অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দুদের বাড়িঘর ও পূজামণ্ডপে হামলা-ভাঙচুর নিয়ে বহু নাটকীয়তার পর এবার বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে আসল রহস্য। সরকার দলীয় মন্ত্রী এমপিরা প্রতিদিন বিএনপি-জামায়াতের কথা বললেও সারাদেশের এই সহিংসতার ঘটনায় বেরিয়ে এসেছে ক্ষমতাসীন নেতাদের নাম।
দেখা গেছে, গত সপ্তাহে রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দুদের বাড়িঘরে আগুন দেয়ার ঘটনায় কারমাইকেল কলেজ ছাত্রলীগের সহভাপতি সৈকত মন্ডলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানিয়েছে, সৈকত মন্ডল ফেসবুকে আরেক জনের নামে মিথ্যা পোস্ট দিয়ে এলাকায় ধর্ম অবমাননার গুজব ছড়িয়েছে। উস্কানি মূলক কথাবার্তা লিখে মানুষকে উত্তেজিত করেছিল। মসজিদের মাইকেও এলাকার মানুষকে বেরিয়ে আসার জন্য ঘোষণা দিয়েছিল। এমনকি কুমিল্লার ঘটনায়ও সৈকত মন্ডল ফেসবুকে উস্কানি মূলক পোস্ট দিয়ে মানুষকে উত্তেজিত করেছিল।
রাজনীতিবিদরা বলছেন, শেখ হাসিনা ও তার দলের নেতারা এনিয়ে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে চরম বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। তাদের ভাষ্য বিএনপি-জামায়াত নাকি ফায়দা লুটতে একাজ কিরয়েছে। আসলে এটাই আওয়ামী লীগের চরিত্র। দেশে কোনো ঘটনা ঘটার পর তদন্ত না করেই দোষ চাপায় বিএনপি-জামায়াতের ওপর।
দেখা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুরের পর আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপি-জামায়াত ও মাদরাসার ছাত্রদের উপর দোষ চাপিয়েছিল। কিন্তু পরে তদন্তে বেরিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ নেতাদের নাম। ঠিক একই ঘটনা ঘটেছিল সুনামগঞ্জেও। এছাড়া সব জায়গায় হামলাতে দেখা গেছে পুলিশের নিরাবতা।
দলীয় কোন্দলে চাঁদপুরে পূজামণ্ডপে হামলা করে আওয়ামী লীগ
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনায় পাল্টাপাল্টি দোষারোপ শুরু করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষ। উভয় পক্ষই একে অন্যের বিরুদ্ধে হামলা করার অভিযোগ তুলেছে। তবে স্থানীয়রা বলছে অন্তকোন্দল থেকে তারা এই হামলা চালিয়েছে।
এদিকে ওই হামলার ঘটনায় পুলিশের করা দুই মামলায়ই উল্লেখ করা হয়েছে, ২ হাজার ২০০ জনের মতো লোক প্রথমে লক্ষ্মীনারায়ণ জিউর আখড়া পূজামণ্ডপে হামলা চালায়। পরে তারা হাজীগঞ্জ থানা ও উপজেলা সদরের আরও পাঁচটি পূজামণ্ডপে হামলা করে। হামলায় জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত ৩২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
স্থানীয় ও দলীয় সূত্র বলেছে, হাজীগঞ্জ আওয়ামী লীগে প্রায় আট বছর ধরেই দুটি বিবদমান পক্ষ রয়েছে। এক পক্ষ চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তি) আসনের সাংসদ সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) রফিকুল ইসলামের অনুসারী। অপর পক্ষটির নেতৃত্ব দেন হাজীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও হাজীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী মাঈনুদ্দিন এবং হাজীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহবুব উল আলম। সাংসদ রফিকুল ইসলাম দ্বন্দ্ব মেটাতে ২০১৯ সালে হাজীগঞ্জ উপজেলা উন্নয়ন পরিষদ নামে একটি সংগঠন তৈরি করেন। সেখানে যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেন চাঁদপুর আওয়ামী লীগের নেতা মো. আহসান হাবিব এবং হাজীগঞ্জ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জসিম উদ্দিন। এই দলীয় কন্দল থেকেই তারা পূজামণ্ডপে হামলা চালায় ও ভাঙচুর করে।
পূজামণ্ডপ কমিটি সূত্র বলেছে, কুমিল্লায় পবিত্র কোরআন শরিফ অবমাননার ঘটনা ঘটে ১৩ অক্টোবর। ওই দিন রাত ৮টা ১০ মিনিটে হাজীগঞ্জে লক্ষ্মীনারায়ণ জিউর আখড়া পূজামণ্ডপে হামলা শুরু হয়। এর ঘণ্টাখানেক আগেই সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে মণ্ডপটি পরিদর্শন করেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ ও পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ।
পূজা উদ্যাপন কমিটির কয়েকজন নেতা বলেন, হামলাকারীদের তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত করতে পারেননি তাঁরা। হামলা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা মন্দিরের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেন। সেখানে আগে থেকে তিনজন পুলিশ সদস্য ছিলেন। হামলার খবর পেয়ে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদসহ ২০-২৫ জন পুলিশ সদস্য সেখানে দ্রুত পৌঁছান। তাঁরাই মূলত প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। রাত ৯টার দিকে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা–কর্মী সেখানে যান। হাজীগঞ্জে ওই দিনের সহিংসতায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ঘটনার দিনই মারা যান তিনজন।
অবশ্য স্থানীয় বলছেন, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতারা ঘটনার সাথে জড়িত। তারা স্থানীয় পোলাপানদের লেলিয়ে দিয়ে ভাঙচুর হওয়ার পর ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
এদিকে হাজীগঞ্জ উপজেলা উন্নয়ন পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, হাজীগঞ্জ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী মাঈনুদ্দিন ও তাঁর অনুসারীরা বিভিন্ন স্থানে হামলাকারীদের প্রতিরোধ করতে আসা দলের নেতা–কর্মীদের বাধা দিয়েছেন।
তবে গাজী মাঈনুদ্দিন এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘কারা হামলার সময় প্রতিরোধে নেমেছে, আর কারা হামলার সময় নিশ্চুপ থেকেছে, তা ভিডিও ফুটেজে রয়েছে। যারা হামলা করতে এসেছিল, আমরা তাদেরকে বাধা দিয়েছি। আমাদের প্রতিটা নেতা–কর্মী এখন হাজীগঞ্জের হিন্দু বাড়ি ও পূজামণ্ডপ এবং মন্দিরগুলোয় পাহারা দিচ্ছে।’
অবশ্য হাজীগঞ্জ আওয়ামী লীগের সহসভাপতি দিলীপ কুমার সাহা বলেন, এমন কোনো পাহারা তাঁরা দেখতে পাননি। হামলার পর আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা ঘটনাস্থলে হাজির হন।
পূজা মন্ডপে কোরআনও রেখেছিল আ.লীগ নেতারা
কুমিল্লায় পূজামন্ডপে দেবীর পায়ের কাছে মুসলমানদের পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআন শরীফ রেখেছিল আওয়ামী লীগের লোকজনই। এখানে বিএনপি-জামায়াত কিংবা অন্য কেউ কুরআন রাখেনি। হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রমাণিক বলেছেন, ক্ষমতাসীন দলের লোকেরাই এখানে কুরআন রেখেছিল। কুমিল্লার স্থানীয় জনগণও এমনটা বলছে।
অপরদিকে, ঘটনার পর সেখানে গিয়েছিলেন গণস্বাস্থ্যের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও জনসংহতি আন্দোলনের সভাপতি জুনাইদ সাকি। তাদের কাছে হৃদয় সাহা নামে এক কিশোর বলেছে-সেদিন মধ্যরাতে পুলিশের একটি গাড়ি আসে সেখানে। কয়েকজন যুবককে পুলিশ কিছু একটা জিজ্ঞাসাবাদও করেছে। পুলিশ তাদেরকে ছেড়ে দিয়েছে। এরপর পুলিশের গাড়ি চলে যায়। কিছুক্ষণ পরই পূজামণ্ডপ এলাকার লাইট বন্ধ করে দেয়া হয়। তখনই আমরা বুঝতে পারছি এখানে কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে।
হৃদয় সাহা আরও বলেছেন, প্রভাবশালীরা এটার সাথে জড়িত। পুলিশ যুবকদেরকে আটক করেনি কেন? তারপর পূজামণ্ডপের লাইটগুলো বন্ধ করে দিয়েছিল কেন? ক্ষমতাসীন লোক ছাড়া এসব কেউ করেনি।
পূজামন্ডপে হামলার ঘটনা সরকারেরই নীলনকশা
কুমিল্লাসহ বিভিন্ন পূজামন্ডপে হামলার ঘটনা সরকারের নীলনকশা বলে অভিযোগ করেছেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। পূজামন্ডপে হামলার ঘটনা সরেজমিন পরিদর্শনের পর গতকাল সোমবার সকালে এক সাংবাদিক সম্মেলনে দলের গঠিত কমিটির প্রধান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, আমরা সরেজমিন মন্দিরে গিয়ে সকলের সাথে কথা বলেছি, প্রত্যক্ষদর্শীদের মতামত শুনেছি। সঠিকভাবে অনুসন্ধান করলে দেখা যায় যে, এইসব হামলার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী যুব লীগ, ছাত্রলীগের ছেলে-পেলেরা। সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশে কাছেও ধারণা আছে। কিন্তু তাদেরকে সামনে না নিয়ে যারা নিরীহ বা শান্তি প্রিয় তাদেরকে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।
নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। গত ১৩ অক্টোবর কুমিল্লাসহ পূজামন্ডপে হামলার ঘটনার বিএনপি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে একটি কমিটি গঠন করে। গত ২৩ অক্টোবর গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল কুমিল্লার চাঁন্দমনি রক্ষা কালী মন্দির, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের রামকৃষ্ণ সেবা আশ্রম ও রাজা লক্ষী নারায়ন জিউ আখড়া এই তিনটি মন্দির পরিদর্শন করেন এবং মন্দিরের পুরোহিতসহ প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলেন।
গয়েশ্বর বলেন, আজকে সরকার হামলাকারীদের মোকাবেলা করা বা আইনের আওতায় এনে তাদেরকে শাস্তি দেয়া বা বিচার করার উদ্যোগ নেয়নি। উদ্যোগটা হলো এই ইস্যুতে মিথ্যা মামলার মধ্য দিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদেরকে তুলে নেয়া বা গ্রেপ্তার-হয়রানি করার একটা নীলনকশা এবং হামলাকারীদের আড়াল কর। এটা নিসন্দেহে বলা যায়, সরকার সুপরিকল্পিতভাবে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদেরকে হেনস্তা করার একটি ইস্যুগুলো তৈরি করেছে।
গণমাধ্যমেরে উদ্দেশ্যে গয়েশ্বর বলেন, আজকের যে ঘটনা(পূজামন্ডপে) এটা শুধু হিন্দু আক্রান্ত হয়েছে আমরা বলব না। গোটা জাতি আক্রান্ত হয়েছে। সেই আক্রমণকারীদের প্রতিরোধ করতে হলে অবশ্যই আমাদের একটা সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার। লেখনীর মাধ্যমে, প্রচারের মধ্য দিয়ে গণমাধ্যম সব সময় জনগণের পক্ষে কথা বলেছেন। আমি আশা করবো, মিডিয়া ও গণমাধ্যমের ভাইয়েরা এই অবস্থার বিরুদ্ধে, এই অপকর্মের বিরুদ্ধে আপনারা সোচ্চার হবেন আপনাদের পেশাগত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে।
গয়েশ্বর বলেন, কুমিল্লার চাঁন্দমনি রক্ষা কালী মন্দিরে গত ১৩ অক্টোবর দুপুর আড়াইটায় একদিনে তিন দফা আক্রমণ করেছে। নানুয়াদিঘীর পাড়ের ঘটনা হলো সকালে। সেখানে(চাঁন্দমনি রক্ষা কালী মন্দির) আক্রমণ করার পরে স্থানীয় লোকজন তারা যেভাবে পারে আত্মরক্ষা করেছে। ঘটনার পরে পুলিশ আসছে, তারা বলেছে, আপনারা ভয় পাবেন না আমরা আছি। উনারা চলে যাওয়ার পরে আবার তিনটায় আক্রমন হয়েছে। ঠিক একইভাবে আক্রমণকারীরা চলে যাওয়ার পরে পুলিশ এসেছে। এসে বললো যে, আমরা আছি আপনারা ভয় পাইয়েন না। আবার বিকাল চারটায় আক্রমণ হয়েছে। অর্থাৎ একটা মন্দির তিনবার আক্রমণ হয়েছে এবং আগুন দেয়া হয়েছে। সেই মন্দিরে পুরোহিতের সাথে কথা বলছি। কারণ আমার ধারণা সরকার অথবা স্থানীয় প্রশাসন থেকে তাদেরকে নিশ্চয় কোনো হুমকি-ধমকি দেয়ার কারণে মন্দিরের কমিটির সাধারণ সম্পাদকসহ কেউ কেউ উপস্থিত হননি এটা স্বাভাবিকভাবে বুঝা যায়। আশপাশের দোকানদার আছে তাদেরকে আমরা ডেকে তাদের কাছ থেকে ঘটনার বর্ণনা শুনেছি। মন্দিরে আগুন দিয়েছে কোনো প্রাণহানি ঘটে নাই। তবে বির্জামান আতঙ্কটা এখনো তাদের মন থেকে মুছে যায়নি। একটা নীরব নিস্তব্ধ মানে দিনের বেলাও গা শির শির করে উঠে। চারিদিকে মানুষের চোখে মুখে একটা আতঙ্কে ছাপ দেখেছি। কোনো কথাই তারা বলতে চায় না। কারণ তাদেরও জীবন আছে ভয় থাকতেই পারে যদি কথাগুলো প্রকাশ করে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, গোপালগঞ্জ শেখ হাসিনার ভোট পয়েন্ট..। তার যে নির্বাচনী এলাকা টুঙ্গিপাড়া একটা গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা, সেই টুঙ্গিপাড়াতেও একটি মন্দির ভাংচুর করা হয়েছে। এখান থেকে অনুমান করা যায় যে, সরকার বড় স্পর্শকাতর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মধ্য দিয়ে জনদৃষ্টিকে অন্যদিকে সরানো এবং তার স্বৈরতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদী মনোভাব দিয়ে তার ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার একটা হীন প্রচেষ্টায় লিপ্ত। আমি মনে করি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আমাদেরকে এখানে মৌলবাদী বা জঙ্গিবাদী বা সাম্প্রদায়িকভাবে আখ্যায়িত করা হয় এটা ষড়যন্ত্রমূলক। যার কারণে আজকে আক্রমণের শিকার হয়েছেন তারা দুর্বল। আজকে সমাজের সকল নেতৃবৃন্দকে সামনে আসতে হবে। জাতির ধর্ম নির্বিশেষ বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক যে সংস্কৃতি সেটাকে লালন করতে হলে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে একটি প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে এই ধরনের স্পর্শকাতর সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।
গয়েশ্বর বলেন, এটা যদি আমরা স্পষ্ট না করতে পারি, আমরা যদি প্রতিরোধ না করতে পারি। সেই কারণেই সরকারের উদ্যোগকে তোয়াক্কা না করে আমাদের জাতীয় জীবনে রাজনীতিবিদ, বিভিন্ন শ্রেণী পেশা, বিশিষ্ট সচেতন নাগরিক গোষ্ঠী সবাই এবং কি আমাদের আলেম-উলামা গোষ্ঠি যারা ধর্ম নিয়ে চর্চা করেন সবাইকে একই সুরে এটাকে মোকাবিলা করতে হবে এবং বাংলাদেশের ঐহিত্য অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ সেটা সমুন্নত রাখতে হবে। তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে একটি দলের প্রতিনিধি। আমি বিএনপি করি। যেই দলের দর্শন হচ্ছে- আলাদা কোনো বিভাজন নয় অর্থাৎ এই ভূখন্ডে জন্ম যারা নিয়েছেন সবাইকে নিয়ে আমরা সবাই বাংলাদেশী। আমরা জন্মে হিন্দু হতে পারি, মুসলিম হতে পারি, আমরা অনেক কিছু হতে পারি..। কিন্তু আমাদের পরিচয় বাংলাদেশী। সেই বাংলাদেশী পরিচয়ের ঐতিহ্য নিয়ে আমাদের জাতি সত্ত্বার ওপর ভিত্তি করে আমরা এই চেতনায় ঐক্যবদ্ধভাবে বর্তমান এই ফ্যাসিবাদী সরকারের এই ধরনের হীন কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য আমি আহ্বান করছি। আমরাও মাঠে নামবো। আজকে এটার প্রয়োজন আছে। প্রথমত এই জাতিকে টিকিয়ে রাখা, আমার রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রাখা। এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে বা অব্যাহত থাকলে গণতন্ত্র তো নাই, রাষ্ট্র থাকবে কিনা সন্দেহ। আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুখিন হবে।
তিনি বলেন, আমরা হিন্দু চেতনাবোধ থেকে মন্দিরে(হামলা হওয়া মন্দির) যাইনি। আমরা একটা ন্যাশনাল স্পিরিট অর্থাৎ আমরা বাংলাদেশের নাগরিক, আমরা একটা রাজনৈতিক দল করি সেই দলের দায়িত্ববোধ থেকে আমরা বিএনপির প্রতিনিধি হিসেব গিয়েছি এবং যাবো। এটা ভাবার কারণ নেই যে, শুধু হিন্দুদের মন্দির বা বাড়ি হামলা হয়েছে বলে আমরা সেখানে গিয়েছি। যেকোনো হামলা, যেকোনো আক্রমণে আমরা ইতিপূর্বে সেখানে গেয়েছি এবং আমরা প্রতিবাদ করেছি, প্রতিরোধ করার চেষ্টা করবো অব্যাহতভাবে।
Discussion about this post