অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
চট্টগ্রামে নিখোঁজের চারদিনের মাথায় সাংবাদিক গোলাম সরওয়ারকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার রাত ৮টার দিকে সীতাকুণ্ডের ছোট কুমিরা গরুর বাজার সংলগ্ন একটি খালের পাশে তাকে পাওয়া যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার সালেহ্ মোহাম্মদ তানভীর।
স্থানীয় ব্যক্তিরা গোলাম সরোয়ারকে উদ্ধার করে কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোরশেদ হোসেন চৌধুরীকে খবর দেন। চেয়ারম্যান বিষয়টি থানায় জানান। পুলিশ রাত আটটার দিকে গিয়ে সরোয়ারকে নিয়ে যায়।
স্থানীয় কয়েকজন জানান, উদ্ধারের সময় গোলাম সরোয়ার বলতে থাকেন, ‘ভাই, আমারে মাইরেন না। আমি আর নিউজ করব না।’
ইউপি চেয়ারম্যান মোরশেদ হোসেন চৌধুরী বলেন, সন্ধ্যার কোনো একসময় গোলাম সরোয়ারকে জঙ্গলে কে বা কারা ফেলে যান। বাজারের এক লোক প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে সেদিকে গিয়ে গোঙানির শব্দ শুনতে পান। কাছে গিয়ে ওই ব্যক্তি গোলাম সরোয়ারকে দেখতে পান। পরে তাঁকে (চেয়ারম্যান) খবর দেওয়া হয়। তিনি পুলিশকে খবর দেন।
জানা গেছে, সাংবাদিক সারোয়ার গুম হওয়ার নেপথ্যে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এর ভাই আনিসুজ্জামান জড়িত।
অনুসন্ধানে বলছে, মন্ত্রী ও মন্ত্রীর ভাইয়ের অপরাধ জগৎ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় তাকে গুম করা হয়। চট্রগ্রামের আঞ্চলিক পত্রিকা সিটি নিউজে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এর ভাই আনিসুজ্জামানের ব্যবসায়ীর জায়গা অবৈধভাবে দখল করার চিত্র তুলে ধরা হয়। ‘চট্টগ্রামে ব্যবসায়ীর জায়গায় ভূমিমন্ত্রীর ভাইয়ের কুদৃষ্টি’ এই শিরোনামে প্রতিবেদনে লেখা হয়, চট্টগ্রামে ব্যবসায়ীর জায়গা অবৈধভাবে দখলের চেষ্টা করছে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এর ভাই আনিসুজ্জামান। নগরীর সার্সন রোডের জেএস কনস্ট্রাকশন লিমিটেড এর চলমান একটি ফ্ল্যাট প্রকল্পের জায়গা নিজের বাউন্ডারি ওয়াল যুক্ত করে দখলের চেস্টা করছে। প্রকল্পের জায়গায় কাজ করতে গেলে হত্যার হুমকিও দেয়া হয়েছে এই বব্যবসায়ীকে।
এছাড়া ‘চট্টগ্রামে অভিজাতে ফের আলোচনা ক্যাসিনো’ এই শিরোনামে ক্যাসিনো ব্যবসার নেপথ্যে ক্ষমতাসীন নেতাদের কুকৃত্তি উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, চট্টগ্রাম নগরীর খুলশীসহ কয়েকটি অভিজাত এলাকায় এক শ্রেণির মানুষ ক্যাসিনোতে জড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে অভিজাত শ্রেণির কয়েকজনের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ উঠছে।বিকাল হলেই অভিজাত ক্লাবগুলোতে মেতে উঠেন জুয়াড়িরা।আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে একেক সময় একেক জায়গায় বসা “পুকার” নামে ক্যাসিনোর এই নিষিদ্ধ জুয়া খেলা নিয়ে সেখানে প্রতিদিনই লক্ষ লক্ষ টাকা বাজি ধরা হচ্ছে। জুয়ার টাকা ডলারে ট্রান্সজেকশন হওয়ায় তাতে দেশের টাকা বাইরে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
গত বছর ক্যাসিনো কান্ড নিয়ে ঢাকায় তোলপাড়ের পর চট্টগ্রামেও এর প্রভাব পড়েছিল। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী রাজধানী ঢাকাসহ চট্টগ্রামেও বিভিন্ন ক্লাবগুলোতে অভিযান চালায়। নামী-দামী ক্রীড়া সংস্থার বিভিন্ন ক্লাব তখন বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওইসময় চট্টগ্রামে ক্যাসিনোর আলামত না পাওয়ার দাবি করলেও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী জুয়া খেলার অভিযোগে নগরীর বিভিন্ন ক্লাবের কার্যক্রম বন্ধ করে দেন।
গত তিন/চার মাস ধরে মহামারী করোনো ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যস্ততার সুযোগ নিয়ে ফের জুয়াড়ি চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি ওইসব ক্লাবগুলোতে জুয়া খেলার সাথে জড়িতরা বিভিন্ন জায়গায় ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, এবার একটি শ্রেণির মানুষজন ক্যাসিনো জুয়া নিয়ে চট্টগ্রামে ধীরে ধীরে সক্রিয় হচ্ছে।