অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
শনিবার অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। দেশের এবং রাজনীতির প্রাণ কেন্দ্র হলো রাজধানী ঢাকা। তাই ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন অন্য যেকোনো নির্বাচনের চেয়ে আলাদা গুরুত্ব বহন করে। কারণ, রাজধানী ঢাকা নিয়ন্ত্রণ মানেই দেশ নিয়ন্ত্রণ। ঢাকা যাদের নিয়ন্ত্রণে বা দখলে থাকে পুরো দেশও তাদের দখলে থাকে। তাই সিটি নির্বাচন মানেই রাজধানী ঢাকাকে নিয়ন্ত্রণে নেয়ার লড়াই। শনিবার সন্ধ্যার পরই চূড়ান্তভাবে জানা যাবে কার দখলে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকা।
তবে, ভোটগ্রহণের দিন এবং ভোটের ফলাফল কী হতে পারে আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্য-বিবৃতি থেকে সেটার পুর্বাভাস এখনই পাওয়া যাচ্ছে। রাজধানী ঢাকা যে আওয়ামী লীগের দখলেই থাকছে সেটা প্রায় নিশ্চিত। রাজনীতির প্রাণ কেন্দ্র ঢাকাকে শেখ হাসিনা কোনোভাবেই বিএনপির দখলে যেতে দেবে না। রাজধানী ঢাকা যদি বিএনপির নিয়ন্ত্রণে চলে যায় তাহলে ক্ষমতায় টিকে থাকা শেখ হাসিনার জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। তাই শেখ হাসিনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত যেকোনো উপায়ে হোক না কেন ঢাকার দুই মেয়র ধরে রাখতে হবে।
আর শেখ হাসিনার এই সিদ্ধান্তের কথা ইতিমধ্যে কিছুটা প্রকাশও পেয়ে গেছে। বুধবার বিকেলে ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ে অনুষ্ঠিত একটি নির্বাচনী সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান ভোটকেন্দ্র দখল ও নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জন্য ছাত্রলীগের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বিএনপি-জামায়াতের লোকদেরকে কেন্দ্রের কাছেই আসতে দেয়া যাবে না।
এরপর, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বৃহস্পতিবার বলেছেন, ভোটকেন্দ্র পাহারার দায়িত্বে থাকবে আওয়ামী লীগ। এখন ওবায়দুল কাদের এবং আব্দুর রহমানের বক্তব্য থেকেই বুঝা যাচ্ছে ভোটের অবস্থা কি হতে যাচ্ছে।
একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকা দক্ষিণে ফজলে নুর তাপস ও উত্তরে আতিকুল ইসলামকে জেতাতে যা যা করা দরকার সব প্রস্তুতিই গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষকলীগের নেতাকর্মীদেরকে সমন্বিতভাবে কাজ করার জন্য কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ভোটকেন্দ্র দখলে নেয়ার জন্য কেন্দ্র ভিত্তিক কমিটি গঠন করা হয়েছে।
জানা গেছে, দুই পদ্ধতিতে তারা ভোটকেন্দ্র দখল ও নৌকায় সিল মারবে। প্রথমত: কেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন থাকবে তবে সেই লাইনে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এবং তাদের ভোটাররাই থাকবে। বিএনপির ভোটার ও সাধারণ মানুষ ভোট দেয়ার বেশি সুযোগ পাবে না। বাইরে পরিবেশ থাকবে শান্ত আর ভেতরে সিল মারা হবে নৌকায়।
দ্বিতীয়ত:কিছু কিছু কেন্দ্র তারা জোরপূর্বকভাবে দখল করে নেবে। আর সেই কাজটি তারা সকাল সকালই করে ফেলবে। কেন্দ্র দখল করলে যে কিছু সমালোচনা হবে সেটা জানে। কিন্তু, কেন্দ্র দখল ছাড়া তাদের সামনে বিকল্প আর কোনো রাস্তা নেই।
এখন একটি বড় প্রশ্ন হলো-নির্বাচনের দিন বিএনপি কি করবে? নির্বাচনের দিন অস্ত্রশস্ত্র নিয়েই মাঠে নামবে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। বিএনপি নেতাকর্মীরা কি তাদের সঙ্গে লড়াই করে মাঠে টিকে থাকতে পারবে? বিএনপি কি পারবে কেন্দ্রদখল ঠেকাতে? ধানের শীষের ভোটারদেরকে কি বিএনপি নেতাকর্মীরা নিরাপদে ভোট দেয়ার সুযোগ করে দিতে পারবে?
রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সচেতন মানুষ মনে করছেন, বিএনপির মেয়রপ্রার্থীরা যদি বিজয়ী হতে চান তাহলে তাদেরকে অবশ্যই ভোটকেন্দ্র দখল ঠেকাতে হতে। যেকোনে পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য তাদেরকে প্রস্তুত থাকতে হবে। আওয়ামী লীগের হাত থেকে কেন্দ্রগুলোকে নিরাপদ রাখতেই পারলেই বিপুল ভোটে বিএনপির দুই মেয়রপ্রার্থী বিজয়ী হবে। অন্যথায়-পরাজয়ের গ্লানি নিয়েই ভোটের দিন তাদেরকে ঘরে ফিরতে হবে।
এদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ক্ষমতাসীনরা বহিরাগতদের ঢাকায় জড়ো করে ত্রাস সৃষ্টি করছে। সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারণার শুরু থেকেই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা হাজারো আচরণবিধি লঙ্ঘন করলেও নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নেয়নি। বরং পুলিশ কর্তৃক বিএনপি নেতাকর্মীদের বেআইনীভাবে গ্রেফতার এবং সর্বশেষ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের উস্কানিমূলক বক্তব্য নির্বাচনী পরিবেশকে ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে নিয়ে গেছে। এতে প্রমাণিত হয় তারা সিটি নির্বাচনকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে করতে চায়। যা আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তারা সরকারের আদেশে কাজ করছে। অন্যদিকে পুলিশও একতরফাভাবে কাজ করছে। তারা প্রতিনিয়ত বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা ও তল্লাশি করছে এবং নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে।
এছাড়া নির্বাচন কমিশন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে। সুতরাং বলব- আওয়ামী লীগ যদি একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে চায়, নির্বাচন এককভাবে করতে চায়, তাহলে নির্বাচন নির্বাচন খেলার দরকার কী বলে প্রশ্ন তুলেন তিনি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ গণবিচ্ছিন্ন দলে পরিণত হয়েছে। তারা ধানের শীষের গণজোয়ার দেখে ভীত হয়ে সিটি নির্বাচনে বাধাগ্রস্ত করতে চায়। কিন্তু ঢাকাবাসীকে বলবো- আসুন বাসযোগ্য ঢাকা গড়তে অন্যায়ের বিরুদ্ধে জবাব দিতে ১ ফেব্রুয়ারি ঘর থেকে বেরিয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদান করুন। অন্ধকার থেকে আলোর পথে যাত্রা শুরু করি।