• যোগাযোগ
বুধবার, মার্চ ২২, ২০২৩
Analysis BD
  • মূলপাতা
  • বিশেষ অ্যানালাইসিস
  • রাজনীতি
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • মতামত
  • কলাম
  • ব্লগ থেকে
No Result
View All Result
  • মূলপাতা
  • বিশেষ অ্যানালাইসিস
  • রাজনীতি
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • মতামত
  • কলাম
  • ব্লগ থেকে
No Result
View All Result
Analysis BD
No Result
View All Result
Home জাতীয়

আজ শহীদ মাওলানা তিতুমীর রহ.-এর শাহদাতবার্ষিকী

নভেম্বর ১৯, ২০২২
in জাতীয়
আজ শহীদ মাওলানা তিতুমীর রহ.-এর শাহদাতবার্ষিকী
Share on FacebookShare on Twitter

আজ ১৯ নভেম্বর। শহীদ মাওলানা সৈয়দ মীর নিসার আলী তিতুমীর রহ.-এর শাহদাতবার্ষিকী। ১৮৩১ সালে ইংরেজ ও হিন্দুদের মিলিত শক্তির সাথে যুদ্ধে কামানের গোলার আঘাতে তিনি শাহদাতবরণ করেন।

যেভাবে তিনি শহীদ হয়েছেন :

শহীদ মাওলানা তিতুমীরের পত্রবাহক আমিনুল্লাহর শাহদাতের মাধ্যমে বাংলার স্বাধীনতার জন্য সর্বাত্মক জিহাদের প্রস্তুতি শুরু হয়। অথচ মাওলানা তিতুমীর চেয়েছিলেন এই জিহাদ আরো কিছু সময় পরে শুরু করতে। কারণ বাংলার মুসলিমরা দীর্ঘদিনের নাসারা ও মুশরিকদের আগ্রাসনের কবলে পড়ে দূর্বল ঈমানদার হয়ে পড়েছিলো। অনেক শিরক ও বিদআত তাদের কর্ম, চিন্তা ও আচরণে পরিলক্ষিত হচ্ছিলো। তাই মাওলানা তিতুমীর চেয়েছিলেন আগে মুসলিমদের আকিদা ঠিক করতে। কিন্তু হিন্দু জমিদারদের অব্যাহত ষড়যন্ত্র ও নির্যাতনে তিনি জিহাদে অবতীর্ণ হতে বাধ্য হন।

কোলকাতায় জমিদারদের ষড়যন্ত্র সভা
তিতুমীর ও তাঁর অনুসারীদের দমন করার উদ্দেশ্যে কোলকাতায় লাট বাবুর বাড়িতে এক সভায় হাজির হলেন, লাটু বাবু (কোলকাতা), গোবরডাঙার জমিদার কালী প্রসন্ন মুখোপাধ্যয়, গোবরা-গোবিন্দপুরের দেবনাথ রায়, নূরনগরের জমিদারের ম্যানেজার, টাকীর জমিদারের সদর নায়েব, রানাঘাটের জমিদারের ম্যানেজার, পুঁড়ার কৃষ্ণদেব রায়, বশীরহাট থানার দারোগা রামরাম চক্রবর্তী, যদুর আটির দুর্গাচরণ চক্রবর্তী ইত্যাদি ব্যক্তিবর্গ।

সভায় সবাই একমত হলো যে, যেহেতু তিতুমীরকে দমন করতে না পারলে হিন্দুজাতির পতন অনিবার্য, সেজন্যে যে কোন প্রকারেই হোক তাদে শায়েস্তা করতে হবে এবং এ ব্যাপারে সকল জমিদারগণ সর্বতোভাবে সাহায্য সহযোগিতা করবেন। ইংরেজ নীলকরদেরও সাহায্য গ্রহণ করা হবে বলে স্থির হলো। তাদেরকে বুঝানো হবে যে, তিতুমীর ইংরেজদের বিরুদ্ধেও সংগ্রাম শুরু করেছেন। হিন্দু জনসাধারণের মধ্যে এ কথা প্রচার করতে হবে যে তিতু গো-মাংস গুঁজে দিয়ে জাতি নাশ করেছেন। বশীরহাটের দারোগা চক্রবর্তীকে এ ব্যাপারে সর্বপ্রকার সাহায্য করার অনুরোধ জানানো হলো। কালীপ্রসন্ন মুখোপাধ্যয় দারোগাকে বললেন, আপনি ব্রাহ্মণ, আমরাও ব্রাহ্মণ। তাছাড়া আপনি আমাদের আত্মীয়। আমাদের এ বিপদে আপনাকে সব দিক দিয়ে সাহায্য করতে হবে। দারোগা বললো, আমি আমার প্রাণ দিয়েও সাহায্য করব এবং তিতুমীরকে রাজদ্রোহী প্রমাণ করব।

কোলকাতার ষড়যন্ত্র সভার পর সরফরাজপুরের লোকদের নিকট থেকে দাড়ি-গোঁফের খাজনা এবং আরবী নামকরণের খারিজানা ফিস আদায়ের জন্যে কৃষ্ণদেব রায় লোক পাঠালো। কিন্তু তারা খাজনা দিতে অস্বীকৃতি জানালে জমিদারের কর্মচারী ফিরে এসে জমিদারকে এ বিষয়ে অবহিত করে। অতঃপর তিতুমীরকে ধরে আনার জন্যে বারোজন সশস্ত্র বরকন্দাজ পাঠানো হয়। কিন্তু তারা ধরে আনতে ব্যর্থ হয়েছে এবং মাওলানা তিতুমীরের অনুসারীদের দ্বারা তাড়া খেয়েছে।
অতঃপর কৃষ্ণদেব নিম্নের ব্যক্তিগণকে পরামর্শের জন্যে বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ করেঃ
১। অনুকূল চন্দ্র মুখোপাধ্যয়কে গোবরডাঙায়,
২। খড়েশ্বর মুখোপাধ্যয়কে গোবরা-গোবিন্দপুরে,
৩। লাল বিহারী চট্টোপাধ্যয়কে সেরপুর নীলকুঠির মিঃ বেজামিনের কাছে,
৪। বনমালী মুখোপাধ্যয়কে হুগলী নীলকুঠিতে,
৫। লোকনাথ চক্রবর্তীকে বশীরহাট থানায়।
উল্লেখযোগ্য যে, লোকনাথ চক্রবর্তী বশীলহাটের দারোগা রামরাম চক্রবর্তীর ভগ্নিপতি।

অতঃপর বিভিন্ন স্থান থেকে কৃষ্ণদেবের সাহায্যার্থে সহস্রাধিক লাঠিয়াল, সড়কীওয়ালা ও ঢাল-তলোয়ারধারী বীর যোদ্ধা কৃষ্ণদেবের বাড়ি পুঁড়ায় পৌঁছে গেল। পরদিন শুক্রবার সরফরাজপুরে তিতুমীর ও তাঁর লোকজনদেরকে আক্রমণ করার আদেশ হলো। শুক্রবার সর্বাগ্রে ঘোড়ায় করে কৃষ্ণদেব রায় এবং তার পিছনে সশস্ত্র বাহিনী যখন সরফরাজপুর পৌঁছে, তখন জুমার খুৎবা শেষে মুসল্লীগণ নামাজে দাঁড়িয়েছে। কৃষ্ণদেবের সৈন্যরা বিভিন্ন মুসলিম বিরোধী ধ্বনি সহকারে মসজিদ ঘিরে ফেলে আগুন লাগিয়ে দিল। অল্প বিস্তর অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় তিতুমীর এবং মুসল্লীগণ মসজিদের বাইরে এলে তাদেরকে আক্রমণ করা হলো। দু’জন বল্লমবিদ্ধ হয়ে শহীদ হলো এবং বহু আহত হলো।

অতঃপর মুসলমানগণ কলিঙ্গার পুলিশ ফাঁড়িতে কৃষ্ণদেব রায় ও তার সৈন্যবাহিনীর বিরুদ্ধে খুনজখম মারপিট প্রভৃতির মামলা দায়ের করলো। পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মচারী ইজাহার গ্রহণ করলো বটে। কিন্তু ঘটনাস্থলে উপস্থিত না হয়েই লাশ দাফন করার নির্দেশ দিল। J.R. Colvin-এর রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, জমিদারের কর্মচারীগণ সরফরাজপুরে দাড়ি-গোঁফ ইত্যাদির খাজনা আদায় করতে গেলে তাদেরকে মারপিট করা হয় এবং একজনকে আটক করা হয়। তারপর কৃষ্ণদেব রায় সশস্ত্র বাহিনীসহ তাদেরকে আক্রমণ করে এবং মসজিদ জ্বালিয়ে দেয়। (Board’s Collection 54222, p 405-6, Colvin’s Report-para 9, Dr. AR Mallick: British Policy & the Muslims in Bengal, p. 79)।

এই ঘটনার আঠারো দিন পর কৃষ্ণদেব রায় তিতুমীর ও তাঁর অনুসারীদের বিরুদ্ধে এই বলে মামলা দায়ের করে যে, তারা তার লোকজনকে মারপিট করেছে এবং তাকে ফাঁসাবার জন্যে তারা নিজেরাই মসজিদ জ্বালিয়ে দিয়েছে। (Bengal Criminal Judicial Consultations, 3 April 1832, No.6)। কৃষ্ণদেব রায় তার ইজাহারে আরও অভিযোগ করে যে, ‘নীলচাষদ্রোহী জমিদারদ্রোহী ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীদ্রোহী তিতুমীর নামক ভীষণ প্রকৃতির এক ওহাবী মুসলমান এবং তার সহস্রাধিক শিষ্য পুঁড়ার জমিদার শ্রীযুক্ত কৃষ্ণদেব রায় মহাশয়ের দু’জন বরকন্দাজ ও একজন গোমস্তাকে অন্যায় ও বেআইনীভাবে কয়েদ করিয়া গুম করিয়াছে। বহু অনুসন্ধানেও আমরা তাহাদের পাইতেছিনা। আমাদের উক্ত পাইক ও গোমস্তা সরফরাজপুর মহলের প্রজাদের নিকট খাজান আদায়ের জন্য মহলে গিয়াছিল। খাজনার টাকা লেনদেন ও ওয়াশীল সম্বন্ধে প্রজাদের সহিত বচসা হওয়ায় তিতুমীরের হুকুম মতে তাহার দলের লোকেরা আমাদের গোমস্তা পাইকদিগকে জবরদস্তি করিয়া কোথায় কয়েদ করিয়াছে তাহা জানা যাইতেছে না। তিতুমীর দম্ভভরে প্রচার করিতেছে যে, সে এদেশের রাজা। সুতরাং খাজনা আর জমিদারকে দিতে হইবেনা’। (শহীদ তিতুমীর –আবদুল গফুর সিদ্দিকী, পৃঃ ৬০)।

মামলার প্রাথমিক তদন্ত শুরু করে কলিঙ্গা ফাঁড়ির জামাদার। তার রিপোর্টে বলা হয় যে, উভয় পক্ষের অভিযোগ অত্যন্ত সংগীন। সে আরও বলে, আমি মুসলমানদের অভিযোগের বহু আলামত দেখেছি। জমিদার কৃষ্ণদেব রায়ের নায়েব তিতুমীর ও তার দলের বিরুদ্ধে যে মোকাদ্দমা দায়ের করেছে সে সম্পর্কে তদন্ত করে জানা গেল যে, যেসব কর্মচারীর অপহরণের অভিযোগ করা হয়েছে তারা সকলেই নায়েবের সঙ্গেই আছে। নায়েবের জবাব এই যে, সে মফঃস্বলে যাওয়ার পর তিতুর লোকেরা তাদেরকে ছেড়ে দিয়েছে। আমার মতে এ জটিল মামলা দুটির তদন্ত ও ফাইনাল রিপোর্টের ভার বশীরহাটের অভিজ্ঞ দারোগা রামরাম চক্রবর্তীর উপর অর্পণ করা হোক। ওদিকে বারসতের জয়েন্ট ম্যাজিষ্ট্রেট কৃষ্ণদেব রায়কে কোর্টে তলব করে জামিন দেন এবং রামরাম চক্রবর্তীকে তদন্ত করে চূড়ান্ত রিপোর্টটি দেয়ার আদেশ দেন।

রামরাম চক্রবর্তী তদন্তের নাম করে সরফরাজপুর আগমন করে তিতুমীর ও গ্রামবাসীকে অকথ্যভাষায় গালাগালি ও মারপিট করে জমিদার কৃষ্ণদেব রায়ের বাড়ীতে কয়েকদিন জামাই আদরে কাটিয়ে যে রিপোর্ট দেয় তা নিম্নরূপঃ-
১। জমিদার কৃষ্ণদেব রায়ের গোমস্তা ও পাইকারদেরকে তিতু ও তার লোকেরা বেআইনীভাবে কয়েদ করে রেখেছিল। পরে তারা কৌশলে পলায়ন করে আত্মগোপন করেছিল। পুলিশের আগমনের পর তারা আত্মপ্রকাশ করে। সুতরাং এ মামলা অচল ও বরখাস্তের যোগ্য।
২। তিতুমীর ও তার লাঠিয়ালেরা জমিদার কৃষ্ণদেব রায় ও তার পাইক বরকন্দাজদের বিরুদ্ধে খুনজখম, লুট, অগ্নিসংযোগ প্রভৃতির মিথ্যা অভিযোগ এনেছে।
৩। তিতু ও তার লোকেরা নিজেরাই নামাজঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে। অতএব এ মামলা চলতে পারে না।

ব্রিটিশদের আইন অনুসারেই অবৈধ খাজনা আদায়ের বিষয়টি হাকিমের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেনি যা ছিল সংঘর্ষের মূল কারণ। তার ফলে জমিদার শুধু মামলায় জয়লাভই করেনি, বরঞ্চ তার অবৈধ খাজনা আদায়ের কাজকে বৈধ করে দেয়া হলো। বিভাগীয় কমিশনার বলেন, জয়েন্ট ম্যাজিস্ট্রেট যে রায় দিলেন তার মধ্যে একদিকে জমিদারদের অবৈধ ও উৎপীড়নমূলক খাজনা বন্ধ করার উদ্দেশ্য ছিলনা, অপরদিকে প্রতিপক্ষের উত্তেজনাকর মনোভাব লাঘব করারও কিছু ছিল না। (Bengal Criminal Judicial Consultations, 3 April 1832, No.3; Commissioner to Deputy Secretary; 28 Nov. 1831. para 3)।

ম্যাজিস্ট্রেটের এ অবিচারমূলক রায়ের ফলে জমিদার প্রতারণামূলক ও উৎপীড়নমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সাহসী হলো। ১৭৯৯ সালের ৭ নং রেগুলেশন অনুযায়ী বকেয়া খাজনার নাম করে প্রজাদেরকে ধরে এতে আটক করার ক্ষমতা লাভ করলো। এমনকি যারা জমিদারের প্রজা নয় অথচ তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছে তাদেরকে মিছিমিছি ৩৮ টাকা বকেয়া দেখিয়ে ধরে এনে আটক করা হলো এবং তাদেরকে নানাভাবে শারীরিক শাস্তি দেয়া হলো। অতঃপর বকেয়ার একাংশ আদায় করে বাকী অংশ দিবার প্রতিশ্রুতিতে তাদের কাছে মুচলেকা রিখে নেয়া হলো যাতে করে কোর্টের আশ্রয় নিতে না পারে। (Board’s Collection, 54222, Enclosure No 4, the Colvin’s Report; Also in Bengal Criminal Judicial Consultations, 3 April 1832 No.6)।

সরফরাজপুর গ্রামের মসজিদ ধ্বংস হলো, বহু লোক হতাহত হলো, হাবিবুল্লাহ, হাফিজুল্লাহ, গোলাম নবী, রমজান আলী ও রহমান বখশের বাড়িঘর ধ্বংসস্তুপে পরিণত করা হলো, বহু ধনসম্পদ ভস্মিভূত ও লুন্ঠিত হলো, কিন্তু ইংরেজ সরকার তার কোনই প্রতিকার করলো না। সরফরাজপুর গ্রামবাসীর এবং বিশেষ করে মাওলানা তিতুমীরের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছিল বলে সকলের পরামর্শে তিনি উপরোক্ত পাঁচজন গৃহহারাসহ সরফরাজপুর থেকে ১৭ই অক্টোবরে নারকেলবাড়িয়া গ্রামে একান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও স্থানাস্তরিত হলেন। সেখান থেকেই মাওলানা তিতুমীর তার প্রতিরোধ জিহাদের ঘোষণা দেন। ২৯ শে অক্টোবর ১৮৩১ সালে কৃষ্ণদেব রায় সহস্রাধিক লাঠিয়াল ও বিভিন্ন অস্ত্রধারী গুন্ডাবাহিনীসহ নারিকেলবাড়িয়া গ্রাম আক্রমণ করে বহু নর-নারীকে মারমিট ও জখম করে। ৩০শে অক্টোবর পুলিশ ফাঁড়িতে ইজাহার হলো। কিন্তু কোনই ফল হলো না। কোন প্রকার তদন্তের জন্যেও পুলিশ এলো না।

জমিদার বাহিনীর আক্রমণে মুসলমানগণ দিশেহারা হয়ে পড়লো। তখন বাধ্য হয়ে তাদেরকে আত্মরক্ষার জন্যে প্রস্তুত হতে হলো। ৬ই নভেম্বর পুনরায় কৃষ্ণদেব রায় তার বাহিনীসহ মুসলমানদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লে প্রচণ্ড সংঘর্ষ হয় এবং উভয়পক্ষে বহু লোক হতাহত হয়। এরপর কৃষ্ণদেব রায় চারদিকে হিন্দু সমাজে প্রচার করে দেয় যে, মুসলমানরা অকারণে হিন্দুদের উপরে নির্যাতন চালাচ্ছে। তার এ ধরনের প্রচারণায় হিন্দুদের মধ্যে দারুণ উত্তেজনার সৃষ্টি হয় এবং গোবরডাঙ্গার জমিদার কালীপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় মোল্লাআঁটি নীলকুঠির ম্যানেজার ডেভিসকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে তোলে। ডেভিস প্রায় চার’শ হাবশী যোদ্ধা ও বিভিন্ন মারণাস্ত্রসহ নারিকেলবাড়িয়া আক্রমণ করে। এবারও উভয় পক্ষে বহু হতাহত হয়। ডেভিস পলায়ন করে। মুসলমানরা তার বজরা ধ্বংস করে দেয়। উক্ত ঘটনার কিছুদিন পরে গোবরা-গোবিন্দপুরের জমিদার দেবনাথ রায় এক বিরাট বাহিনীসহ নারিকেলবাড়িয়া আক্রমণ করে। প্রচন্ড যুদ্ধে দেবনাথ রায় বল্লমের আঘাতে নিহত হয়।

উপরোক্ত ঘটনার পর চতুনার জমিদার মনোহর রায় পুঁড়ার জমিদার কৃষ্ণদেব রায়ের নিকট যে পত্র লিখেন তা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তিনি লিখেন, নীলচাষের মোহ আপনাদেরকে পেয়ে বসেছে। তার ফলেই আজ আমরা দেবনাথ রায়ের ন্যায় একজন বীর পুরুষকে হারালাম। এখনো সময় আছে। আর বাড়াবাড়ি না করে তিতুমীরকে তার কাজ করতে দিন আর আপনারা আপনাদের কাজ করুন। তিতুমীর তার ধর্ম প্রচার করছে, তাতে আপনারা জোট পাকিয়ে বাধা দিচ্ছেন কেন? নীলচাষের মোহে আপনারা ইংরেজ নীলকরদের সাথে এবং পাদ্রীদের সাথে একতাবদ্ধ হয় দেশবাসী ও কৃষক সম্প্রদায়ের যে সর্বনাশ করছেন তা তারা ভুলবে কি করে? আপনারা যদি এভাবে দেশবাসীর উপর গায়ে পড়ে অত্যাচার চালাতে থাকেন তাহলে বাধ্য হয়ে আমি তিতুমীরের সাহায্যের জন্যে অগ্রসর হবো। আমি পুনরায় বলছি নীলচাষের জন্যে আপনারা দেশবাসীর অভিসম্পাত কুড়াবেন না।
-শ্রী মনোহর রায় ভূষণ (শহীদ তিতুমীর, আবদুল গফুর সিদ্দীকী পৃঃ ৭৯)।

১৮৩১ সালের ১৪ই নভেম্বর মিঃ আলেকজান্ডার একজন হাবিলদার, একজন জমাদার এবং পঞ্চাশজন বন্দুক ও তরবারিধারী সিপাহী নিয়ে নারিকেলবাড়িয়ার তিনক্রোশ দূরে বাদুড়িয়া পৌছেন। বশিরহাটের দারোগা সিপাই-জমাদারসহ বাদুড়িয়ায় আলেকজান্ডারের সাথে মিলিত হয়। উভয়ের মোট সৈন্য সংখ্যা ছিল একশ’ বিশজন। অতঃপর যে প্রচণ্ড সংঘর্ষ হয় তাতে উভয়পক্ষের লোক হতাহত হয়, গোলাম মাসুমের নেতৃত্বে মুসলমানদের বীরত্ব দেখে আলেকজান্ডার বিস্মিত হন এবং দারোগা ও একজন জমাদার মুসলমানদের হাতে বন্দী হয়। বেগতিক দেখে আলেকজান্ডার প্রাণরক্ষার্থে পলায়ন করেন। বন্দুক নিয়েও সে যাত্রায় জিততে পারেনি ব্রিটিশ এই ম্যাজিস্ট্রেট। উভয়ের পক্ষের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হলেও শেষতক জান নিয়ে পালিয়ে যান আলেকজান্ডার। তিতুমীরের হাতে বন্দী হয় এক দারোগা ও জমাদ্দার। পালিয়ে যাওয়ার সময় নদীতে ডুবে মৃত্যু হয় জমিদার কৃষ্ণদেব রায়।

জয়েন্ট ম্যাজিস্ট্রেট মিঃ আলেকজান্ডার বারাসাত প্রত্যাবর্তন করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকটে তিতুমীরকে শায়েস্তা করার আবেদন জানিয়ে রিপোর্ট পেশ করেন। কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী সরকার কর্ণেল স্টুয়ার্টকে সেনাপতি পদে নিযুক্ত করে তার অধীনে একশত ঘোড়-সওয়ার সৈন্য, তিনশত পদাতিক দেশীয় সৈন্য, দু’টি কামানসহ নারিকেলবাড়িয়ার অভিমুখে যাত্রা করার নির্দেশ দিলেন। ১৯ নভেম্বর রাত্রে কোম্পানী সৈন্য নারিকেলবাড়িয়া পৌঁছে গ্রাম অবরোধ করে রাখলো।

শত্রুর আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার জন্যে মাওলানা তিতুমীর ও তাঁর লোকেরা মজবুত বাঁশের খুঁটি দিয়ে নারিকেলবাড়িয়া ঘিরে ফেলেছিলেন যা ইতিহাসে “তিতুমীরের বাঁশেরকেল্লা” বলে অভিহিত আছে। বিশাল ইংরেজ বাহিনীর সাথে যুদ্ধে তিতুমীর শাহাদত বরণ করেন। তাঁর মৃতদেহকে ইংরেজ সৈন্যরা অমানবিকভাবে পুড়িয়ে দিয়েছিলো। তিতুমীর ও তাঁর শিষ্যদের বাড়ি-ঘর লুন্ঠন করে সেদিন ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিলো। সেনাপতি গোলাম মাসুমকে সরকার মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলো। তাছাড়া ১১ জনের যাবজ্জীবন এবং ১২৮ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ঐতিহাসিক হান্টারের মতে, ‘তিতুমীর তার অধিকৃত এলাকায় স্বাধীন শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার প্রজা আন্দোলন একটি গণবিপ্লব ছিলো। কৃষক ও তাঁতীরা এই আন্দোলনে যোগ দিয়ে জমিদার ও নীকরদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে। অত্যাচার, অবিচার ও অপমানের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তিতুমীরের নেতৃত্বে প্রজাগণ লড়াই করে আত্মসম্মান ও ন্যায় মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছিলো।

১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে নারিকেলবেড়িয়ায় তিতুমীর শহীদ হয়েছেন। তবে মাওলানা সাইয়েদ নিসার আলী ওরফে তিতুমীর, গোলাম মাসুম ও তাদের দলীয় লোকজন ভীতসন্ত্রস্ত না হয়ে অথবা প্রতিপক্ষের কাছে আনুগত্যের মস্তক অবনত না করে জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত ধীরস্থির হয়ে যেভাবে শত্রুর মুকাবিলা করে শাহাদাতের অমৃত পান করেছেন তা একদিকে যেমন ইতিহাসের অক্ষয় কীর্তিরূপে চির বিরাজমান থাকবে, অপরদিকে অসত্য ও অন্যায় উৎপীড়নের বিরুদ্ধে প্রাণপণ সংগ্রামের প্রেরণা ও চেতনা জাগ্রত রাখবে ভবিষ্যতের মানবগোষ্ঠীর জন্যে। ইতিহাস স্বীকার করতে বাধ্য যে, ভারত থেকে ইংরেজদের তাড়ানো এবং উপমহাদেশে মুসলিমদের স্বাধীন ভূমি তিতুমীরদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত। তিতুমীরেরা বাংলা ও ইসলামের জন্য এবং সর্বস্তরের মানুষের আত্মসম্মান-আত্মমর্যাদা সুপ্রতিষ্ঠিত করতে যুগে যুগে লড়াই করেছেন, রক্ত এবং প্রাণ দিয়েছেন।

সম্পর্কিত সংবাদ

নতুন কারিকুলামের নামে মাউশি’র তামাশা
জাতীয়

নতুন কারিকুলামের নামে মাউশি’র তামাশা

মার্চ ১৪, ২০২৩
আজ সাবেক মন্ত্রী মাওলানা ইউসুফের মৃত্যুবার্ষিকী
জাতীয়

আজ সাবেক মন্ত্রী মাওলানা ইউসুফের মৃত্যুবার্ষিকী

ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৩
আজ শহীদ মাওলানা তিতুমীরের জন্মবার্ষিকী
জাতীয়

আজ শহীদ মাওলানা তিতুমীরের জন্মবার্ষিকী

জানুয়ারি ২৭, ২০২৩

Discussion about this post

জনপ্রিয় সংবাদ

  • বসুন্ধরার মালিকের পরিবারে চাঞ্চল্যকর যত খুন

    বসুন্ধরার মালিকের পরিবারে চাঞ্চল্যকর যত খুন

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • মামুনুল হক স্ত্রীসহ লাঞ্ছনার ঘটনা ক্ষমতাসীনদের পূর্ব পরিকল্পিত

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • শাহ আব্দুল হান্নান : একটি নাম একটি ইতিহাস

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে নয় বিরোধিতা করে জেলে গিয়েছিল মোদি

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • আ.লীগ নেতারাই পূজা মন্ডপে কোরআন রেখেছিল

    0 shares
    Share 0 Tweet 0

সাম্প্রতিক সংবাদ

আজ শহীদ শায়খ আহমেদ ইয়াসিনের শাদাতবার্ষিকী

আজ শহীদ শায়খ আহমেদ ইয়াসিনের শাদাতবার্ষিকী

মার্চ ২২, ২০২৩
নতুন কারিকুলামের নামে মাউশি’র তামাশা

নতুন কারিকুলামের নামে মাউশি’র তামাশা

মার্চ ১৪, ২০২৩
এমন জনপ্রিয়তার দৃষ্টান্ত বাংলাদেশে অদ্বিতীয়, বিশ্বে বিরল

এমন জনপ্রিয়তার দৃষ্টান্ত বাংলাদেশে অদ্বিতীয়, বিশ্বে বিরল

ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৩
পিলখানা ট্রাজেডি, অন্তরালের কিছু কথা!

পিলখানা ট্রাজেডি, অন্তরালের কিছু কথা!

ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৩
মিরাজের রাতে কী ঘটেছিল?

মিরাজের রাতে কী ঘটেছিল?

ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৩
  • Privacy Policy

© Analysis BD

No Result
View All Result
  • মূলপাতা
  • বিশেষ অ্যানালাইসিস
  • রাজনীতি
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • মতামত
  • কলাম
  • ব্লগ থেকে

© Analysis BD