অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
অবশেষে শেখ হাসিনা থেকে মুখ ফিরিয়েই নিচ্ছে ভারত। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ভারতের ইশরাতেই ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিন নির্বাচনের নামে প্রহসন করে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল। এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন মূলত ভারতের নির্দেশেই করেছিল শেখ হাসিনা। এমনকি ২০১৮ সালের নির্বাচনটাও শেখ হাসিনা করেছেন ভারতের সহযোগিতায়। সোজাভাবে বললে-ভারতই মূলত এতদিন শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখছে।
ভারতের মূল উদ্দেশ্য হল হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নেয়া। বিগত ১২ বছর ধরে যথেষ্ট সুবিধা নিয়েছে ভারত। কিন্তু পরিবর্তে বাংলাদেশকে দেয়নি কিছুই।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনের ভাষায় ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক হল স্বামী-স্ত্রীর মতো। ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামীর ভাষায়-ভাই-বোনের মতো। আর আওয়ামী লীগের নেতা ও সরকারের মন্ত্রীদের ভাষায় রক্তের রাখিবন্ধন। এক কথায় ভারতকে খুশি রাখার জন্য আওয়ামী লীগ নেতারা মোদিকে খুশি রাখতে চেষ্টা করলেও সেটাও আর পারছে না তারা।
দেখা গেছে, বিগত ১২ বছরে একাধিকবার শেখ হাসিনার সাথে ভারতের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। মান-অভিমানও হয়েছে অনেক। শেখ হাসিনাসহ তার দলের নেতারা সম্পর্ক ধরে রাখার জন্য ভারতকে যখন যা দরকার তাই দিয়েছে। কিন্তু এবার মনে হয় শেখ হাসিনাকে একেবারেই ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। কোনোভাবেই মোদিকে আর ধরে রাখতে পারছে না শেখ হাসিনা।
বিগত দিনগুলোতে শেখ হাসিনার সাথে ভারতের যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল-সবই ছিল চীনকে কেন্দ্র করে। বর্তমানে বাংলাদেশের অধিকাংশ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে চীনের অর্থায়নে। চায়না কোম্পানিগুলো এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে। এসব থেকেই ভারতের সাথে হাসিনার দূরত্ব সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে তিস্তা নিয়ে বিগত ১২ বছরে ভারতের সাথে কোনো চুক্তি করতে পারেনি শেখ হাসিনা। আর এই সুযোগ গ্রহন করেছে চীন। তিস্তা প্রকল্পে তারা বাংলাদেশকে ১০০ কোটি ডলার দিবে। এরপরই শেখ হাসিনার উপর আরও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে ভারত।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, কয়েক বছর ধরেই শেখ হাসিনাকে চীন থেকে ফেরানোর জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। বাংলাদেশ ভারতের বন্ধু হলেও চীন হচ্ছে ভারতের আজন্ম চির শত্রæ। এই চির শত্রæ চায়নার সাথে বন্ধু রাষ্ট্র বাংলাদেশের মহববতকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না ভারত। এছাড়া বাংলাদেশকে চীন থেকে কোনোভাবে ফেরাতেও পারছে না। তাই ভারত এখন বাংলাদেশকে চীন থেকে ফেরাতে চীনের চির শত্রু আমেরিকার কাছে গিয়ে ধরণা দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি আমেরিকা র্যাব ও সংস্থাটির কর্মকর্তাদের উপর যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে এর সাথে ভারতের হাত রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা দেয়ার জন্য ভারতও যুক্তরাষ্ট্রকে সুপারিশ করেছে।
রাজনীতিক বিশ্লেষকরা বলছেন-বিগত ১২ বছর ভারত শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে অনেক সুবিধা নিয়েছে। শেখ হাসিনাকে এখন আর তাদের দরকার নাই। তাদের এখন দরকার চীনকে কোনঠাসা করা। কারণ, ভারতের অস্তিত্বের জন্য চীন হুমকি। আর বাংলাদেশে অন্য কোনো সরকার আসলেই ভারত তাদের কাছ থেকে সুবিধা নিতে পারবে। এছাড়া শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার চেয়ে এখন চীনকে চাপে রাখা বেশি জরুরি। তাই ভারত তাদের বৃহত্তর স্বার্থে শেখ হাসিনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
Discussion about this post