিকার আছে।
মন্ত্রীর বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল সমালোচনা চলছে। শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রীকে গালাগালির পাশাপাশি অনেকে আবার এনিয়ে চরম রসিকতাও করছেন।
অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন-কথিত উন্নয়নের কারণে তিনি বেহেশতে যাওয়ার অধিকার থাকে তাহলে দোজখে যাবে কে?
পেঁয়াজের মূল্য যখন চড়া ঠিক তখন মন্ত্রীর এমন বক্তব্য সাধারণ মানুষকে আরও ক্ষুব্ধ করে দিয়েছে। তারা বলছেন, দেশে এখন চলছে বায়ুবীয় উন্নয়নের প্রচার আর কথিত উন্নয়নের রুপকার শেখ হাসিনা তোষণের জয়গান। একটি প্রচলিত প্রবাদ আছে যে, কাজীর গরু কিতাবে আছে কিন্তু গোয়ালে নেই। বিনাভোটের প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কথিত উন্নয়ন ঠিক কাজীর গরুর মতোই। তার উন্নয়ন শুধু সভা-সমাবেশে বক্তৃতা-বিবৃতি আর সারাদেশে দাঁড় করিয়ে রাখা কথিত উন্নয়ন প্রকল্পের নামফলকেই সীমাবদ্ধ। বর্তমানে যা হচ্ছে সেটা হলো-সারাদেশে কথিত উন্নয়নের নামে শত শত প্রকল্প খুলে রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে শেখ হাসিনা তার দলের নেতাকর্মীদেরকে লুটেপুটে খাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। এখন প্রতিদিন সংবাদপত্রে শুধু প্রশিক্ষণের নামে বিদেশ সফর, কেনাকাটার নামে কোটি কোটি টাকার ভুয়া ভাউচারসহ ক্ষমতাসীনদের লুটপাট-দুর্নীতির খবরই ছাপা হয়।
এরপরও প্রতিদিন কথিত উন্নয়নের ভাঙা রেকর্ড বাজিয়ে যাচ্ছেন তিনি। আর তার দলের নেতাকর্মীরা সার্বক্ষণিক মাদার অব হিউম্যানিটি, ডটার অব পিস, উন্নয়নের রুপকার, বিশ্ব নেতা, বিশ্বের এক নম্বর সৎ প্রধানমন্ত্রীসহ আর বিভিন্ন উপাধিতে ভূষিত করে তাকে তেল মেরে যাচ্ছেন। মজার বিষয় হলো-দুনিয়ার সব উপাধি দেয়ার পর তারা এখন শেখ হাসিনাকে বেহেশতের অধিবাসী বলারও চেষ্টা করছেন। তেলবাজ পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের বক্তৃতা থেকে সেটাই বুঝা যাচ্ছে।
তাদের ভাষ্য হলো-শেখ হাসিনার অপরাধের মাত্রা এতই বেশি যে, আল্লাহর কাছে ক্ষমা পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অনেকেই আবার তার ব্যাখ্যাও তুলে ধরেছেন।
প্রথমত: শেখ হাসিনা একজন খুনী। বিগত ১১ বছরে তার নির্দেশে র্যাব-পুলিশ-বিজিবি ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীরা বিএনপি-জামায়াতের কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। গুম, খুন ও হত্যার শিকার হওয়া লোকদের মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-ছেলে-মেয়েরা যদি হাসিনাকে ক্ষমা না করে তাহলে আল্লাহ কখনো এমন খুনীকে ক্ষমা করবেন না।
দ্বিতীয়ত: শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসেই তার বাবার হত্যার বিচার সম্পন্ন করার পথ পরিষ্কার করতে গিয়ে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর ৫৭ জন অফিসারকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। এসব সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারের লোকজনের আর্তচিৎকারে এখনো বাতাস ভারি হয়ে উঠে। বেহেশতে যাওয়ার আগে তাকে অবশ্যই ওই পরিবারের সঙ্গে দেখা করে যেতে হবে।
তৃতীয়ত: বিগত ১১ বছরে শেখ হাসিনা দেশে ইসলামের প্রচার-প্রসার বন্ধ করতে গিয়ে বহু আলেম-ওলামার ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। শুধু কুরআনের কথা বলার কারণে তাদেরকে গ্রেফতার করে রিমান্ডের নামে তাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে। আর মতিঝিলের শাপলা চত্ত্বরে হত্যা করা হয়েছে অনেক আলেমকে। শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে এত মানুষকে হত্যা করার পরও তিনি বেহেশতে যাবেন?
চতুর্থত: বিগত ১১ বছরে তার বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়সহ তার দলের নেতারা রাষ্ট্রের লাখ লাখ কোটি টাকা লুটপাট করেছে। ব্যাংক ডাকাতি, শেয়ারবাজার ডাকাতি, কথিত উন্নয়নের নামে প্রকল্প খুলে লুটপাট ও গ্যাস-বিদ্যুৎসহ অযৌক্তিকভাবে পণ্যের দাম বাড়িয়ে তারা হাতিয়ে নিয়ে লাখ লাখ কোটি টাকা। সব কিছুই হচ্ছে সরাসরি শেখ হাসিনার নির্দেশে। জনগণের এত টাকা লুটপাটের পরও হাসিনা বেহেশতে যাবে?
আল্লাহর ওয়াদা হলো-বান্দার কোনো হক তিনি মাফ করবেন না। কুরআন-হাদীসের আলোকেই বলা যায়-জাহান্নাম ছাড়া শেখ হাসিনার বেহেশতে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
শেখ হাসিনার জাহান্নামে যাওয়ার আরেকটি কারণ হবে-তিনি মুখে কুরআন-হাদীসের কথা বললেও বাস্তবে চরম ইসলাম বিদ্বেষী। এদেশে যারা কুরআন-হাদীসের কথা বলে, যারা কুরআন-হাদীসের দাওয়ার মানুষের কাছে পৌঁছে দেন, যারা কুরআনের সমাজ প্রতিষ্ঠা করার কাজ করছেন শেখ হাসিনাকে তাদেরকেই এক নম্বর শুত্রু হিসেবে মনে করেন। শেখ মুজিবের মৃত্যুর পর শেখ হাসিনার শাসনামলেই এদেশে আলেম-ওলামারা সবচেয়ে বেশি জেল, জুলুম-নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। শুধু কুরআনের আলোকে এক ফুৎকারে নিভিয়ে দেয়ার জন্যই তিনি মূলত কথিত যুদ্ধাপরাধের বায়ুবীয় অভিযোগ তুলে এদেশের বৃহত্তর ইসলামী সংগঠন জামায়াতের শীর্ষনেতাদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।
বহু মাত্রিক পাপে পরিপূর্ণ শেখ হাসিনা কথিত উন্নয়নের পুণ্যে বেহেশতে যাওয়ার অধিকার আছে বলে মান্নানের বক্তব্য শুধু তেলবাজি হিসেবে দেখছেন সচেতন মহল। তারা বলছেন, নিজেদের মন্ত্রীত্ব টিকিয়ে রাখতে তেলবাজি করে যাচ্ছেন তারা।