অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
গেল মাসে পদ্মা নদী দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে ভারতীয় জেলেদের ছাড়িয়ে নিতে এসে বিজিবি’র গুলিতে নিহত হয়েছিলেন এক ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের এক জওয়ান। এ ঘটনায় দুই দেশের বৈঠকের পর অভিযুক্ত বিজিবি সদস্যকে কোর্ট মার্শালের মুখোমুখি হতে হচ্ছে বলে বিএসএফ ডিআইজি এস এস গুলেরিয়ার বরাতে জানিয়েছে বলে প্রকাশ করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সংবাদ প্রতিদিন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ঘটনার পর বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি‘র ডিআইজি ও সেক্টরের বিজিবি কর্মকর্তাকেও সরিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এছাড়া প্রকৃত বি ষয় অনুসন্ধানে অভ্যন্তরীণ তদন্ত চালাচ্ছে বিএসএফও বলে দাবি করে তারা।
এদিকে ঐ প্রতিবেদন সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পর নজরে আসে রাজশাহী বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল ফেরদৌস জিয়াউদ্দীন মাহমুদের। তিনি বলেন, আমাকে নিয়ে অপপ্রচারে নেমেছে অনলাইন সক্রিয়কারীরা। আমি স্বপদে স্বাভাবিকভাবেই চাকরিতে বহাল আছি। কিন্তু, ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। কোর্ট মার্শল ল’তে তাকে শাস্তি দেয়া হয়েছে। বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে।
গত ১৭ই অক্টোবর, ভারতের সীমান্তরেখা অতিক্রম করে কয়েকজন জেলে বাংলাদেশের সীমানায় প্রবেশ করে। তারা চারঘাটের ভেতরে পদ্মানদীতে প্রবেশ করে ইলিশ মাছ শিকার করতে থাকে। ওই সময় বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী নদীতে মা ইলিশ রক্ষায় ইলিশ শিকারের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালদের অভিযান চলছিলো। মা ইলিশ শিকারের সময় ভ্রাম্যমান আদালত চার জেলেকে আটক করে। এ সময়, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ সদস্যরা এসে তিন জেলেকে ছিনিয়ে নেয়। অপর জেলে প্রণব মণ্ডলকে ছিনিয়ে নেয়ার জন্য বিএসএফ সদস্যরা বিজিবিকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এ সময়, বিজিবি পাল্টা গুলি চালালে বিএসএফ এর সদস্য বিজয় ভান সিং নিহত এবং আহত হন আরেক বিএসএফ সদস্য রাজবীর সিং।
এরপর, রাজশাহী বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্ণেল ফেরদৌস জিয়াউদ্দীন মাহমুদ সংবাদ সম্মেলন করে প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরলে বিভিন্ন মিডিয়ায় তার বক্তব্যের ভিডিও প্রচার এবং ভারাইল হতে থাকে। এরপর, অনেকেই তাকে ‘জাতীয় বীর’ হিসেবে উল্লেখ করতে থাকেন। এর ফলে, অনলাইনে বেশ পরিচিতি পান বিজিবি অধিনায়ক ফেরদৌস জিয়াউদ্দীন মাহমুদ। সেই ভিডিওতে তার একটি বক্তব্য ছিলো ‘আমরা ডেকে নিয়ে এসে কাছে আনার পর গুলি করে তাদের মেরে ফেলবো-একটা বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক অবনতি করবো, এমনটা হতে পারেনা। আমরা তাদের বলেছি, জাতিগতভাবে আমরা মদ্যপ নই এবং আমরা মানসিকভাবেও সবাই সুস্থ। একটা বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক অবনত করার মত কোন ঘটনাও ঘটেনি।’ তার এই বক্তব্যটি দেশের অনলাইন সক্রিয়রা ব্যাপকভাবে ভাইরাল করে।
ফেসবুকের সেই জাতীয় বীরকে নিয়েই এবার নতুন করে অপপ্রচারে নেমেছে ভারতীয় গণমাধ্যম ও ভারতীয়রা। সেই বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল জিয়াউদ্দীন মাহমুদকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে দেশের তরুণ প্রজন্মের মানুষের ফেসবুক জুড়ে প্রচার হচ্ছে। এমন অপপ্রচারে অত্যন্ত বিরক্ত এবং কষ্ট পাচ্ছেন তিনি।
দেখা গেছে, ভারতীয় জোয়ান নিহত হওয়ার পর থেকে ভারতের বহুল প্রচারিত সংবাদ মাধ্যমগুলোতে প্রথম পাতায় স্থান করে নেয় খবরটি। তারা ঘটনা সম্পর্কে ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলোতে বিএসএফ-এর দেয়া ভাষ্যকে প্রাধান্য দেয়া হয়। এছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায়ও বিভিন্ন ভাবে গুজব ছড়ানো শুরু করে ভারতীয়রা।