অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সম্প্রতি রাজধানীর কুর্মিটোলা এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী ধর্ষণে শিকার হয়েছে। এরপর সারাদেশে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে বিচারের দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে। এই ঘটনায় মজনু নামে এক ব্যাক্তিকে গ্রেফতার করে র্যাব। র্যাবের দাবি ভিক্টিম নিজেই ছবি দেখে শনাক্ত করেছে মজনুই তার ধর্ষক। কিন্ত বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ঐ শিক্ষার্থীর যে ভাষ্য তুলে ধরা হয়েছে তার সাথে গ্রেফতারকৃত ব্যাক্তির কোন মিল নেই।
শিক্ষার্থীর দেওয়া সাক্ষাৎকার অনুযায়ী ধর্ষক সুঠামদেহী ও তার আচরণেও বেশ প্রভাবশালী ভাব ছিলো। কিন্তু গ্রেফতারকৃত মজনুর শরীর পাতলা গড়নের। র্যাব বলছে, মজনু মাদকাসক্ত এবং ছিনতাই, রাহাজানি ও চুরির মতো অপরাধ কর্মকাণ্ডে সে জড়িত। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে মজনুই কি আসল ধর্ষক? নাকি সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থামাতে এই কৌশল?
এদিকে গ্রেফতারকৃত মজনুর ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশের পর ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের মধ্যে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। অনেকেই এটাকে আরেকটি জজ মিয়া নাটক বলে আখ্যা দিচ্ছেন। আবার মজনু নামের এই ছিনতাইকারীকে ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান ও উত্তরা থেকে তাকে কারওয়ান বাজারে নিয়ে আসতে যেসব প্রটোকল ও লাইভ প্রচার করা হয়েছে সেটা ছিল রীতিমত মাছি মারতে কামান দাগানোর মতো বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই।
ঢাবির ধর্ষিতা ছাত্রী ঢাকা মেডিকেলে পুলিশ, শিক্ষক ও মানবাধিকার সংস্থার কাছে ধর্ষকের বর্ণনা দিয়েছেন যে, লোকটি ছিল সুঠামদেহী, শ্যামলা বর্ণের, মাথার চুল ছোট, পরনে জিন্সের প্যান্ট ও গায়ে জেকেট এবং খুব ধাম্ভিক ছিল। মেয়েটিকে সে পেছন থেকে ঘাড় ধরে রাস্তার পাশ থেকে ঝোপের ভেতর নিয়ে তাকে পরনের কাপড় পরিবর্তন করতে বাধ্য করে। বার বার তার নাম জানতে চেয়েছে। মেয়েটি ভয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলেনি।
এখন দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বুধবার যে মজনুকে গণমাধ্যমের সামনে এনে হাজির করলেন তার চেহারা, মাথার চুল, শরীরের কাঠানো, পোশাক কোনো কিছুই মেয়েটির বর্ণনার সঙ্গে মিলেনি। অথচ পুলিশ বলছে সেই ধর্ষক।
সূত্র বলছে, এলাকাটি ছিলো ব্যস্ততম বিমানবন্দর সড়কের ফুটপাত সংলগ্ন ঝোপঝাড়। পুরোপুরি সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত এলাকা। সেনা বাহিনীর সদস্যরা যেখানে গলফ খেলেন সেই গলফ ক্লাবের পেছনের ঝোপে মেয়েটিকে ধর্ষণ করা হয়েছে। নিরাপত্তার ভয়ে কেউ মুখ না খুললেও মেয়ের বর্ণনা শুনে অনেকেই বলছেন সেনা বাহিনীর কোনো সদস্য ছাড়া অন্য কারো পক্ষে এটা করা সম্ভব না।
সচেতন মহল বলছে, মজনু ধর্ষক নয়। ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের আন্দোলন থামাতে ক্ষমতাসীনদের ইমেজ ধরে রাখতে এই গ্রেফতার নাটক করেছে। আবার অনেকেই বলছেন আসল ধর্ষককে আড়াল করতেই সরকার এতদিন সময় ক্ষেপণ করেছে। সেনাবাহিনীর প্রচণ্ড চপের কারণে সরকার কথিত এই মজনুকে গ্রেফতার করে মানুষের সামনে হাজির করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মজনুকে দেখার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারাও বলছে-সরকার পরিকল্পিতভাবে আসল ধর্ষককে আড়াল করে রাখছে। মজনুকে দিয়ে আরেকটি জজ মিয়া নাটক সাজিয়েছে।
এর আগে ২০১৬ সালের ২০ মার্চ রাতে তনুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায়৷ এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। তখন ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় এমন ঘটনার পরেও এখন বিচার করা হয়নি। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে বাংলাদেশি সেনারা অমানবিক বর্বরতা চালাচ্ছে বলে খবরে প্রকাশ হয়। সে সময় শেখ হাসিনা সেনাবহিনীকে ধর্ষক উপাধি দেয়।
সাংবাদিক আবু রুশদ তার লেখা আওয়ামী লীগ ও সসস্ত্র বাহিনী বইয়ের ভুমিকায় লিখেছেন, দলের দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথমবার লন্ডন সফরে গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন তিনি। তখন বিবিসি খ্যাত সাংবাদিক সিরাজুর রহমান ওই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। ২০০২ সালের ১৯ জানুয়ারি দৈনিক ইনকিবালে লেখা ‘ধর্ষণ নিয়ে রাজনীতি বনাম রাজনীতির ধর্ষণ’ শিরোনামের কলামে তিনি উল্লেখ করেছেন যে শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বাংলাদেশি সেনারা অমানবিক বর্বরতা চালাচ্ছে। সিরাজুর রহমান এটার প্রতিবাদ করলে শেখ হাসিনা ধমক দিয়ে তাকে বলেছিলেন-কি রেটে ধর্ষণ চালাচ্ছে দেখে আসুন গিয়ে।