অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামী আমীর নির্বাচনের পর থেকে হঠাৎ করেই বামপন্থি গণমাধ্যম গুলো উঠে পড়ে লেগেছে। জামায়াতের নতুন আমীর ঘোষণার সাত দিন পর প্রথম আলো ‘নতুন আমীর নিয়ে জামায়াতে নানা প্রশ্ন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই প্রতিবেদনে তারা কোন সূ্ত্র ব্যবহার না করে জামায়াতে ইসলামীর অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন তথ্য নিয়ে মিথ্যাচার করে।
প্রতিবেদনে বলা হয় মজলিশে শুরার নারী সদস্যদের ভোটে শফিকুর রহমান আমীর নির্বাচনে এগিয়ে গেছেন। অথচ জামায়াতের প্রধান নির্বাচন কমিশনার জনাব এটিএম মাসুম জানিয়েছেন, নারী বা পুরুষ ভোটারের ক্ষেত্রে আলাদা কোনো ব্যালট থাকে না। নারী ভোটারের ভোট কে বেশি পেল এটা কারো পক্ষেই বোঝার উপায় নেই।
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে, এর আগে আমীর প্যানেল নির্বাচনে নারীরা ভোট দিতে পারতেন না। ডা. শফিকুর রহমানের আগ্রহে এবার নারী শুরা সদস্যরা প্যানেল নির্বাচনে ভোট দেয়ার সুযোগ পেয়েছেন। এখানে কোনো তথ্যসূত্র উল্লেখ করা হয়নি।
এই তথ্যের সত্যতা জানতে চাইলে জামায়াতের উর্ধতন একাধিক নেতা বলেন, জামায়াত একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। এই সংগঠনের গঠনতন্ত্রে নিয়মিত বিরতিতে নারীর ক্ষমতায়নের প্রসঙ্গে সংশোধনী আনা হয়েছে। এটা কারো একার আগ্রহে হয় না বরং সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে হয়।
এছাড়া বর্তমান আমীর মকবুল আহমদ অসুস্থ গুঞ্জন ছড়িয়ে তাকে আমীর পদ থেকে অব্যাহতি নেয়ানো হয়েছে বলে ঐ প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। বার্ধ্যকজনিত কারণে আমীর নির্বাচন থেকে অব্যাহতি চাওয়া এটা জামায়াতে ইসলামীর ক্ষেত্রে নতুন নয়। ২০০০ সালে অধ্যাপক গোলাম আযম একই কারণে সংগঠনের কাছে আমীর নির্বাচন থেকে অব্যাহতি চাইলে শুরা সদস্যরা তা মঞ্জুর করেছিলেন। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে যা প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম মাসুম প্রথম আলোর রিপোর্টের প্রতিবাদে উল্লেখ করেছেন।
আমীর নির্বাচনের ফলাফল নাকি তড়িঘড়ি করে প্রকাশ করা হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনেও দেখা যায় ভোট গ্রহণের রাতে নির্বাচনের ফল প্রকাশ করতে। সেখানে আমীর নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে ১০ নভেম্বর আর ফল ঘোষণা হয়েছে ১২ নভেম্বর। এখানে তড়িঘড়ি করার প্রশ্ন কীভাবে আসে?
এর আগে গত ১৬ই অক্টোবর বাংলাট্রিবিউন ‘জামায়াতের আমির হিসেবে প্যানেলে এগিয়ে ডা. শফিক’ এই শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, জামায়াতে ইসলামীর চতুর্থ নির্বাচিত আমীর হতে এক পা এগিয়ে গেলেন দলটির বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান। কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার ভোটে নির্বাচিত আমীর প্যানেলে তিনজনের মধ্যে শীর্ষে রয়েছেন তিনি। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। সবশেষে আছেন আরেক নায়েবে আমীর অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
এই তথ্যের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জামায়াতের নির্বাচন কমিশনাররা। তারা বলছেন, তিন জন প্যানেল সদস্যের নাম ঘোষণা করা হয় মাত্র। প্যানেল নির্বাচনই সবকিছু নয়। প্যানেলের তিন জনের বাইরে যেকোনো রুকন বা সদস্যকে ভোটাররা ভোট দিতে পারেন। প্যানেলে কে এগিয়ে আছেন বা প্রথম হয়েছেন উল্লেখ করা হয় না। গণমাধ্যম এসব তথ্য নিয়ে মিথ্যাচার করেছে।
জামায়াত নেতারা বলছেন, নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের নেতা-কর্মীদের একটি অংশ বলছে, দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মধ্যে পৃথক তৎপরতা ছিল, নেতা-কর্মীদের অনেকে মনে করেন’ নেতা-কর্মীদের কারও কারও মধ্যে প্রশ্ন আছে এভাবে বেনামে রিপোর্টারের নিজের মন্তব্য প্রকাশ কখনো সাংবাদিকতার নীতি হতে পারে না। এই প্রতিবেদন একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। প্রথম আলোসহ বামপন্থি গণমাধ্যমগুলো জামায়াতে ইসলামকে নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানান জামায়াতের এসব নেতারা।
এ প্রসংঙ্গে জনৈক ব্লগার লিখেছেন, দেশের সবচেয়ে নিয়মতান্ত্রিক ও স্বচ্ছতা সংরক্ষণকারী রাজনৈতিক সংগঠন হওয়ার পরেও জামায়াতে ইসলামী নিয়ে গণমাধ্যমের একটি বাড়তি আগ্রহ দেখা যায়। এবং সে বাড়তি আগ্রহ মূলত জামায়াতকে বিতর্কিত করার জন্য। দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ছিদ্রান্বেষণে তাদের যদি এর সিকিভাগ মনযোগও থাকতো তবে দেশের মানুষকে ক্যাসিনোকাণ্ড দেখতে হতো না। দেশের জনগণের পকেট কেটে কোটি কোটি টাকা লোপাট করে যখন চাটার দল নিজেদের আখের গোছাচ্ছে, সে মূহুর্তে গণমাধ্যম ব্যস্ত জামায়াতের আমীর নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে। এ যেন রোম পুড়ছে তখন নিরো বাঁশি বাজাচ্ছে।
আরও পড়ুন: আমির নির্বাচন নিয়ে প্রথম আলোর মিথ্যাচার, জামায়াতের নিন্দা