অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের করুণায় কক্ষমতা দখল করার পর থেকেই রাষ্ট্রীয় কোষাগারের টাকা, বিভিন্ন প্রকল্পের বরাদ্দ, শেয়ারবাজার, ব্যাংক, গরিবের জন্য দেয়া বরাদ্দ ত্রাণের চাল চুরি ও লুটপাট শুরু করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।বিগত ১২ বছর ধরে তারা চুরি-লুটপাট অব্যাহত রেখেছে।
সর্বশেষ প্রাণঘাতী করোনা মহামারীতে যখন দেশের হতদরিদ্র মানুষ দিশেহারা, তখনও ত্রাণের চাল চুরি করে যাচ্ছে তারা। বলা যায়-বিগত ১০ দিনে চুরি-লুটপাট করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা এক নজির স্থাপন করেছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত চাল চুরির হিসাবে দেখা গেছে, গত ১৩ দিনে সারাদেশে আওয়ামী লীগ নেতারা গরিবের ৩৩০০ বস্তা চাল চুরি করেছে। ৩০ মার্চ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত ১৩ দিনের ব্যবধানে এই চাল চুরির ঘটনাগুলো ঘটে।
কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হলো-আওয়ামী লীগ নেতাদের এসব চাল চুরির ঘটনায় সারাদেশের মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলেও সরকার এসব চোরদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আর চুরি যখন শেষ দিকে চলে আসছে তখন সরকারের পক্ষ থেকে নামকা ওয়াস্তে একটি শাস্তির প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
বিভিন্ন মহল থেকে এখন প্রশ্ন উঠছে, সরকার এতদিন এসব চাল চোরদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কেন? আর যেসব আ.লীগ নেতাদের বাড়ি থেকে শত শত বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়েছে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়নি কেন? তাহলে কি প্রশাসনের লোকদেরও এসব চোরদের সঙ্গে আতাত আছে?
স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও স্থানীয় গণমাধ্যকর্মীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যমতে এ পর্যন্ত পাথরঘাটা উপজেলায় ৫৫০ বস্ত, বগুড়ায় ১০০ বস্ত, নাটোরে ১৩ বস্ত, জয়পুরহাটে ৭ বস্তা, যশোর ৮০ বস্তা, যশোরের মণিরামপুরে ৫৫৫ বস্তা, ঝিকরগাছায় ১ বস্তা, নওগাঁয় ৩৩৮ বস্তা, বাগেরহাটে ১৮ বস্তা, পটুয়াখালীতে ১০ বস্তা, ঝালকাঠিতে ৫০ বস্তা, সিলেটে ১২৫ বস্তা, ময়মনসিংহের ত্রিশালে ১৬ বস্তা, সারিয়াকান্দি উপজেলায় ২৮৮ বস্তা, গাবতলী উপজেলায় ১০০ বস্তা, বগুড়ার শিবগঞ্জ ১৩ বস্তা, জামালপুর সদর উপজেলায় ২০০ বস্তা, নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় ৯০ বস্তা, কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলায় ৬০ বস্তা, বগুড়ার সোনাতলায় ৫০ বস্তা, ঠাকুরগাওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় ৬৩০ বস্তা চাল আ.লীগ নেতারা চুরি করেছে।
এদিকে আওয়ামী লীগ নেতাদের এই চুরিকাণ্ড থেকে মুক্তি ও অর্থনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অসচ্ছল জনগোষ্ঠীর তালিকা প্রস্তুত করে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে সরকারকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী।
ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান বলেন, করোনা ভাইরাসের সামাজিক সংক্রমণের প্রেক্ষিতে অর্থনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী এই মূহুর্তে আতঙ্ক এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। স্বল্প আয়ের মানুষ, দিনমজুর, রিকশাচালক থেকে শুরু করে নানা পেশার মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার লজ্জায় সাহায্য চাইতে পারছে না। এ সমস্ত পরিবারে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য এবং ওষুধের অভাব কিংবা ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন পত্র, পত্রিকা, টিভি মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে এ সংক্রান্ত নানা খবর প্রকাশ পেয়েছে। এই অবস্থায় সরকারের দায়িত্ব অর্থনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর তালিকা প্রস্তুত করে তাদের নিকট খাদ্য ও ওষুধ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া।
নোটিশে তিনি লিখেছেন, ইতোপূর্বে নানা দুর্যোগে সেনাবাহিনী সাফল্যের সঙ্গে সরকারকে সহায়তা করেছে এবং জনসাধারণের আস্থা অর্জন করেছে। ত্রাণকাজে বিভিন্ন অনিয়ম, নির্বাচিত প্রতিনিধি কর্তৃক চাল চুরি ও মজুদ এবং সমন্বয়হীনতার লক্ষ্য করা গেছে। এই পর্যায়ে একমাত্র সেনাবাহিনীর মাধ্যমে এই ত্রাণ বিতরণ এবং সরবরাহের কাজ যথাযথভাবে পরিচালনা সম্ভব।
এছাড়া আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর তালিকা প্রস্তুত করে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে তাদের নিকট খাদ্য ও ওষুধ সামগ্রী পৌঁছানোর জন্য আহ্বান জানান তিনি।