অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক:
শেখ হাসিনা ও তার দলের নেতারা প্রায় সময়ই বলে থাকেন যে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারা জিরো টলারেন্স। কিন্তু বিষয়টা কি আসলে তাই? বাস্তবতা বলছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে নয়, যারা সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে শেখ হাসিনা তাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষনা করেছেন। ইতিমধ্যে এর অনেকগুলো প্রমাণও মিলেছে।
দেখা গেছে অতীতে যেসব কর্মকর্তারা সরকারের উপর মহলের দুর্নীতি-লুটপাটের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। তাদের সবাইকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছে। রেলওয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবির মিলন রেলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ায় তাকে প্রথমে ওএসডি ও পরে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। মাহবুব কবির মিলন একজন সৎ ও যোগ্য কর্মকর্তা ছিলেন বলেই প্রমানিত। কিন্তু সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলায় তাকে শাস্তি ভোগ করতে হয়েছে।
তারপর র্যাবের আলোচিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমকেও অন্যায়-দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় একই পরিণতি ভোগ করতে হয়েছে। বিশেষ করে দুর্নীতির বরপুত্র ও গডফাদার হিসেবে পরিচিত হাজি সেলিমের ছেলের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করায় সারোয়ারকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে ওএসডি করে রাখা হয়েছে। ঠিক একই পরিণতি ভোগ করতে হয়েছে দুদকের উপ-পরিচালক শরীফ উদ্দিনকে। আওয়ামী দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কথা বলায় তাকেও চাকরী থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রতিটি ঘটনা নিয়েও সারাদেশে প্রচন্ড সমালোচনা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও মানুষ তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
আর সর্বশেষ শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের লুটপাট-দুর্নীতির প্রধান খাত বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) মহাপরিচালক (সেক্টর –১) অতিরিক্ত সচিব হামিদুল হক ও পরিচালক উপসচিব মাহিদুর রহমানকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে সরকার।
তাদের অপরাধ হল- আলোচিত মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নকে ‘লুটেরা মডেল’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন তারা। খাতটি ভারত ও চীনের ব্যবসায়ীদের জন্য অবাধ ক্ষেত্র বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ খাত নিয়ে সমালোচনামূলক প্রতিবেদন তৈরি ও প্রকাশের পর সরকারের শীর্ষ মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে গত মন্ত্রিসভা বৈঠক ও একনেক বৈঠকেও আলোচনা হয়। এরপরই সরকারের উপর মহল থেকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়।
জানা গেছে, সরকারের এ সিদ্ধান্তে প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, হামিদুল ও মাহিদুরতাঁরা তাঁদের ওপর অর্পিত রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পেশাদারি ও নিষ্ঠার সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন, রাজনৈতিক সরকারের রাজনৈতিক লাভ-ক্ষতি, কিংবা অন্য কোনো স্বার্থগোষ্ঠীর স্বার্থ বিবেচনায় তাতে তথ্য লুকানো বা কল্পকাহিনি রচনা করেননি। রাষ্ট্রীয় স্বার্থের প্রতি আনুগত্যের কারণে শতভাগ ‘বিদ্যুতায়িত দেশে’ বিদ্যুৎ খাতের ক্যাপাসিটি চার্জ যে একটি ‘লুটেরা মডেল’, সেই সত্য তুলে ধরেছেন তারা। তারা কোনো অন্যায় করেন নি। সরকার যেটা করেছে সেটা সম্পূর্ণ অন্যায় কাজ। যেখানে তাদেরকে সততার পুরুস্কার দেয়া দরকার ছিল, সেখানে সরকার তাদেরকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছে।
এর আগে অ্যানালাইসিস বিডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল যে বিদ্যুৎখাতের এই লুটেরা মডেলের মূলহোতা হলেন শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা। বিগত ১৫ বছর ধরে এই পরিবারটি বিদ্যুৎখাতকে ব্যবহার করে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে। এখন দুইজন কর্মকর্তার বরখাস্তের মাধ্যমে প্রমাণ হল যে শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারই লুটেরা মডেলের আসল হোতা। কারণ, তারা জড়িত না থাকলে দুইজন কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার ক্ষমতা কারো নাই।
Discussion about this post