অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সব অঙ্গরাজ্যের নাগরিকদের মতামতকে উপেক্ষা করেই লোকসভায় চরম বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধী বিল পাস করেছে নরেন্দ্র মোদির সরকার। এ বিলের প্রতিবাদে ভারতের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে বিক্ষোভ, সংঘর্ষ, অবরোধ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। বিল প্রত্যাহার না হলে তাদের এই প্রতিবাদ-বিক্ষোভ বড় ধরণের সহিংসতায় রুপ নিতে পারে।
বাংলাদেশের সীমান্ত লাগোয়া ভারতের অঙ্গরাজ্য আসামের নাগরিক পঞ্জি প্রকাশের পর বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীরা জোরগলায় বলে বেড়াচ্ছে এনআরসি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এটা নিয়ে আমরা কোনো কথা বলবো না। এতে আমাদের কোনো সমস্যা হবে না। ভারত আমাদের ভাল বন্ধু। কোনো লোককে তারা বাংলাদেশে পাঠাবে না।
কিন্তু, কিছুদিন পরই ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ হুঙ্কার ছুড়লেন যে, বাংলাদেশ থেকে আসা সব অবৈধ প্রবেশকারীকে খুঁজে বের করে তাড়িয়ে দেয়া হবে। অনুপ্রেবেশকারী কোনো মুসলমানকে ভারতে থাকতে দেয়া হবে না। তার এই বক্তব্যের পরই ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে মুসলমানদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে নাগরিক পঞ্জিকা প্রকাশ করা আসামের মুসলমানরা চরম উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েছে। মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের মতো ভারত সরকারও তাদের ওপর নির্যাতন চালাতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে কিছু দিন যাবত অনেকে বাড়ি-ঘর ছেড়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে তিন শতাধিকেরও বেশি নারী-পুরুষ ঝিনাইদহ ও চুয়াডা্ঙ্গা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। প্রথমদিকে সরকারের মন্ত্রীরা এটাকে গুজব বলে উড়িয়ে দিলেও পরে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে যে সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে লোকজন অনুপ্রবেশ করছে।
ভয়ে আতঙ্কে কয়েকশ লোক চলে আসার পরও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন বলেছেন-ভারতের সঙ্গে আমাদের মধুর সম্পর্ক। আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু করবে না ভারত। কিন্তু, অমিত শাহরা কেন বার বার বাংলাদেশের নাম উচ্চারণ করছে এনিয়ে শক্তভাবে কোনো কথা বলছে না সরকারের মন্ত্রীরা। তারা আছে উচ্চমাত্রার বন্ধুত্ব নিয়ে।
সর্বশেষ সোমবার রাতে ভারতের লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস করেছে মোদি সরকার। এ বিল পাসের কারণ হিসেবে অমিত শাহ বলেছেন-বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন না থামাই এই বিল। এ বক্তব্যের মাধ্যমে অমিত শাহ একেবারেই বিষয়টি খোলাসা করে জানিয়ে দিল যে, বাংলাদেশের কারণেই তারা এই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস করেছে।
অথচ, ভারত সরকারের এমন বক্তব্যের পরও শেখ হাসিনা সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেছেন-এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সুসর্ম্প অব্যাহত থাকবে। অমিত শাহ’র বক্তব্যের শক্ত কোনো প্রতিবাদ করতে পারছে না সরকার।
অমিত শাহ’র বক্তব্যে বাংলাদেশের মানুষ শুধু ক্ষুব্ধ নয়, চরম উৎকণ্ঠা প্রকাশ করছে। সবার কাছেই বিষয়টি পরিষ্কার যে, মুসলমানদেরকে বাংলাদেশে তাড়িয়ে দিতেই ভারত সরকার নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস করেছে। মোদি সরকার যেকোনো সময় আসামের নাগরিত্বহীন মুসলমানদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে পারে। আর অভিযান চালালেই তারা বাড়ি-ঘর ফেলে বাংলাদেশ সীমান্তে এসে জড়ো হবে। হত্যা-নির্যাতন থেকে বাচতে যেকোনো উপায়ে তারা বাংলাদেশে ঢুকবে।
কিন্তু, এনিয়ে সরকারের মধ্যে কোনো প্রকার উদ্বেগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। সরকার এনিয়ে কোনো প্রতিবাদও করছে না। সরকারের ভাব দেখে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ ভারতের অঙ্গরাজ্য আর শেখ হাসিনা বিজেপির নেত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী।
রাজনীতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এর আগে ভারতের ইন্ধনে রোহিঙ্গাদের প্রবেশ করার অনুমতি দেয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতীয় সরকারের ওপর মানবিকতার দৃষ্টান্ত দেখাতে প্রধানমন্ত্রী আবারও দেশে ভারতীয়দের প্রবেশধিকার দিয়ে একটি রহিঙ্গা পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন। ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস তার নেই। কারণ, ভারতের দয়ায় শেখ হাসিনা ক্ষমতায় টিকে আছে। আর ক্ষমতায় থাকার জন্য ভারতের সহযোগিতার বিকল্প নেই। তাই , ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য প্রযোজনে শেখ হাসিনা সীমান্ত খুলে দেবে কিন্তু ভারতের বিপক্ষে কিছু বলবে না।