• যোগাযোগ
শুক্রবার, মার্চ ২৪, ২০২৩
Analysis BD
  • মূলপাতা
  • বিশেষ অ্যানালাইসিস
  • রাজনীতি
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • মতামত
  • কলাম
  • ব্লগ থেকে
No Result
View All Result
  • মূলপাতা
  • বিশেষ অ্যানালাইসিস
  • রাজনীতি
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • মতামত
  • কলাম
  • ব্লগ থেকে
No Result
View All Result
Analysis BD
No Result
View All Result
Home Home Post

উড়ে উড়ে সেন্ট মার্টিন

এপ্রিল ৯, ২০২০
in Home Post, slide, ব্লগ থেকে
Share on FacebookShare on Twitter

শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া

২১ ডিসেম্বর, শনিবার। কুয়াশাঢাকা দিন। ঢাকা অবশ্য ধূসর এই চাদরে দুদিন ধরেই ঢাকা। একটি বারের জন্যও উঁকি দেয়নি সূর্য। তাই মনটা দুরুদুরু, যাচ্ছি তো সাগরপাড়ের দ্বীপে, মোটে দুটো দিন থাকব, এমন কুয়াশা থাকলে বেড়াতে যাওয়া পুরোটাই মাটি!

দ্বীপ মানে আমাদের অতি আদরের প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিন। বছরের শেষ দিকে ঢাকার বাইরে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার ইচ্ছেটা ছিল বটে, তবে সেন্ট মার্টিনকে বেছে নেওয়া হুট করেই।

সে অনুযায়ী টেকনাফ যাওয়ার বাসের আগাম টিকিটও করা হয়েছে। টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার জাহাজের টিকিট নিশ্চিত করেছে অনুজপ্রতিম গিয়াসউদ্দিন। দ্বীপের একটি সি-ভিউ হোটেলের কামরা দুদিনের জন্য বুকড। তাই কুয়াশা নিয়ে ধোঁয়াশায় থাকার মানে নেই।

ঘড়ি ধরে ঠিক সাড়ে আটটায় বাস ছাড়াল। ছাড়ার আগে বাস কোম্পানির মুরব্বি গোছের এক কর্তা চালককে জটিল এক নির্দেশ দিলেন, ‘বুঝেশুনে বাস চালাবেন। যাত্রীর জানমাল আগে। তবে মাথায় রাখবেন, টেকনাফে পৌঁছাতে হবে সকাল সাড়ে সাতটার মধ্যে।’

যাত্রালগ্নটা বেশ রোমাঞ্চকর। কিছুটা পুলক, কিছুটা শিহরণ। সাগরের মধ্যে একটা টান আছে। সেটা সত্যিকারেই অতল জলের আহ্বান। আধো অন্ধকার রাতে বালুকাবেলায় দাঁড়িয়ে এর আগে সাগরের ঢেউভাঙা গর্জন শুনেছি। এর মধ্যে অপার্থিব এক ছন্দ আছে, যা মনকে উদাস করে দেয়।

ছোটবেলায় জুলভার্নের ‘মিস্টেরিয়াস আইল্যান্ড’, রবার্ট লুই স্টিভেনসনের ‘ট্রেজার আইল্যান্ড’ পড়েছি। পড়েছি অজানা নির্জন দ্বীপের পটভূমিতে আরও কিছু রোমাঞ্চকর বই। তখন থেকেই মনের ভেতর ‘দ্বীপ’ শব্দটা নস্টালজিক দীপ হয়ে জ্বলছে। এই দীপে দীপ্যমান হওয়ার সুযোগ পেয়ে মনটা তাই উড়ুউড়ু। ভাবলাম, সুন্দর ভাবনায় ডুবতে ডুবতে স্বপ্নালু একটা ঘুম হবে। সকালে উঠেই দেখব একটানে টেকনাফ। কিন্তু উড়ুক্কু বাস উড়ুউড়ু মনটাকে খামচে ধরল।

পর্দা সরিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি, শাঁ শাঁ করে ছুটে চলেছে বাস। মোবাইল ফোনে গুগলের রোডম্যাপ অ্যাপ চালু করে দেখি, গাড়ির গতি ঘণ্টায় ১০৫ কিলোমিটার। যেন চাকায় ভর করে নয়, ডানা মেলে উড়ে যাচ্ছে গাড়ি। রবি ঠাকুর বুঝি এমন এক যাত্রার জন্যই ‘যাত্রী আমি ওরে’ কবিতাটা লিখেছিলেন। কবিতার প্রথম দুটি লাইনের মতোই মনে হলো ‘যাত্রী আমি ওরে/ পারবে না কেউ রাখতে আমায় ধরে…’

টান টান উত্তেজনায় সাড়ে ১০ ঘণ্টা সময় কীভাবে কেটে গেল, টের পেলাম না। যেন এক স্বপ্নযাত্রায় উড়ে এলাম টেকনাফ। ধলপ্রহরে বাস থেকে নেমে বুঝলাম, টেকনাফে শীত কম না। এখানেও গাঢ় কুয়াশা। ধূসর আলো।

শিগগিরই দেখা মিলল টেকনাফের ছোট ভাই গিয়াসউদ্দিনের। আমাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে গেল সেন্ট মার্টিন যাওয়ার জাহাজ কেয়ারি ক্রুজ অ্যান্ড ডাইনে। দোতলায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বিশাল কেবিন। ভেতরটা চাইনিজ রেস্তোরাঁর আদলে সাজানো। খেতে খেতে সেন্ট মার্টিন যাও।

সাড়ে নয়টার দিকে জাহাজ ছাড়ল। নাফ নদী দিয়ে বঙ্গোপসাগরের দিকে যাচ্ছে জাহাজ। একদিকে বাংলাদেশ, আরেক দিকে মিয়ানমার। মাঝখানে জাহাজে করে যাচ্ছি আমরা। দারুণ এক অনুভূতি!

খানিক পরই কুয়াশার জাল সরিয়ে উঁকি দিল চনমনে রোদ। খুশিতে নেচে উঠল মন। গাঙচিলের ঝাঁক অন্য রকম আনন্দ এনে দিল। জাহাজের সঙ্গে নেচে নেচে উড়ে আসছে ওরা। যেন আমরা ওদের অতিথি। আমাদের এসকর্ট করে নিয়ে যাচ্ছে।

অনেক দূর পর্যন্ত গাঙচিলগুলো আমাদের এগিয়ে দিয়ে গেল। তারপর সাগরের মৃদু ঢেউয়ে দুলতে দুলতে চলতে লাগল জাহাজ। দূরে ঢাউস নৌযানে টহল দিচ্ছে কোস্টগার্ড। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ছোট ছোট সাম্পান। ভয়ানক দুলুনি উপেক্ষা করে হৃষ্টচিত্তে মাছ ধরছেন জেলে ভাইয়েরা।

ঘণ্টা দুয়েক পর ধোঁয়াটে নীলচে কিছু চোখে পড়ল। ওটাই সেন্টমার্টিন। আরও মিনিট বিশেক পর অথই জলে বুক চিতিয়ে থাকা প্রবাল দ্বীপে পা পড়ল। সে অদ্ভুত এক শিহরণ!

সেন্ট মার্টিনে এখন পর্যটন মৌসুম। চারদিকে গিজগিজ করছে পর্যটক। চলো চলো সেন্ট মার্টিন—এমন একটা ঢল। ঘাট থেকে রাস্তার দুই পাশে বেশ কিছু রেস্তোরাঁ। সব কটাতেই বুভুক্ষের দল হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। প্রতিটি রেস্তোরাঁর সামনে থালায় রয়েছে রকমারি সামুদ্রিক মাছ, মসলায় মেরিনেট করা। ফরমাশ দিলেই মুচমুচে ভাজা মাছ হাজির হবে। ভাজা মাছের সুবাসে জিবে জল এসে গেল। তবে মুখে কিছু দেওয়ার আগে রিসোর্টে গিয়ে ব্যাগগুলো রাখতে হবে। হাতমুখ ধোয়ার ব্যাপার আছে।

১২-১৩ বছরের দুই বালক আমাদের ভারী ব্যাগ দুটো বয়ে নিচ্ছে। ভারী বোঝায় পিঠ বাঁকা হয়ে গেছে, তবু একগুঁয়ে ওরা। ব্যাগগুলো বইবেই। পর্যটন মৌসুমে এসব ছানাপোনার আয়-রোজগার মন্দ না। রিশাদ নামের এক কিশোরের সঙ্গে কথা বলে জানলাম, এ সময় ওরা দিনে চার থেকে পাঁচ শ টাকা পায়। ওর বাড়ি টেকনাফে। জাহাজে বিনা ভাড়ায় চলে আসে। বিনা ভাড়ায় ফেরে।

রিশাদ জানাল, বাবা নেই। বড় ভাই কক্সবাজারে এক গ্যারেজে কাজ করে। তার আয়ে চলে না। তাই সংসারে ঠেকা দিচ্ছে। পুলিশ যাতে রোহিঙ্গা বলে সন্দেহ করতে না পারে, এ জন্য জনপ্রতিনিধির স্বাক্ষরসহ একটা কার্ড করে নিয়েছে।

জাহাজ ঘাটের খুব কাছেই আমাদের রিসোর্ট সিফাইন্ড। সঙ্গে ভালো একটা রেস্তোরাঁও আছে। সামনে বিস্তৃত বালুকাবেলার পরই নীল সাগর। অপূর্ব! সিফাইন্ডের অন্যতম অংশীদার রহিম ভাই আমাদের অভ্যর্থনা জানালেন। ১৮ ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট এই ভাইটির মধ্যে আয়েশী একটা ভাব আছে। খুবই সজ্জন। আতিথেয়তায় কমতি নেই।

রুমটা ঝকঝকে-তকতকে। লাগোয়া প্রথম শ্রেণির স্নানঘর। টিভি, ওয়াইফাই, গরম পানি আছে। আর কী চাই? গোছগাছ সেরে, পোশাক পাল্টে বেরিয়ে পড়লাম সপরিবারে। কোথায় যাব, কোথায় ঘুরব টগবগে উত্তেজনা। কিন্তু পেটে তো ছুঁচোর কেত্তন। অগত্যা এক রেস্তোরাঁয় ঢুকতেই হলো। সামনে মসলা মাখানো রকমারি মাছের ডিসপ্লে। হাত খানেক লম্বা একটা স্যামন মাছ বেছে নিলাম। সঙ্গে চারটা রূপচাঁদা। উফ, টাটকা সে মাছগুলোর যে স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে!

এখানে রেস্তোরাঁ রয়েছে প্রচুর। যে কয়টা রেস্তোরাঁয় খেয়েছি, কোনোটির খাবারই মন্দ নয়। এরা এক ধরনের পাতলা পরোটা বানায়। ভাজি বা ঝোলে সুস্বাদু। সবজি-ডাল এসবও ভালো। চিনিগুঁড়া চালের ভাত করে। ব্যঞ্জনে সামুদ্রিক মাছের প্রাধান্য। কোরালের ঝোল, টুনার ঝুরি ভর্তা, রূপচাঁদা, ফ্লাইং ফিশ আর স্যামন ভাজা অতুলনীয়। সঙ্গে কয়েক ধরনের চিংড়ি পাওয়া যায়। এর মধ্যে বিশাল আকারের লবস্টার বা গলদা চিংড়ি দেখতে যেমন সুন্দর, ভাজি-ভুনায় খেতেও অনেক মজা। শুঁটকি করে ওরা আগে থেকে ফরমাশ দিলে। গরু-খাসি এখানে মেলে না বললেই চলে। মুরগিও খুব কম। অবশ্য এই দ্বীপের পরিবেশের সঙ্গে মুরগি-টুরগি মানায়ও না। তা ছাড়া এখানে এসে সাগরের তাজা মাছের উপাদেয় স্বাদ হাতছাড়া করা বোকামি।

খাওয়ার পর দ্বীপ ঘুরে দেখার জন্য একটা ভ্যান ভাড়া করলাম। এখানে রিকশা পাওয়া যায় না। মূল বাহন এক ধরনের ভ্যান, যা রিকশারই রূপান্তর। পেছন দিকে খোলা রেখে চেপেচুপে কয়েকজন বসার মতো তিনটা আসন পাতা।

ভ্যানচালক অল্প বয়সী তরুণ। বয়স ১৮ কি ১৯। মেদহীন বেতস লতার মতো শরীর। সেন্ট মার্টিনে হরহামেশাই এমন গড়নের তরুণ-যুবার দেখা মেলে। চেহারা-সুরতও যেন এক। সবাই প্রচণ্ড পরিশ্রমী। তাই শরীরে এক রত্তি মেদ নেই।

তরুণ নারকেল বাগান, কেয়াবন, মেইন বিচ, সমুদ্র বিলাস, কটন গার্ডেন এমন অনেক জায়গার নাম বলে গেল। এসব জায়গা ঘুরে দেখাবে। একনাগাড়ে এত নাম শুনে মনে হলো না জানি কত জায়গা। তখনো মাথায় খেলেনি যে দ্বীপটা আসলে খুবই ছোট। তাই ভাড়া নিয়ে তেমন বাড়াবাড়ি হলো না।

যেতে যেতে তরুণের সঙ্গে অনেক কথা হলো। তাঁর মূল পেশা মাছধরা। বছরের বেশির ভাগ সময় সাগরে অন্যদের সঙ্গে মাছ ধরে। পর্যটন মৌসুমে ভ্যান চালায়। পাঁচ–ছয় মাসে আয়টা মন্দ হয় না। সে জানাল, এখানকার বেশির ভাগ মানুষের মূল পেশা মাছ ধরা। পর্যটন মৌসুমে সাময়িক পেশা বদলে অনেকে দু-পয়সা কামিয়ে নেয়। তার ভাষায়, ‘মানুষ ইয়ানো উড়ি উড়ি আইয়ে, উড়ি উড়ি যার গই। আঁরার দুগগা হুইসাও আইয়ে।’

নারকেলবাগান, কেয়াবন, প্রবাল পাথর ছড়ানো মনোরম সৈকত সবই দেখি এক জায়গায়। তরুণকে বসিয়ে রেখে বালি মাড়িয়ে এগিয়ে গেলাম সৈকতের দিকে। শীতের সূর্য এরই মধ্যে মধ্যগগন পার হয়েছে। মিঠে রোদের বিকেলে প্রবাল পাথরে ঠাসা সৈকতটাকে দারুণ লাগছে।

ধুলো নেই, ধোঁয়া নেই, হইচই বা যান্ত্রিক শব্দ নেই, গাড়ির বা কারখানার দূষণ নেই, নোনা জলো হাওয়ায় জীবনের তাজা ঘ্রাণ। বুক ভরে বাতাস টানলে বাঁচার প্রত্যাশা বাড়ে। দূর থেকে প্রবাল পাথর দেখতে যত সুন্দর, কাছে গিয়ে দেখি এ বড় সহজ জিনিস নয়। অসংখ্য খাঁজে ভরা। ছোট ছোট শামুক-ঝিনুক আর শেলে ঠাসা। পাথরগুলোর গোটা শরীরই কর্কশ আর ধারালো। পাথরে বসে নানা ভঙ্গিমায় ছবি তোলা যায় বটে, তবে তা আরামপ্রদ নয়। সাগরের পানি দারুণ স্বচ্ছ। নানা রঙের শৈবাল ভাসছে। আছে ছোট ছোট জীব। স্বচ্ছ জেলি ফিশ পেলাম। পানির নিচেও আছে অনেক প্রবাল পাথর। সেগুলো মাড়িয়ে সাগরে নামা বড় সহজ ব্যাপার না। টাল সামলাতে হিমশিম খেতে হলো। ঘুরতে আসা কৌতূহলী পর্যটকেরা এতেই অনেক আনন্দ খুঁজে পাচ্ছেন।

পাথরের সীমান ছাড়িয়ে চলে এলাম বিস্তৃত বালুকাবেলায়। বালুর মধ্যে খুদে কণার মতো কী যেন নড়ছে। ভালোভাবে খেয়াল করে দেখি, অসংখ্য মিহি গর্ত থেকে ছুটে বেরোচ্ছে এক্কেবারে পিচ্চি কাঁকড়ার পোনা। দারুণ দৃশ্য!

বড় একটা মাছ ধরার নৌকা এসে ভিড়ল তীরে। বিশাল এক ঝুড়ি মাছ নামানো হলো। টুনা, স্যামনসহ নানা রকম মাছ। কয়েকজন মিলে ধরাধরি করে ঝুড়িটা নিয়ে ছুটছে। নৌকা থেকে নামা একজন নরম বালিতে নোঙর পোঁতায় ব্যস্ত। আলাপ হলো তাঁর সঙ্গে। নাম আবদুল্লাহ। জানালেন, এই দ্বীপ একসময় অনেক বড় ছিল। আয়তন ক্রমে কমছে। জোয়ারের পানি চুপিসারে মাটি খেয়ে দিচ্ছে।

দ্বীপটি টেকনাফের একটি ইউনিয়ন। বর্তমান চেয়ারম্যান নূর আহমেদ জানালেন, আগে দ্বীপের আয়তন ছিল ৯ বর্গকিলোমিটার। ক্ষয়ে যেতে যেতে আয়তন এখন সাড়ে সাত বর্গকিলোমিটারে এসে ঠেকেছে। দ্বীপের বাসিন্দা প্রায় ১০ হাজার। পর্যটন মৌসুমে প্রতিদিন পাঁচ থেকে আট হাজার মানুষ এই দ্বীপে যাতায়াত করে।

সন্ধ্যার একটু আগ দিয়ে চলে এলাম মেইন বিচে। এখানেই জনপ্রিয় কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের বহুল আলোচিত বাড়ি ‘সমুদ্র বিলাস’। বাড়ির সামনে পর্যটকের ভিড়। কাঠের ফটক ভেতর থেকে তালা দেওয়া। তাই বলে দমবার পাত্র নন হুমায়ূনভক্তরা। সমুদ্র বিলাসের নাম ফলকের সামনে দাঁড়িয়ে মহাউৎসাহে ছবি তুলছেন তাঁরা।

সমুদ্র বিলাসের সামনে অনেকখানি জায়গাজুড়ে নানা জিনিসের পসরা। এর মধ্যে রয়েছে শুঁটকির বেশ কিছু দোকান। সীমান্ত পার হয়ে আসা মিয়ানমারের নানা জিনিসের পসরা নিয়ে বসেছে কিছু দোকান। আর রয়েছে ফ্রাই ও বারবি কিউয়ের জন্য রাখা কাঁচা মাছ।

সমুদ্র্র বিলাসের ঠিক সামনেই রয়েছে রফিক মিয়ার মাছের দোকান। নয় বছর ধরে এই ব্যবসা তাঁর। আয়তাকার টেবিলে সাজানো রয়েছে অনেক ছোট-বড় মাছ। গড়গড়িয়ে নাম বলে গেলেন তিনি—টুনা, স্যামন, ফ্লাইং ফিশ, কই কোরাল, সাদা কোরাল, লাল কোরাল, সুন্দরী, রূপচাঁদা, টেক চাঁদা, সোনালি চাঁদা, কালো চাঁদা, কাঁকড়া, স্কুইড, লবস্টার।

রফিক বললেন, ‘জিন্দা লবস্টার চাইলে, সেইটাও আছে।’
এই বলে একটা ঝুড়ি থেকে বের করলেন ইয়া সাইজের দুটি লবস্টার। সেগুলো ছটাৎ ছটাৎ লেজ বাঁকা করতে লাগলে। রফিক বললেন, এই লেজের ডগা ব্লেডের মতো ধারলো। কোনো মতে আঙুলে বসিয়ে দিলে কম্ম কাবার। তাই কায়দা করে ধরতে হয়। বড়টা ৭০০ গ্রামের মতো। ছোটটা ৬৫০ গ্রাম হবে। দুটোর দাম হাঁকলেন দু হাজার টাকা। দামাদামির পর অবশ্য কমেই দিলেন।

সেগুলো বারবি কিউয়ের জন্য রেখে আমরা আবার ঘুরতে বেরোলাম। সৈকতে একসঙ্গে অনেক মানুষ দাঁড়িয়ে মায়াবী সূর্যাস্ত দেখলাম। সূর্যটা যেন কী এক অভিমানে অনেক দ্রুত পাটে গেল। দেখতে দেখতে নেই।

সন্ধ্যার পর মেইন বিচে উৎসবের মতো এক পরিবেশ। মাছের দোকানগুলোতে চলছে ফ্রাই আর বারবি কিউয়ের ধুম। দশ-বারো কেজি বা এরও বেশি ওজনের আস্ত একেকটা মাছ কাঠ কয়লার আগুনে ঝলসানো হচ্ছে লোহার ঝাঁজরিতে।

রফিক জানালেন, ছয়-সাত বছর ধরে সেন্ট মার্টিনে এই বারবি কিউ বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর এই উৎসব জমে ওঠে। অনেক রাত অবধি চলে। অক্টোবর থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত পর্যটকের আনাগোনা থাকে। এ সময় রফিক এবং দ্বীপের আরও কিছু মানুষ এ পেশায় ব্যস্ত থাকেন।

রফিক প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার মাছ কেনেন বলে জানালেন। একদিনে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করেছেন। ১৫–২০ কেজি ওজনের একটা মাছ তাঁর দোকানে বারবি কিউ করা কোনো ব্যাপার না। তবে পর্যটন মৌসুমের পর দোকান গোটাতে হয়। তখন অন্য পেশা বেছে নিতে হয়। রফিক অবশ্য বসে বসেই খান বলে জানালেন।

আগেই বলেছি, সাগরের মধ্যে একটা টান আছে। রাত গড়িয়ে চলেছে। তবু তীর থেকে নীড়ে ফেরার নাম নেই আমাদের। আমরা কেন, অন্ধকার সাগর তীরে অনেক মানুষ নীরবে বসে আছে বিচ চেয়ারে। মগ্ন হয়ে দেখছে আঁধারে সাগরের রূপ, শুনছে সাগরের ঢেউভাঙা গান।

সাগরের ছন্দময় গর্জনকে পেছনে রেখে আমরা গোল হয়ে বসেছি রফিকের দোকানের সামনে। চারপাশে আরও কয়েকটি ছোট–বড় দল। একটি দল গলা ছেড়ে কোরাশ গাইছে। অন্যরা কলহাস্যে মগ্ন। রফিকের ঝাঁজরিতে গনগনে কয়লায় ঝলসানো হচ্ছে লবস্টার। খাবারটা কখন আসবে জানি না। তবে তাড়াহুড়ো নেই। এখানে রাত কাবার হলেই বা ক্ষতি কী?

লেখক: সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক

সম্পর্কিত সংবাদ

এমন জনপ্রিয়তার দৃষ্টান্ত বাংলাদেশে অদ্বিতীয়, বিশ্বে বিরল
slide

এমন জনপ্রিয়তার দৃষ্টান্ত বাংলাদেশে অদ্বিতীয়, বিশ্বে বিরল

ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৩
পিলখানা ট্রাজেডি, অন্তরালের কিছু কথা!
ব্লগ থেকে

পিলখানা ট্রাজেডি, অন্তরালের কিছু কথা!

ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৩
ওয়ালি-মুকাদ্দাস গুমের আদ্যপান্ত
slide

ওয়ালি-মুকাদ্দাস গুমের আদ্যপান্ত

ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৩

জনপ্রিয় সংবাদ

  • বসুন্ধরার মালিকের পরিবারে চাঞ্চল্যকর যত খুন

    বসুন্ধরার মালিকের পরিবারে চাঞ্চল্যকর যত খুন

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • মামুনুল হক স্ত্রীসহ লাঞ্ছনার ঘটনা ক্ষমতাসীনদের পূর্ব পরিকল্পিত

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • শাহ আব্দুল হান্নান : একটি নাম একটি ইতিহাস

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে নয় বিরোধিতা করে জেলে গিয়েছিল মোদি

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • আ.লীগ নেতারাই পূজা মন্ডপে কোরআন রেখেছিল

    0 shares
    Share 0 Tweet 0

সাম্প্রতিক সংবাদ

আজ শহীদ শায়খ আহমেদ ইয়াসিনের শাদাতবার্ষিকী

আজ শহীদ শায়খ আহমেদ ইয়াসিনের শাদাতবার্ষিকী

মার্চ ২২, ২০২৩
নতুন কারিকুলামের নামে মাউশি’র তামাশা

নতুন কারিকুলামের নামে মাউশি’র তামাশা

মার্চ ১৪, ২০২৩
এমন জনপ্রিয়তার দৃষ্টান্ত বাংলাদেশে অদ্বিতীয়, বিশ্বে বিরল

এমন জনপ্রিয়তার দৃষ্টান্ত বাংলাদেশে অদ্বিতীয়, বিশ্বে বিরল

ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৩
পিলখানা ট্রাজেডি, অন্তরালের কিছু কথা!

পিলখানা ট্রাজেডি, অন্তরালের কিছু কথা!

ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৩
মিরাজের রাতে কী ঘটেছিল?

মিরাজের রাতে কী ঘটেছিল?

ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৩
  • Privacy Policy

© Analysis BD

No Result
View All Result
  • মূলপাতা
  • বিশেষ অ্যানালাইসিস
  • রাজনীতি
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • মতামত
  • কলাম
  • ব্লগ থেকে

© Analysis BD