অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সম্প্রতি ঢাবি ছাত্রীর কথিত ধর্ষক গ্রেফতারের পর বিতর্কের রেশ যেন কাটছেই না। কথিত ঐ ধর্ষকের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠে। সাধারণ মানুষের মনে নানা প্রশ্নেরও জন্ম দেয়। অনেকেই এটাকে আরেকটি জজ মিয়া নাটক বলে আখ্যা দেয়। অবশেষে টিভি ক্যামারায় ফাঁস হলো সেই গোমর। নিজেদের পাতা ফাঁদেই আটকা পড়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
বুধবার সন্দেহভাজন ধর্ষককে গ্রেফতারের পর র্যাব দাবি করে, মঙ্গলবার মজনু নরসিংদী ছিলো পরে সে ঢাকায় ফেরে এবং বুধবার সকালে তাকে শেওড়া রেল লাইন থেকে তাকে আটক করা হয়। কিন্তু একাত্তরের টিভি ক্যমরায় দেখা গেছে মঙ্গলবার মজনু ঘটনাস্থলেই (কুর্মিটোলা) ছিলো।
সচেতন মহল বলছেন, জজমিয়া নাটকের মত আরও একটি নাটকের মাধ্যমে নিজেদের মুখোশ দেশবাসীর কাছে উন্মোচন হয়েগেল র্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদের। বিগত কয়েক বছর ধরে তিনি এবং তার বাহিনী এদেশে জঙ্গি নাটক সাজিয়ে শত শত নিরপরাধ মানুষকে গুলি করে হত্যা করেছে। সরকারের মন্ত্রী এমপি বা আওয়ামী লীগের লোকজন যখন দুর্নীতি-লুটপাট, খুন-হত্যা, ধর্ষণের ঘটনা ঘটাতো তখন মানুষের দৃষ্টিকে ভিন্নখানে নিতে কথিত জঙ্গি আস্থানা আবিষ্কার করতেন র্যাবের এই মহাপরিচালক। অভিযানের নামে নিরপরাধ মানুষকে গুলি করে হত্যা করতেন। ঘটনার পরই জানা যেতো-যাদেরকে কথিত জঙ্গি সাজিয়ে হত্যা করা হয়েছে তাদেরকে ৬ মাস বা একবছর আগে বাড়ি থেকে তুলে আনা হয়েছিল। প্রতিটি ঘটনার পরই নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ করা হতো। অবশেষে সেই র্যাব ধরা খেল মানসিক ভারসাম্যহীন মজনুকে ধর্ষক বানাতে গিয়ে।
র্যাবের দাবি, মজনু মেয়েটিকে ধর্ষণ করে পরের দিন নরসিংদী চলে যায়। পরের দিন আবার ঢাকায় আসে। বুধবার সকালে তাকে শেওড়া রেল লাইন থেকে তাকে আটক করে র্যাব সদস্যরা।
এবার আসল ঘটনা দেখা যাক:
মেডিকেলের বেডে ধর্ষিতা ছাত্রীর বর্ণনা শোনার পর থেকেই ধর্ষককে গ্রেফতারে মাঠে নেমে যায় র্যাবও-পুলিশ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ র্যাব-পুলিশের ডিজি ও আইজি বলেছিলেন, তাকে ধরার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। অথচ, একাত্তর টিভির ক্যামেরায় ধরা পড়েছে, গত মঙ্গলবার সকালে যখন আইনৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন ওই জায়গাটি পরিদর্শনে যান তখন ওই পাগলা মজনু ঘটনাস্থলের আশপাশেই ঘুরাফেরা করছিল। র্যাব-পুলিশ যখন ঘটনাস্থলটা দেখছিল তখন মজনু তাদের পাশেই দাড়িয়েছিল। এখন প্রশ্ন হচ্ছে মজনুকে তারা সে সময় আটক না করে পরের দিন শেওড়া রেল লাইন যেতে হয় কেন?
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মজনু ওই এলাকাতেই ছিল। সে অন্য কোথাও যায় না। র্যাব সদস্যরা রাতে ওই এলাকা থেকেই মজনুকে তুলে নিয়ে গেছে। আর ধর্ষণের পর মজনু নরসিংদী চলে গিয়েছিল বলে র্যাব যে দাবি করছে সেটাও অসত্য। মজনু প্রতিদিনই ওই এলাকায় ঘোরাফেরা করে।
এর আগে ‘ধর্ষক গ্রেফতার নাটক, আসল রহস্য কি?’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে অ্যানালাইসিস বিডি। সেখানে প্রশ্ন তোলা হয়শিক্ষার্থীর দেওয়া সাক্ষাৎকার অনুযায়ী ধর্ষক সুঠামদেহী ও তার আচরণেও বেশ প্রভাবশালী ভাব ছিলো। কিন্তু গ্রেফতারকৃত মজনুর শরীর পাতলা গড়নের। র্যাব বলছে, মজনু মাদকাসক্ত এবং ছিনতাই, রাহাজানি ও চুরির মতো অপরাধ কর্মকাণ্ডে সে জড়িত। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে মজনুই কি আসল ধর্ষক? নাকি সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থামাতে এই কৌশল?। সেই প্রতিবেদন প্রকাশের পর অনেকেই নীতিবাচক মন্তব্য করে। অবশেষে একাত্তর টিভির ভিডিওটির মাধ্যমে প্রতিবেদনটির সত্যতা সম্ভব হল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মজনু যদি আসল ধর্ষক হতো তাহলে মঙ্গলবার যখন পুলিশের পাশে সে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছিল তখনই তাকে আটক করা হতো। আর মজনু যদি আসলে ধর্ষণ করতো তাহলে সে কখনো ওই এলাকায় আবার পুলিশের সামনে ঘোরাফেরা করতো না।
এদিকে, সময় যত যাচ্ছে মজনুর ঘটনায় সমালোচনা ততই বাড়ছে। গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীও এনিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন, মজনু যেন জজ মিয়া কাহিনী না হয়। পশ্ন তুলেছেন-ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরও। তিনি বৃহস্পতিবার বলেছেন-আইনশৃ্ঙ্খলা বাহিনীর প্রতি মানুষের এখন আর আস্থা-বিশ্বাস নেই। যার কারণে মজনুকে হাজির করার পর দেশবাসী প্রশ্ন তুলেছে।
এছাড়া, সাদিয়া নাসরিন নামে একজন ফেসবুকে আইনশৃঙ্খলা বাহনিীর ভুমিকা নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেছেন।
তিনি সাধারণ মানুষের কাছে প্রশ্ন তুলে লিখেছেন, প্রথমেই মেয়েটার বয়ান দিয়ে বলা হয়েছিল ধর্ষক একজন ‘দাম্ভিক ব্যক্তি’ও‘সিরিয়াল রেপিস্ট’ এবং সে বার বার মেয়েটার পরিচয় জানতে চাইছিলো। তাকে অজ্ঞান করে জঙ্গলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, উপর্যুপরি ধর্ষণ করা হয়েছে এবং পোষাক পরিবর্তন করতে বাধ্য করা হয়েছে। এখন আপনারাই বলেন, ‘সিরিয়াল রেপিস্ট’ এই তথ্য একজন ভিক্টিম জানার কথা? এই লোকরে দেখে কি মনে হইছে সে দাম্ভিক ব্যাক্তি? যে কিনা পোষাক পাল্টাইতে বাধ্য করতে পারে? অজ্ঞান করার মতো জিনিস পত্র কি মজনু সাথে নিয়েই ঘুরতো ? বারাবার মেয়েটার পরিচয় জানতে চাইছিলো নাকি ধর্ষক। একজন মাদকাসক্ত ধর্ষক কি এতো কথা বলার মতো অবস্থায় থাকে?
তিনি লিখেছেন, সবচাইতে জরুরী বিষয় হলো, যে মেয়ে “উপর্যুপরি ধর্ষণ” এবং মাত্রাতিরিক্ত শারিরীক আঘাত সহ্য করেও জ্ঞান ফেরামাত্র পালিয়ে এসে অটোরিকশা ডাকতে পারে, থানায় যেতে পারে, হাসপাতালে ভর্তি হতে পারে, তার মানসিক এবং শারীরিক সামর্থ্য সম্পর্কে সামান্যতম সম্মান থাকলেও আপনি মানতে বাধ্য হবেন, এরকম একজন তরুণী কে অজ্ঞান করে টেনে জঙ্গলে নিয়ে যাওয়ার মতো শারিরীক সামর্থ্য কোনভাবেই একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তির থাকেনা।
উল্লেখ্য, গত ৫ জানুয়ারি রাজধানীর কুর্মিটোলা এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী ধর্ষণে শিকার হয়। এরপর সারাদেশে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ধর্ষককে গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে। এরপর তড়িঘড়ি করে র্যাব মজনু নামে এক ব্যাক্তিকে গ্রেফতার করে। র্যাবের দাবি করে ভিক্টিম নিজেই ছবি দেখে শনাক্ত করেছে মজনুই তার ধর্ষক। কিন্ত বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ঐ শিক্ষার্থীর যে ভাষ্য তুলে ধরা হয়েছে তার সাথে গ্রেফতারকৃত ব্যাক্তির কোন মিল নেই।
ভিডিওটি দেখুন: