অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সম্প্রতি নায়িকা পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টার ঘটনা নিয়ে দেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ইতমধ্যে উত্তরা বোট ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসির উদ্দিন মাহমুদকে গ্রেফতার করে ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে উপর তলার কারা এই ঘটনার পেছনে কাজ করেছে সেটা বেরিয়ে আসবে বলেও ধারণা করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
ক্ষমতাসীনদের এমন দ্রুত সিদ্ধান্ত জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। অনেকেই বলছেন রাঘববোয়াল বেরিয়ে আসার ভয়েই কি নাসিরকে গ্রেফতার করা হয়েছে? আবার অনেকেই বলছেন ক্ষমতাসীনরা বিভিন্ন সময় ইস্যু দিয়ে আরেকটি ইস্যু চাপা দিয়ে আসছেন এটার পেছনেও কি তেমন কোন উদ্দেশ্য রয়েছে?
দেখা গেছে, সংবাদ সম্মেলনে পরীমনি বর্তমান পুলিশের আইজিপি বেনজীর আহমেদের কথা উল্লেখ করেন। পরীমনি বলন, নাসির উদ্দিন আমার গায়ে হাত তুলেছেন। তিনি বেনজীর আহমেদের পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘সে (বেনজীর) তার বন্ধু হয়, ভাই লাগে।’
এই ঘটনায় পরীমনি বেনজীর আহমেদের নাম উল্লেখ করলেও গণমাধ্যমও বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। এমনকি বেনজির আহমেদ উত্তরা বোট ক্লাবের বর্তমান সভাপতি হওয়ার পরও এই ঘটনায় তার এখনও কোন স্টেমেন্ট পাওয়া যায়নি।
এখন প্রশ্ন হল-যার শক্তি ও ক্ষমতায় বলীয়ান হয়ে নাসির মাহমুদ নায়িকা পরীমনিকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছিলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক সেই বেনজীর আহমদের কোথায়? তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছেন কেন? জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হচ্ছে না কেন?
সেদিন রাতে সংবাদ সম্মেলনে পরীমনি বলেছেন-নাসির মাহমুদ যখন তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে তখন তিনি বার বার বলেছেন-পুলিশের আইজিপি বেনজীর আহমদ আমার বন্ধু। তিনি আমার ঘনিষ্ট। তুই পারলে আমার কি করার করিছ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এই পুলিশের মহাপরিদর্শককে নিয়ে চলছে তুমুল সমালোচনা। অনেকেই বলছেন-এই ঘটনার সাথে পুলিশের আইজিপি বেনজীর আহমদও জড়িত। বেনজীরই পরীমনিকে তারা ক্লাবে নিয়েছিল। কিন্তু একাধিক ব্যক্তি থাকায় পরীমনি অসম্মতি জানালে শুরু হয় তর্ক বিতর্ক। এরপর পরীমনি বাধ্য করলে সে ক্ষোভে বসে ঘটনা ফাঁস করে দিয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে এর আগেও দেশের সিনেমা জগতের একাধিক নায়িকার সাথে গভীর সম্পর্ক ছিল বেনজীরের।
সিনেমার পরিচালক রাজু চৌধুরীর হাত ধরে কেয়া নামে এক উঠতি মডেলের সাথে বেনজীরের সাথে পরিচয় হয়। এর পর নিয়মিত কেয়ার সাথে বিশেষ একটি ফ্লাটে মিলিত হতেন। কেয়াকে রক্ষিতা বানিয়ে রাখেে এই পুলিশের আইজিপি। কিন্তু পরিবারে অভাবের কারনে কেয়া যখন এই শৃংখল থেকে বেরুতে চায় তখন বেনজির কেয়াকে হুমকি দেয়। পরে কেয়া লুকিয়ে লুকিয়ে মিডিয়ার ব্যক্তিদের সাথে নতুন করে অভিনয়ের ইচ্ছা প্রকাশ করে। এই খবর বেনজীরের কানে এলে বেনজীর কেয়াকে মারধর করে। পরে ২০১১ সালে কেয়াকে গুলশানের একটি বাসায় কলগার্ল সাজিয়ে আটক করে পুলিশ।
এরপর বেনজীরের সাথে পরিচয় হয় আরেক নায়িকা বিদ্যা সিনহা মীমের। মীমের গুলশানের বাসায় প্রায় প্রতিদিনই আসা যাওয়া করতো বেনজীর। বিনিময়ে মিমের অনেক কাজ করে দেন তিনি। কিন্তু এভাবে কতদিন। এক সময় সে সব বিষয় আসে প্রকাশ্যে। আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমদের আপন ভাগ্নে ভোলার নতুন পৌর মেয়র মনিরুজ্জামানের সাথে হাতাহাতি হয় বেনজীরের। ভোলায় জন্ম নেয়া মীম কলেজ পর্যন্ত পড়াশুনা করেন এই দ্বীপজেলাতে। পরে লাক্স সুপার স্টার হয়ে পাড়ি জমান কুমিল্লায়। কুমিল্লা তার বাবার বাড়ি। এই উঠতি মডেলের বাবা কলেজের শিক্ষক। তিনি কুমিল্লায় থাকলেও প্রথমে মীম ও তার মা থাকতেন কল্যাণপুরে মামার বাড়িতে। পরে মীমকে গুলশানে একটি বিলাসবহুল ফ্লাট গিফ্ট করেন ভোলার মেয়র মনিরুজ্জামান। এর বিনিময়ে মীমকে রক্ষিতা বানিয়ে নিয়েছিলেন ওই মেয়র। কিন্তু বেনজীর যখন মীমের কাছে আসা যাওয়া শুরু করে তখন মনির বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি।
সূত্র বলছে, মনির এক রাতে মীমের বাসায় অবস্থান করলে সেই রাতে হুট করে বেনজীর চলে আসে মীমের বাসায়। তখন বিষয়টি বেনজিরের চোখে পরলে বেনজির ও মীমের মাঝে প্রচন্ড ঝগড়া বাধে। এক পর্যায়ে ঝগড়া গড়ায় মনির বেনজীরের মধ্যে। বেনজীর মনিরকে গেপ্তার করতে পুলিশ কল করলে মনির বিষয়টি তার মামা তোফায়েলকে জানালে তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী বেনজীরকে ফোন করে। তোফায়েল বেনজীরকে শাসিয়ে কথা বললে বেনজীর ক্ষিপ্ত হয়ে তোফায়েলকে বলেন, আমি হাসিনা ছাড়া কাউকে চিনি না। পরে পুলিশের ততকালীন অতিরিক্ত আইজি (বর্তমান আইজি) শহিদুল হকের সমঝোতায় ঐ দিনের জন্য বিষয়টি মিমাংসায় গড়ায়।
এছাড়া সিনেমা জগতের এমন উঠতি মডেলদের টাকার বিনিময়ে রক্ষিতা বানিয়ে রাখার অভিযোগ আছে আরো অনেক।তাদের তালিকায় কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মেয়ে, ছোট পর্দা ও বড় পর্দার নায়িকা, মডেল এমনকি সুন্দরী ভাবীরাও আছে বলে সূত্রটি জানায়।
Discussion about this post