অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সম্প্রতি ভারত সরকার আসাম রাজ্যে জাতীয় নাগরিক নিবন্ধনের (এনআরসি) তালিকা প্রকাশ করেছে। সেখানে নাম না থাকায় নির্যাতনের ভয়ে ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে অনেকেই অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। গত দুই সপ্তাহে মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার সময় বিজিবির হাতে আটক হয়েছেন ২১৪ জন।শনিবারও ৩০ জনকে আটক করেছে বিজিবি। এ নিয়ে মোট আটকের সংখ্যা দাঁড়ালো ২৪৪ জনে।
এছাড়া যশোরের বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে গত ২০ নভেম্বর অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের সময় বিজিবির হাতে আটক হয়েছে ৫৪ জন।
কিন্তু, সরকারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এসবকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। শনিবার রাজশাহীতে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ভারত থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করার জন্য সীমান্তে কেউ আসেনি। অনুপ্রবেশ নিয়ে যেসব সংবাদ প্রচার হচ্ছে সবই গুজব।
প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এসবকে গুজব বলে উড়িয়ে দিলেও বিজিবি ও স্থানীয় প্রশাসন বলছে ভিন্ন কথা।
বিজিবি’র কর্মকর্তা লে: কর্ণেল কামরুল আহসান বলেন, আটকদের কাছে কোন দেশের পাসপোর্ট না থাকায় পার্সপোট আইনে এবং অবৈধভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা দিয়ে তাদেরকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পুলিশ আদালতে হাজির করলে তাদের দেশের বিভিন্ন কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেছেন, আটকরা বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার নাগরিক হিসেবে দাবি করলেও কোন তথ্য প্রমাণ দিতে পারেনি। সেজন্য বিজিবি তাদের অনুপ্রবেশকারী হিসেবে দেখছে।
সীমান্ত এলাকার মানুষ বলছেন, বিজিবি যে কয়েকজনকে আটক করেছে, অনুপ্রবেশকারী তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। তারা বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে এদেশে প্রবেশ করেছে। যারা অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে এদের মধ্যে বেশির ভাগই মুসলমান। এরা এনআরসি আতঙ্ক ও স্থানীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশ ছেড়ে চলে আসছেন। তারা আর ভারতে যাবেন না বলে বিজিবির কাছে জানিয়েছেন। সহায়-সম্বল নিয়ে তারা এদেশে চলে এসেছেন। তাদের আটকের পর অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বিজিবি এবং স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের কথা স্বীকার করা হলেও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিষয়টিকে গুজব বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর এনিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অনেকেই বলছেন-মন্ত্রী অনুপ্রবেশের ঘটনাটাকে চাপা দেয়ার চেষ্টা করছেন কেন? সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রেবেশের সময় আটকৃতদের ছবিসহ গণমাধ্যমে সংবাদ আসছে, এসব কি গুজব?
কূটনৈতিকরা বলছেন, ক্ষমতাসীন সরকার দেশে আরও একটি রোহিঙ্গা পরিস্থিতি তৈরী করতে চাচ্ছেন। বিজিবি চাইলে অনুপ্রবেশকারীদের পুশব্যাক করে ফেরত দিতে পারে। কিন্তু তা না করে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশের কাছে পাঠাচ্ছে। পুলিশ তাদেরকে বিভিন্ন কারাগারে পাঠিয়ে দিচ্ছে যাতে তারা আইনের ফাঁক ব্যবহার করে জামিনে মুক্তি পেলে এসব ভারতীয়রা দেশেই থেকে যেতেপারে। আর শাহরিয়ার কবিরের বক্তব্যে দেশকে আরও হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। তারা বলছেন, এখন বিজিবির দ্বায়িত্ব হলো গ্রেফতার না করে তাদেরকে ফেরত পাঠানোর পাশাপাশি সীমান্তে নজরদারি আরও জোরদার করা।