মঈন খান
এইতো সেদিনের কথা। রকিব কমিশনের কমন বক্তব্য। নির্বাচনে যতই কারচুপি, সহিংসতা, ভোট ডাকাতি কিংবা প্রাণহানী হোক না কেন, রকিব উদ্দিন সাহেব লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে মিডিয়ার সামনে এসে বলতেন “নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে”। নতুন হুদা কমিশনও যে রকিব কমিশনের যথার্থ অনুসরণ করবে তা অনুমান করেছেন এদেশের বিবেকবান ও বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন অনেকেই। গ্রাম বাংলায় প্রচলিত প্রবাদ রয়েছে- “আগের হাল যেদিকে যায়, পেছনের হালও সেদিকে যায়।” কুসিক নির্বাচনের পর হুদা কমিশন তা আবারও দক্ষতার সাথে প্রমাণ করেছে।
২৬ প্লাটুন বিজিবি, ৩৪টি র্যাবের টিম, থানা পুলিশ, আমর্ড পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ, ব্যাটালিয়ন আনসার, জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট, নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব পর্যবেক্ষক নিয়ে কথিত কঠোর নিরাপত্তা বলয় নিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানে নামলেও হুদা কমিশনের নাকের ডগা দিয়েই চলেছে গতানুগতিক অনিয়ম।
জাল ভোট, সহিংসতা আর ভোটদানে ব্যর্থ ভোটারের আহাজারি শোনা গেছে আগের মতই। অথচ সিইসি কে এম নূরুল হুদা নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনআস্থা অর্জনে শতভাগ সফল হয়েছেন বলে দাবি করেছেন।
তার ক্ষমতা আছে, তিনি দাবি করতেই পারেন। এ নিয়ে আমার মত চুনোপুটির মন্তব্য করার সুযোগ খুবই সীমিত। কিন্তু, সারাদিনের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশাধিকার বঞ্চিত সাংবাদিকদের হাহাকার আর অনলাইন পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কথিত শতভাগ আস্থাপূর্ণ (!) নির্বাচন আসলে খুব ভালো বার্তা দিতে পারেনি।
![](https://analysisbd.com/wp-content/uploads/2017/03/ssddd.png)
ব্যালটে ইচ্ছামত নৌকা মার্কায় সিল মারার পরও যদি কোন নির্বাচনকে জনআস্থা অর্জনে শতভাগ সফল নির্বাচন বলার মত দুঃসাহস কেউ দেখাতে পারেন, তার তুলনা একমাত্র কাজী রকিবউদ্দিনই। দৈনিক প্রথম আলোর তথ্য অনুযায়ী, নৌকার ব্যাজ পরা পাঁচ থেকে সাতজনকে প্রতিটি বুথে সিল মারতে দেখা গেছে। কাছাকাছি থাকলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।
একটি ভোট কেন্দ্রে ব্যালট পেপার নিয়ে দৌড় দেয়া ব্যাক্তিকে কেবল কানে ধরে উঠবস করেই ছেড়ে দিয়েছেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা। অথচ এমন অপরাধের শাস্তি অন্তত ৭ বছরের কারাদণ্ড। যেখানেই অপরাধী সরকারি দলের কর্মী, সেখানেই কর্মকর্তারা শাস্তি প্রদানকে তাদের এখতিয়ার বহির্ভুত বলে দায় সারার চেষ্টা করেছে।
কোনো কেন্দ্রেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জালভোটে সহায়তা ব্যতিত অন্য কোনো কাছে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে দেখা যায় নি। দেখা যাবেই বা কি করে? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি বড় অংশকে তো ব্যস্ত রাখা হয়েছে কুমিল্লার কোটবাড়ি এলাকায় কথিত জঙ্গি দমনের কাজে। যেখানে মহা ক্ষমতাধর(!) এই সিইসিই নির্দেশ দিয়ে রেখেছেন নির্বাচনের আগে কোন অভিযান পরিচালনা না করতে।
![](https://analysisbd.com/wp-content/uploads/2017/03/dddddd.png)
শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য যে এই নির্বাচন কমিশন যথেষ্ট নয় তা বারবার প্রমাণিত হয়েছে। এও প্রমাণিত হয়েছে যে, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশনের চেয়ে একটি নিরপেক্ষ সরকার অনেক বেশী জরুরী। কিন্তু, সে জরুরত ক’জনই বা আমলে আনছেন?
গণতন্ত্র রক্ষায় ভোট নিয়ে কম্প্রোমাইজ করলে চলে না। জনমতের গুরুত্ব বুঝতে ব্যর্থ হলে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এমনকি জননিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়ে। একথা যত দ্রুত অনুধাবন করা যাবে ততই মঙ্গল।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট
Discussion about this post