দেশের বিদ্যুৎ খাত নিয়ে নতুন করে আর কিছু বলার নাই। এটা এখন দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বিগত ১৫ বছর যাবৎ শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই খাতকে লুটপাটের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। বিশেষ করে বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়ার নাম করে শেখ হাসিনা ও তার ছেলে জয় এই খাত থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এমনকি সরকারি প্রতিবেদনেই বিদ্যুৎখাতের লুটপাট উঠে আসছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) এটাকে তাদের প্রতিবেদনে লুটেরা মডেল হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
সম্প্রতি আইএমইডি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে গত ১৪ বছরে ৯০ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ ডলার গচ্চা গেছে। বর্তমানে দেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ হচ্ছে একটি ‘লুটেরা মডেল’।
২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে বিদ্যুৎখাত থেকে লুটপাট করতে ২০১০ সালে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রæত সরবরাহ বৃদ্ধি’ নামে বিশেষ আইন করে শেখ হাসিনা। আইনটি দায়মুক্তি আইন নামেই বেশি পরিচিত। এ আইনটি বর্তমানে বিদ্যুৎ খাতে লোকসান বয়ে আনছে বলে আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, দায়মুক্তির সুযোগ দেওয়া এ আইনের বলে বিদ্যুৎ খাতের ইউনিটপ্রতি ক্রয়মূল্য ও খরচের মডেল জবাবদিহির ঊর্ধ্বে। অলস বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জসহ হিসাব করলে দেখা যায়, কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইউনিটপ্রতি বার্ষিক গড় মূল্য ১০০ টাকাও ছাড়ায়। মার্কিন ডলারে অর্থ পরিশোধ করা হয় বলে এতে পিডিবির লোকসান থামানো যাচ্ছে না। এই দুর্বৃত্তায়ন থামানো জরুরি।
জানা গেছে, বেশ কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্র বর্তমানে অলস পড়ে আছে। এগুলো ব্যবহার না হলেও এদেরকে বসিয়ে রেখে ক্যাপাসিটি চার্জ দিচ্ছে সরকার। সরকারের লোকজন প্রথম থেকেই বলে আসছে যে ক্যাপাসিটি চার্জ না দিলে বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ আসবে না। অথচ আইএমইডি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ক্যাপাসিটি চার্জ না থাকলে বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ আসবে না এমন দাবিও মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে।
আইএমইডির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি) ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে পিডিবিকে লোকসান গুনতে হবে প্রায় ১ লাখ ১৬ হাজার ৫৩২ কোটি টাকা। এর আগের ১২ বছরে সংস্থাটি লোকসান গুনেছে ১ লাখ ৫ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ ১২ বছরে বিদ্যুৎ খাতে সরকার মোট যা লোকসান করেছে, তার চেয়ে বেশি লোকসান হয়েছে গত দুই অর্থবছরে। এছাড়া দেশে স্থাপিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট সক্ষমতার মাত্র ৫৬ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। এর কারণ, জ্বালানি ও কয়লানির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ইউনিটপ্রতি বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ অনেক বেশি। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে অতিরিক্ত মূল্যে বিদ্যুৎ কিনে গ্রাহকদের সরবরাহ করতে সরকারকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ভর্তুকি দিতে হয়।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল-বাংলাদেশের এই গুরুত্বপূর্ণ খাতকে ধ্বংস করতে সরকার এটাকে ভারত ও চীনের কিছু অযোগ্য, অদক্ষ ও কারিগরি জ্ঞানহীন লোকদের হাতে তুলে দিয়েছে। এই দুর্নীতিবাজরা দীর্ঘদিন ধরেই এই খাতে লুটপাট চালাচ্ছে।
আইএমইডি তাদের প্রতিবেদনে বলছে, কারিগরি জ্ঞানহীন ও অভিজ্ঞতাহীন একদল দুর্নীতিপরায়ণ ব্যবস্থাপক ভুল ও অদূরদর্শী সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত আইন ও নীতিমালা এবং আইনি প্রক্রিয়ার দোহাই দিয়ে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতকে অযোগ্য করে রেখেছে; বিশেষ করে চীন ও ভারতীয় সরবরাহকারীদের পুনর্বাসনকেন্দ্র বানিয়ে ফেলেছে।
এছাড়া বিদ্যুৎখাত নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ নতুন নয়। দুর্নীতি-লুটপাটের জন্য যে শেখ হাসিনা বিদ্যুৎখাতকে বেছে নিয়েছে এটা প্রমাণিত। অভিযোগ রয়েছে, ২০১১ সালে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনিকে এই বিদ্যুৎখাতের দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহের কারণেই জীবন দিতে হয়েছিল। জানা গেছে, বিদ্যুৎখাত থেকে শেখ হাসিনা ও তার ছেলে জয়ের বড় ধরনের দুর্নীতির তথ্য মাছরাঙ্গা টিভির বার্তা সম্পাদক সাগর সংগ্রহ করেছিল। এই খবর শেখ হাসিনা জানার পরই তাদেরকে চিরতরে শেষ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। যাতে করে মহা দুর্নীতির খবর আর প্রকাশ না পায়।
Discussion about this post