অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
প্রাণঘাতী করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা দশ হাজার ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশে একজনের মৃত্যুর পর থেকে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেড়েই চলেছে। পৃথিবীর এই ভয়াবহ পরিস্থিতে ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশে লক ডাউন করে দিয়েছে। শ্রীলঙ্কায় সাংসদীয় নির্বাচন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার নির্বাচন বন্ধ করতে না রাজ। বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির মধ্যেই শনিবার ঢাকা-১০ ( ধানমন্ডি) আসনসহ ৩টি সংসদীয় এলাকায় উপ নির্বাচন করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
এদিকে বাংলাদেশে আরো তিনজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এখন করোনা রেগীর সংখ্যা ২০। এ পর্যন্ত আইসোলেশনে আছেন ৭৭ জন। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৯৩ জন। আর সারাদেশে হোম কোয়রান্টিনে আছেন ১০ হাজার। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৩৫ জন। এতো কিছুর পরেও বর্তমান সরকারের এরকম দায়িত্বহীন আচরন জনমনে ক্ষোভ তৈরী করছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন দেশের এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ?
বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে মহামারি চলছে। যেখানে লোকসমাগম বন্ধ করা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। সৌদিসহ বিভিন্ন দেশে মসজিদে নামাজ বন্ধ করে দিয়েছে আর আমরা নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। নির্বাচন বন্ধ বা স্থগিত করায় কোনো সাংবিধানিক বাধা ছিল না। সরকার চাইলে নির্বাচন বন্ধ করতে পারে। তারা বলছেন, ক্ষমতাসীনরা দেশের কল্যান চায়না। দেশের এই মহামারিতে পর্যপ্ত পদক্ষেপও গ্রহন করছেনা ওপর মহলের নেতারা। এই প্রাণঘাতী ভাইরাস ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়লেও এখনও কয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে ব্যর্থ।
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর নিয়মিত ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেছেন, নির্বাচনের কারণে লোক সমাগম হলে সংক্রমণের আশঙ্কা আছে।
প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সরকারের আইনগত ব্যবস্থা নেয়া উচিত,। কারণ তারা নির্বাচনের নামে করোনা ছাড়ানোর ব্যবস্থা করছে। বাংলাদেশ করোনা তৃতীয় সপ্তাহে প্রবেশ করছে। এই সময়টি খুবই জটিল। এখন অতি প্রয়োজন না হলে সবাইকে ঘরে থাকতে হবে। দেশের মানুষ আতঙ্কের মধ্যে আছে। এই সময়ে নির্বাচন করা নির্বাচন কমিশনের সবচেয়ে বড় নির্বুদ্ধিতা। এটা ক্ষতিকর নির্বুদ্ধিতা বলেই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছি।”
এটা করোনা ড়ানোর উদ্যোগ বলে মানে করেন ডা. লেলিন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘ইভিএমে ভোট হবে৷ সেখানে যারা ভোট দেবেন, তাদের সবাইকে একই মেশিনে থাম্ব প্রেস করতে হবে। আবার নির্বাচনি কর্মকর্তারা থাকবেন। আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে লোকজন থাকবে। তাই করোনা ছড়ানোর ব্যাপক আশঙ্কা আছে। এটা আমার মতে ভোট নয়, করোনা ছড়ানোর উদ্যোগ।”
ঢাকার ধানমন্ডি এলাকার ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই পরিস্থিতিতে তারা অনেকেই ভোট দিতে যাবেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নির্বাচনি কর্মকর্তাও ভোটের দায়িত্ব পালনে অনীহা প্রকাশ করেছেন৷ তবে তারা জানান, চাকরি করেন বলে দায়িত্ব পালন করতেই হবে৷ এদিকে আগামী ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের ব্যাপারেও এখনো অনড় রয়েছে নির্বাচন কমিশন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারের কঠর সমালোচনা করছেন অনেকেই। এই মহামারিতে নির্বাচন বন্ধ না করা ক্ষমতাসীনদের কৌশল হিসেবে দেখছেন এসব সমালোচকরা। তারা বলছেন, নির্বাচনে এমনিই মানুষ ভোট দিতে বের হয়না। এই সময় নির্বাচন দিয়ে সরকার ভোট কেন্দ্রে মানুষ না যাওয়ার বড় একটি অযুহাত দিতে পারবেন। এছাড়া কেউ হাস্যরস করে বলছেন, নির্বাচনতো রাতেই হয়ে যাবে। এজন্য করোনা আতঙ্কের সম্ভাবনা নেই।