অ্যনালাইসিস বিডি ডেস্ক
এবার জনগনের তোপের মুখে ২০২০ সালে সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার ঘোষণার পর এস এম রইজ উদ্দিন আহম্মদের নাম প্রত্যাহার করতে বাধ্য হলো ক্ষমতাসীনরা। বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংশোধিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আগামী ২৫ মার্চ বুধবার সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচিতদের হাতে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ ২০২০ প্রদান করবেন। এই পুরস্কার ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তনে প্রদান করার কথা ছিল।
দেখা গেছে, জাতীয় পর্যায়ে গৌরবজ্জল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ৯ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠান ২০২০ সালের জন্য স্বাধীনতা পুরষ্কারের জন্য নির্বাচিত করে চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তা ঘোষণা করে। এরপর রইজ উদ্দিনসহ অন্যন্যদের নিয়ে শুরু হয়ে জনমনে হাস্যরস। এমনকি টাকার বিনিময়ে পদক বিক্রির অভিযোগ ওঠে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। এসব তথ্য প্রমাণসহ প্রতিবেদন প্রকাশ করে অ্যানালাইসিস বিডি। ‘‘ভুয়া’ ব্যক্তিদের স্বাধীনতা পুরস্কার দিয়ে ধরা শেখ হাসিনা!’ শিরোনামে ঐ প্রতিবেদনে বলা হয় রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কারকে দলীয় করণ করতে গিয়ে এবার ধরা খেলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মোটা অংকের টাকার আর দলীয় বিবেচনায় শুধুমাত্র ভূমিদদস্যু আর গডফাদার গোলাম দস্তগীর গাজীকে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেননি সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অখ্যাত আর ভুয়া দুই ব্যক্তিকেও মনোনীত করেছেন।
এরপর পরই বিভিন্ন মহল থেকে সাহিত্যে পুরষ্কার পাওয়া এস এম রইজ উদ্দিন আহম্মদকে নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান ফেইসবুকে লিখেছিলেন, ‘এবার সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার পেলেন রইজউদ্দীন, ইনি কে? চিনি না তো। কালিপদ দাসই বা কে! হায়! স্বাধীনতা পুরস্কার!’ এছাড়া মন্ত্রিপরিষদের প্রকাশিত তালিকায় এস এম রইজ উদ্দিন আহম্মদের নামের আগে ‘মুক্তিযোদ্ধা’ শব্দটি নিয়েও আপত্তি জানান কেউ কেউ।
জানা যায়, স্বাধীনতা পুরষ্কার পাওয়ার জন্য নাম ওঠার পর বাদ যাওয়া বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা রইজ উদ্দিন গত ১৫ জানুয়ারি খুলনা বিভাগীয় উপ-ভূমি সংস্কার কমিশনারের পদে থেকে অবসরে গেছেন।
জীবন বৃত্তান্তের তথ্যানুযায়ী, রইজ উদ্দিনের জন্ম ১৯৬০ সালের ১৫ জানুয়ারি, নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কুমড়ী গ্রামে। গাঙচিল সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রইজ উদ্দিন ২০০৮ সালে সাউথ এশিয়ান কালচারাল সোসাইটির দেয়া ‘আন্তর্জাতিক মাদার তেরেসা স্বর্ণপদক’, ২০১৫ সালে পশ্চিমবঙ্গের একটি মাসিক সাহিত্য পত্রিকা থেকে সম্মাননা, ২০১২ সালে বিশ্ব বাঙালি সম্মাননা, ২০০৯ সালে কথাসাহিত্যিক কাশেম রেজা স্মৃতি গাঙচিল সাহিত্য পদক, ২০১০ সালে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্বাধীনতা পদক, ২০০৭ সালে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমীন স্বর্ণপদক, ২০০৮ সালে শ্রেষ্ঠ ইতিহাস গবেষক হিসেবে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমীন সম্মাননা পেয়েছেন। জীবন বৃত্তান্তে বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতির আজীবন সদস্য এবং বাংলা একাডেমির সদস্য উল্লেখ করেছেন রইজ উদ্দিন।
স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত ৮ ব্যক্তি হলেন- স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের জন্য বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক), মরহুম কমান্ডার (অব.) আবদুর রউফ, মরহুম মুহম্মদ আনোয়ার পাশা ও আজিজুর রহমান; চিকিৎসাবিদ্যায় অধ্যাপক ডা. মো. উবায়দুল কবীর চৌধুরী ও অধ্যাপক ডা. এ কে এম এ মুক্তাদির এবং সংস্কৃতিতে কালীপদ দাস ও ফেরদৌসী মজুমদার। এ ছাড়া শিক্ষায় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের ভারতেশ্বরী হোমস এবার স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়েছে।