অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক:
যানজটে বিশ্বের অন্যতম শহর হিসেবে খ্যাত ঢাকা শহর। প্রতিদিন ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তায় পার করতে হয় এই শহরের জনগণের। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, ইউনিভার্সিটি কিংবা অফিস-আদালতে যেতে লম্বা সময় হাতে নিয়ে বাসা থেকে বের হয় এই শহরের মানুষেরা। শহরের উন্নয়ন হবে এটা সবাই চায়। শহরের জীবন যাত্রা আরও সহজ এবং আরও ভালো হোক এটাও সবাই চায়। কিন্তু সেই স্বপ্ন কি এই শহরের মানুষের পূরণ হবে?
আ.লীগের শাসনামলে ঢাকা জুড়ে ফ্লাইওভার, ব্রিজসহ নানা অবকাঠামোগত উন্নয়নমূলক কাজ দেখা গেছে। কিন্ত এ কাজগুলো শুধুমাত্রই কথার কথা উন্নয়ন হয়েছে। না হয়েছে সমস্যার সমাধান না স্বস্তি পেয়েছে এই ঢাকা শহরের মানুষেরা।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগে দক্ষিণবঙ্গের মানুষের স্বপ্ন ছিল গ্রামের বাড়ী থেকে গিয়ে ঢাকায় অফিস করবেন। সে আশায় গুড়েবালি। মাদারীপুর শরীয়তপুরের মানুষ ঢাকার প্রবেশ দ্বার যাত্রাবাড়ী বা কদমতলিতে আসে দেড় থেকে ২ ঘন্টায় কিন্তু সেখান থেকে ঢাকার মধ্যে নিজ গন্তব্যে পৌছতে সময় লাগে আরও প্রায় ২ থেকে আড়াই ঘন্টা। এখানে মূল সমস্যা সমাধান না করে লোক দেখানো বড় উন্নয়ন ঘটিয়েছে আ.লীগ সরকার। যেখানে খরচ হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। হয়নি সমস্যার সমাধান।
সর্বশেষ উদ্বোধনকৃত অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এক্সপ্রেসওয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত এর প্রথম অংশের উদ্বোধন হয়েছে ২ সেপ্টেম্বর। পরদিন রবিবার ৩ সেপ্টেম্বর থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনার জন্য এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণ করা হলেও তার সুফল কি সাধারণ জনগণ ভোগ করতে পারবে? অথবা ঢাকা শহরের যানজট সমস্যার সমাধানই বা হবে কি?
যানজট কমবে কি?
প্রকল্প কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ। দ্রুতগতির এই উড়াল সড়কে কাওলা, কুড়িল, মহাখালী, বনানী, তেজগাঁও ও ফার্মগেটে টোলপ্লাজা থাকবে। এই সড়কে যানবাহনের সর্বোচ্চ গতিসীমা হবে ৬০ কিলোমিটার। ফলে কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার যেতে বা আসতে সময় লাগবে ১২ থেকে ১৫ মিনিট।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বিমানবন্দর এলাকার রাস্তা ও ফার্মগেটের জ্যাম যেন বিশ্ব বিখ্যাত ব্যাপার। ঢাকায় বসবাস করেন আর এই জ্যাম সম্পর্কে অবগত নন এমন লোক খুব কমই পাওয়া যাবে। নেটিজেনরা বলছেন ১০ থেকে ১৫ মিনিটে বিমান বন্দর থেকে ফার্মগেট আসা যাবে ঠিকই কিন্তু ফার্মগেটের জ্যাম থেকে বের হতে সময় লাগতে পারে আধা ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা। তাহলে এখানে মূল সমস্যার সমাধান না করে উড়াল সেতুর উন্নয়ন করে লাভটা হলো কি? ভোগান্তি ভোগান্তিই রয়ে গেলো।
যানবাহন সমস্যা:
আসলে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে একটি এলিট শ্রেনির রাস্তা। এটা গরীব বা মধ্যবিত্তরা ব্যাবহার করতে পারবে না বললেই ধরা যায়। সাধারণত সাধারণ জনগণ নিয়মিত লোকাল বাসে যাতায়াত করেন। কেউবা লেগুনা আর অতি জরুরী হলে বাইক বা সিএনজি ব্যাবহার করেন। এখানেও রয়েছে বিধি নিষেধ। সকল প্রকার যানবাহন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে পারবে না। এক্সপ্রেসওয়ের ওপর দিয়ে পথচারীদের চলাচল এবং বাইসাইকেল চালানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আপাতত মোটরসাইকেল-অটোরিকশার মতো তিন চাকার যানবাহন চলাচল করবে না বলে জানানো হয়েছে।
তাহলে লোকাল বাস? না লোকাল বাসও এক্সপ্রেসওয়েতে উঠবে না। কারন, যে লোকাল বাস দরজায় ঝুলিয়ে গাড়িতে লোক উঠায় এবং কয়েক ফুট পর পরই যাত্রী তোলার জন্য ব্রেক দেয় সে লোকাল বাস বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট অথবা ফার্মগেট থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত একটানে কোনো যাত্রী তোলা ছাড়াই চলে যাবে কোন দু:খে! সুতরাং লোকাল বাসও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার সম্ভাবনা নাই। তাহলে এক্সপ্রেসওয়েটি ফ্রেশভাবে এলিট শ্রেনির ব্যাক্তিরাই ব্যবহার করছেন বা করবেন।
রোববার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত এ পথে মোট ২২ হাজার ৮০৫টি যানবাহন চলাচল করেছে। এরমধ্যে সিংহ ভাগ গাড়িই ছিল ব্যাক্তিগত। ছিল না লোকাল বাস, থ্রি হুইলার ও দুই চাকার যানবাহন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে সাধারণ জনগণের তেমন সুফল বয়ে আনবে না। অপরিকল্পিত উন্নয়নে হয়ত অবকাঠামোগত কিছু স্থাপনা দৃশ্যমান হতে পারে তবে মূল সমস্যার সমাধান হবে না। সাধারণ জনগনেরও লাভ হবে না।
Discussion about this post