• যোগাযোগ
সোমবার, মার্চ ২৭, ২০২৩
Analysis BD
  • মূলপাতা
  • বিশেষ অ্যানালাইসিস
  • রাজনীতি
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • মতামত
  • কলাম
  • ব্লগ থেকে
No Result
View All Result
  • মূলপাতা
  • বিশেষ অ্যানালাইসিস
  • রাজনীতি
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • মতামত
  • কলাম
  • ব্লগ থেকে
No Result
View All Result
Analysis BD
No Result
View All Result
Home কলাম

কঠিন সত্য হলো চুক্তির বাস্তবতা নেই

এপ্রিল ৪, ২০১৭
in কলাম, মতামত
Share on FacebookShare on Twitter

গৌতম দাস

‘সাবমেরিন কেনা’ ব্যাপারটা আমাদের মিডিয়ায় আস্তে আস্তে যত পেছনে চলে যাচ্ছে, ‘ডিফেন্স প্যাক্ট’ ব্যাপারটা ততই ভাসুরের নাম নেয়ার মতো আকার-ইঙ্গিত হয়ে থাকছে না, ক্রমশ স্পষ্ট হতে শুরু করেছে।

এই বিচারে পয়লা এপ্রিল ছিল ‘ডিফেন্স প্যাক্ট’-এর পক্ষে বড় ও প্রকাশ্য উচ্চারণের দিন। সংবাদ সংস্থা বাসস জানাচ্ছে, সেদিন ‘ইনস্টিটিউট অব কনফ্লিক্ট ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (আইক্ল্যাডস) আয়োজনে রাজধানীতে গোলটেবিল বৈঠক হয়েছে। সেখানে আলোচনার শুরুতে ধারণাপত্র হাজির করেন সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক মেজর জেনারেল অব: মো: আবদুর রশীদ। আগ্রহিরা মো:আবদুর রশীদ এর পুরা লেখাটা পেতে পারেন, দৈনিক সমকাল পত্রিকাতে, সেখানে পুরা লেখাটাই উনার নিজের না্মেই ছাপা হয়েছে। (দেখুন, ‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক: প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা’)।

এটাকে মূলত সরকারের পক্ষে পেশাজীবীদের সমর্থন সমাবেশ বলা যেতে পারে। মো:আবদুর রশীদ স্পষ্ট করেই বলেছেন,‘প্রতিরক্ষা সহযোগিতার অবয়ব আমরা জানি না এখনো।’ অর্থাৎ ‘ডিফেন্স প্যাক্টে’ ভারত কী প্রস্তাব করেছে তা অনেকের মতো তারও জানা নেই। ‘ডিফেন্স প্যাক্ট’ কথাটা ভারতের মিডিয়ার ভাষা। সেখান থেকে নিয়ে এখানে ব্যবহার করা হয়েছে। ওই ধারণাপত্রে্র সারকথা হলো তিনি শর্তসাপেক্ষে ‘ডিফেন্স প্যাক্ট’ স্বাক্ষরের পক্ষে। তিনি বলছেন, ‘সার্বিক বিবেচনায় বাংলাদেশের সার্বভৌম সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা খর্বের শর্ত না থাকলে এবং সামরিক জোটের ক্ষেত্র বাদ দিয়ে সামরিক সহযোগিতা হতে কোনো বাধা নেই। রাজনৈতিকভাবে বন্ধুকে সামরিকভাবে বৈরী ভাবার কোনো যুক্তি নেই।’ যার সোজা অর্থ, ‘নিজ সার্বভৌমত্ব খর্ব’ করা যাবে না, আর ভারতের সাথে কোনো ‘সামরিক জোটে’ ঢুকে পড়া যাবে না।

বলে রাখা দরকার পুঁজিতান্ত্রিক গোলকায়নের বর্তমান কালপর্বে রাষ্ট্রের তথাকথিত ‘সার্বভৌম সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা’ নামক ধারণাটাই প্রাচীন ও অন্তঃসারশূন্য। পুঁজির বিচলন ও বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র কাঠামো ও রাষ্টশক্তির যে বিবর্তন গত শতাব্দির আশির  দশক থেকে শুরু হয়েছে তাকে বিবেচনায় না নিয়ে অবাস্তব কথাবার্তা বলে লাভ নাই। দ্বিতীয়ত ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্ষমতার অসাম্য গুরুতর। বিএসএফ গুলি করে সীমান্তে বাংলাদেশীদের নির্বিচারে হত্যা করে। সেই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জনগণের নিজেদের জাতীয় প্রতিরক্ষা বা গণপ্রতিরক্ষার সুনির্দিষ্ট নীতি দাঁড় না করালে বিমূর্ত ভাবে ভারতের সঙ্গে ‘সামরিক সহযোগিতা’ কথাটাও কোন অর্থ বহন করে না। সেটা কি সহযোগিতা নাকি দাসত্বের দাসখৎ তা আমরা ফাঁপা কথাবার্তা দিয়ে বুঝব না।

তবে সামরিক সহযোগিতা নিয়ে ফিসফিসানি থেকে শুরু করে লেকশোর হোটেলের গোলটেবিল আলোচনা আমলে নিয়ে স্পষ্ট করে বলা যায়, বাংলাদেশকে ভারতের দেয়া ‘কথিত’ সামরিক চুক্তি প্রস্তাব নিয়ে চোরাগোপ্তা আলোচনাড় একটা পর্ব শেষ হোল। এখন চার মাসের শেষে আর সেটা আড়ালে আবডালে রইল না। প্রথম কিঞ্চিত সেটা প্রকাশ্য দেখতে পাওয়া শুরু হয়েছিল গত বছর ডিসেম্বরের ১ তারিখ থেকে। দেখুন, ‘সশস্ত্র বাহিনীর জন্য ভারতের নতুন প্রস্তাব’। আগ্রহিরা এবিষয়ের ৩০ নভেম্বরের ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসও দেখতে পারেন (এখানে দেখুন, Bangladesh keen to forge expanded military ties with India)।  ভারতের আনন্দবাজার ৯ ডিসেম্বর রিপোর্ট করেছিল, তাদের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও তিন বাহিনীর প্রধানসহ ১৮ জনের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে আসছে (দেখুন, ‘পিছিয়ে গেল সফর, ফেব্রুয়ারি নাগাদ আসতে পারেন হাসিনা’)। ভারতীয়দের আসার পরিপ্রেক্ষিত হিসেবে ৯ ডিসেম্বরে লেখা হয়েছিল দুই দেশের ‘সামরিক বাহিনীর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি বোঝাপড়া চুক্তি’ হওয়ার কথা। পরের সপ্তাহ থেকে আনন্দবাজারে স্পষ্ট করেই বাংলাদেশের ‘প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরের কথা উঠতে’ থাকে।

তবু, এমনকি গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ভারতের পররাষ্ট্রসচিব জয়শঙ্করের ঢাকা সফরের পরেও, আমাদের মিডিয়া প্রতিরক্ষা চুক্তি বা ‘ডিফেন্স প্যাক্ট’ নিয়ে কোনো রিপোর্ট ছেপেছে বলে দেখা যায়নি। ফলে ভারতের কথিত ‘ডিফেন্স প্যাক্ট’-এ কী আছে তা আমরা কেউই জানি না। তবে ভারতীয় মিডিয়ার বক্তব্য নিয়ে একধরনের কানাঘুষা উঠছিল। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র’কে ব্যাশিং নিয়ে। সেটা অবশ্য প্রত্যক্ষভাবে ডিফেন্স প্যাক্টে কী আছে তা নিয়ে নয়। কিন্তু গত এক সপ্তাহে আমরা দুটো গোলটেবিল হতে দেখলাম। প্রথমটা ২৮ মার্চ প্রথম আলোর আয়োজনে ( দেখুন, ‘ঢাকা–দিল্লি সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হলেও ঘাটতি আস্থায়‘); আর পরেরটা আগেই উল্লেখ করেছি। (যুগান্তরের রিপোর্টও দেখতে পারেন, ‘ভারত বিরোধিতা রাজনৈতিক কৌশল, ২ এপ্রিল ২০১৭) ‘। এতে একটা লাভ হয়েছে। য ‘ডিফেন্স প্যাক্ট’ নিয়ে ভারতের যে একটা প্রস্তাব আছে, সেটা শেষ্মেষ আমাদের মিডিয়ায় স্বীকৃতি মিলল। সরকারের সম্ভবত দ্বিধা ছিল; বিষয়টা নিয়ে খোলা আলাপ হলে তা কোথায় গড়ায় বলা মুশকিল। কিন্তু বাংলাদেশে ‘ভারতের বাংলাদেশ নীতির’ যারা সমর্থক তারাও সমস্যায় ভুগছিলেন। কারণ সরকারের পক্ষে তারা চুক্তির সমর্থনে  নামতে পারছিলেন না। ভারতীয় হাইকমিশনও সম্ভবত নিজের স্বার্থ দেখলেও এই ক্ষেত্রে কিছু করতে পারছিল না। কাজের লোকগুলোর উপযুক্ত ব্যবহার হচ্ছিল না।

তবে ১৩ মার্চ দৈনিক প্রথম আলোর মিজানুর রহমান খানের কলামটা ছিল ‘ভারতের বাংলাদেশ নীতির’ সমর্থকদের চেয়েও আরও একপেশে। (দেখুন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর, তিস্তা চুক্তি ও আত্মজিজ্ঞাসা’)।  তিনি ‘পাকিস্তানি মাইন্ডসেট’ বলে সব নষ্টের গোড়া এক শত্রু হাজির করেছিলেন। এমন কথা গোলটেবিলে আলাপেও দেখা গিয়েছিল শাহরিয়ার কবিরের বক্তব্যে ; এগুলো মূলত ভারতীয় কূটনীতির কৌশলগত বয়ান। প্রথম আলো ওই গোলটেবিলে বসে দেখতে পেয়েছে, ‘ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কটা সাম্প্রতিক ইতিহাসের যেকোনো সময়ের চেয়ে ঘনিষ্ঠ পর্যায়ে গেছে। তার পরও দুই নিকট প্রতিবেশীর সম্পর্কে আস্থার সঙ্কট লক্ষ করা যায়’। ‘ভারতের বাংলাদেশ নীতি’র কোনো সমর্থক যখন ‘পারস্পরিক আস্থার সঙ্কট’ দেখতে পান, তখন এটা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ মানতেই হয়। প্রথম আলোর গোলটেবিলের সার মূল্যায়ন হলো, ‘ডিফেন্স প্যাক্ট’ অপ্রয়োজনীয়। ওপরে প্রথম আলোর রেফারেন্সেই দেখুন, নিজেই লিখেছে এভাবে: ‘কোন প্রেক্ষাপটে, কী প্রয়োজনে প্রতিরক্ষা চুক্তি বা সহযোগিতার রূপরেখা হচ্ছে, তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।’

এরপরেও যেটা দুঃসংবাদ হয়ে এখনো রয়ে গেছে তা হলো, যেটাকে শুধু ‘ডিফেন্স প্যাক্ট’ বলে এক অস্পষ্ট বোঝাবুঝির মধ্যে রাখছি তা পুরো ইস্যুটার খুবই ক্ষুদ্র অংশ। পুরা ইস্যুটা আসলে কেবল বাংলাদেশ তো নয়ই, সাথে ভারতকে নিয়েও নয়; রিজিওনাল! আঞ্চলিক তো বটেই, বরং আরো কিছু। বিষয়টি আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। দিল্লির খায়েশ কিম্বা বাংলাদেশের আকুতি দিয়ে বোঝা যাবে না। এমনকি আগামীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা ভারত সমর্থন করবে কি না তার মধ্যেও এর তাৎপর্য সীমিত নয়।

বাংলাদেশে কে ক্ষমতায় থাকবে ভারতের কেবল এতটুকুর নির্ণায়ক হওয়ার মধ্যেও বিষয়টা সীমিত না।  তা আর যথেষ্ট হচ্ছে না। এত দিন তো ভারত নির্ণায়ক হয়েই ছিল। গত বছরের অক্টোবর মাসে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। ভারত সরকারের সস্তা জাতীয়তাবাদে তাল দিতে ভারতের মিডিয়া সারাক্ষণ চীনা ব্যাশিং করে থাকে। ওদিকে আবার ভারতের প্রতিটা রাজ্য সরকার কিভাবে গুজরাটের মতো চীনের সাথে বিশেষ সম্পর্ক পাতিয়ে নিজ রাজ্যে বিনিয়োগ-বাণিজ্য আনবে তার জন্য উদগ্রীব আর পরস্পর প্রতিযোগী। ভারতীয় সাংবাদিক সুবীর ভৌমিকই আমাদের তা জানিয়েছেন। ভারতের সাবেক কূটনীতিক বীণা সিক্রি থেকে শুরু করে এনডিটিভির অ্যাঙ্কর-সাংবাদিক বরখা দত্ত, সবাই পাবলিক আলোচনায় এটা উল্লেখ করতে ভোলেন না যে, তাদের ফ্রেন্ডলি এক সরকার বাংলাদেশে বসানো আছে। এনডিটিভিতে চীনা প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরকে মাথায় রেখে বরখার অ্যাঙ্করে এক টকশোর আয়োজন করা হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল, একটা ধাঁধার উত্তর জানা। তারা সবাই জানেন, বাংলাদেশে তাদের পছন্দের একটা সরকার আছে। তাহলে এখানে চীনা প্রেসিডেন্ট সফরে আসেন কেমনে? তার সঙ্গে হাসিনার এত কী খাতির? তাইলে কি তাদের ‘ফ্রেন্ডলি সরকার’ ধারণাটা ভুল? এই ধাঁধার জবাব কী? ইতোমধ্যে তারা জেনে গেছেন যে প্রেসিডেন্ট শি ওই সফরে বাংলাদেশকে ২৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ দিতে আসছেন। ফলে ওই টকশোর কনক্লুশন হলো, ভারত তো আসলে ‘অবকাঠামো উন্নয়নের বিনিয়োগ’ গ্রহীতা দেশ। সে নিজেও চীন থেকে ‘অবকাঠামো উন্নয়নের বিনিয়োগ’ নিচ্ছে। ফলে ২৪ বিলিয়নের তুলনায় ভারতের ২-৩ বিলিয়ন (তাও অবকাঠামো খাতে নয়, টাটার স্টিলে তৈরি বাস বা রেল পণ্য বিক্রির খাতে) বাংলাদেশে বিনিয়োগ – এই দুইটা ফিগার কি তুলনীয়? কোনোভাবেই না। ব্যাপার হলো, এই খাতে বাংলাদেশে চীনের ভূমিকা ও প্রয়োজন ভারতের সাথে তুলনীয়ই নয়। এটা সেদিন অন্তত টকশোর লোকেরা বুঝেছিলেন। কথা আরো আছে; পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগকে কেন্দ্র করে এখন বড় প্রজেক্টে বিশ্বব্যাংককে বাদ রেখেই অবকাঠামোর জন্য বিকল্প বিনিয়োগ সরকার চীন থেকে জোগাড় করে চলেছে। তাহলে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।

লক্ষণীয় যে, নির্বাচনের সাথে ক্ষমতায় থাকা- এটাও আর সম্পর্কিত নয়। এই সরকার নিজেই এমন ‘নীতি’ চালু করেছে। সরকারের নতুন স্লোগান হলো, ‘ভালো নির্বাচন নয়; মূল কথা হলো মালয়েশিয়ার মতো উন্নয়ন।’ এই সরকার নাকি উন্নয়নে চ্যাম্পিয়ন। তাই সব ঠিক আছে। এই স্লোগান সরকার তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে এ জন্য যে, ভারতের কথা শুনে সে চীনকে হারায়নি বলে। চীনের সাথে খাতির রেখে বিনিয়োগ এনেছে। উল্টা বিশ্বব্যাংককে কলা দেখিয়ে মামলা প্রত্যাহার করতেও বাধ্য করেছে। ফলে শেখ হাসিনার ক্ষমতার উৎস কাকাবাবু- এ কথার সবটা সত্যি নয়। ‘উন্নয়নের’ স্লোগান চালু রাখতে গেলে কাকাবাবু না, শিং জিন পিংকেই দরকার। এটা প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে বেশি ভালো আর কে বোঝে? ফলে যারা ছদ্ম হাসিনাপ্রেমী সেজে ডিফেন্স প্যাক্ট করতে সমর্থন জোগাতে মাঠে নেমেছেন অথবা আস্থাহীনতা দেখছেন এরা কেউ সরকারের সমস্যা বুঝে কথা বলছেন, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই।

সম্প্রতি চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী নেপাল ও শ্রীলঙ্কা সফর করে গেলেন। বাংলাদেশেও আসার কথা ছিল। তা হয়নি। চীনের গ্লোবাল টাইমস গত ২১ জুন চীনা সাংবাদিক আই জুনের লেখা চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ওই সফর নিয়ে এক রিপোর্ট ছাপে। শিরোনাম ছিল, সাউথ-ইস্ট এশিয়ায় বিভিন্ন রাষ্ট্রের সাথে চীনের সংশ্লিষ্ট হওয়া নিয়ে ভারত অহেতুক অস্থির হয় (India over-sensitive on China’s engagement in South Asia) রিপোর্টে বহু কথা চাঁচাছোলা ভাষায় বলা। ওর কনক্লুশন বক্তব্য হলো, চীন পালটা লড়াই করবে। বলছে, ভারত বাধা সৃষ্টি করলে তাকে এমন জবাব দিতে হবে, যাতে ভারতের চুল্কানি রোগ কমে।  কারণ এটা চীনের মূল স্বার্থ। মূলত চীনের সাথে এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোর অর্থনৈতিক বিনিয়োগ বাণিজ্যের সম্পর্ক।

তবে কথাটা আবার এক বড় প্রেক্ষাপট থেকে বলা। সেটা হলো চীনের ‘এক বেল্ট, এক সড়ক’ প্রজেক্ট। সাউথ-ইস্ট এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোর কারা এই ‘সড়ক ও গভীর সমুদ্র যোগাযোগের প্রজেক্টে’ যুক্ত হতে চায়- চীনের কাছে সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চিনের জন্য এখনকার সময়টা হলো সবার কাছে এক বেল্ট এক সড়ক প্রকল্পের  সুবিধা ফেরি করা। স্বল্পসুদে লম্বা সময়ের এই অবকাঠামো ঋণ চীন সবাইকে দিতে চায়। এমনকি ভারতকেও। বাংলাদেশকেও। গত সপ্তাহে নেপালের মাওবাদী প্রধানমন্ত্রী এই প্রজেক্টে যোগদানের ঘোষণা দিয়েছেন। শ্রীলঙ্কাও চিন্তা করছে। আর পাকিস্তান ইতোমধ্যে ৪৬ বিলিয়ন ডলারের চীনা প্রজেক্ট নিয়েছে যা এতে অন্তর্ভুক্ত। বেল্ট প্রজেক্টকে চীন তার সবচেয়ে বড় কৌশলগত স্বার্থ মনে করে। এই প্রজেক্ট অর্থনৈতিক। কিন্তু এত বিশাল প্রজেক্ট বিশাল বলেই একই সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ। ফলে এর প্রতিরক্ষারও একটা ব্যবস্থা রাখা জরুরি। সেই সূত্রে চিনের কাছ থেকে যারা ঋণ নেয় সেই ঋণ গ্রহীতা রাষ্ট্রগুলোর প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়তে তাদের অর্থনীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রতিরক্ষা-সাহায্য চীনকে করতে হবে। ফলে অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বিনিয়োগ একই সঙ্গে চিনের প্রতিরক্ষা নীতির নির্ণায়কও হয়ে ওঠে। এটাই স্বভাবিক। বিনিয়োগের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যে কোন রাষ্ট্রই নিজের দায় মনে করে। এখন ভারত যদি চিনের সঙ্গে কোন রাষ্ট্রের বিনিয়োগের সম্পর্ক গড়ে ওঠার কারনে ঈর্ষান্বিত হয়ে খামাখা পুরা সাউথ-ইস্ট এশিয়াকে নিজের বাড়ির পেছনের আপন বাগানবাড়ি মনে করে আর সেভাবেই আচরণ করে তো চিন ফাইটব্যাক করবেই। ভাবুন, আজ পর্যন্ত ল্যান্ডলকড ভুটানের সাথে চীনের কূটনৈতিক সম্পর্ক পর্যন্ত হতে দেয়নি ভারত, এভাবে যদি চলতে থাকে তবে চীনকে ফাইটব্যাক করতেই হবে।

অর্থনৈতিক মুরোদ না থাকলেও সবাইকে নাকি চীনের সাথে ভারসাম্য বজায় রেখে সম্পর্ক করত হবে ভারত এই দাবি করে। চীনের প্রতি পড়শি রাষ্ট্রগুলোর নিউট্রাল অবস্থানকেও ভারত চীনের দিকে ঝুঁকে পড়া মনে করে। বল কিন্তু ভারতের কোর্টে, যা করার সে কী করবে সে সিদ্ধান্ত ভারতকেই নিতে হবে। ভারতের কৌশলগত বিষয় ও নীতি নিয়ে গবেষণা করে এমন থিংকট্যাংকগুলোর বড় অংশটাই আমেরিকান ফান্ডেড। এরই অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হলেন সি রাজামোহন। তিনি ‘কার্নেগি এন্ডোমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস’- ওয়াশিংটনভিত্তিক এই আন্তর্জাতিক থিংকট্যাংকের ইন্ডিয়ান শাখা ‘কার্নেগি ইন্ডিয়ার’ ডিরেক্টর। তিনি এখন নিয়মিত ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এ কলাম লিখেন ম্যানডেলা শিরোনামে। তিনি গ্লোবাল টাইমসের ওই রিপোর্ট নিয়ে লিখেছেন নিজের কলামে। রাজামোহন খুবই হতাশা ব্যক্ত করে নিজের লেখার শিরোনাম দিয়েছেন, ‘প্রতিরক্ষা কূটনীতিতে দিল্লির প্রস্তুতি নেই।’ ওই কলামের শেষ প্যারাটা অনুবাদ করে দিচ্ছি যেখান থেকে তার কথার একটা সারবক্তব্য পাওয়া যাবে। প্রথম আলোর অনুবাদটাই এডিট করেছি এখানে।

‘… গ্লোবাল টাইমস নয়া দিল্লিকে উপদেশ দিয়েছে, ভারতের প্রতিবেশীদের সঙ্গে চীনের ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের ব্যাপারটি দিল্লিকে মেনে নিতে হবে। এসব দেশে বেশি বেশি চীনা প্রতিষ্ঠান শিকড় গাড়তে শুরু করলে চীন অনিবার্যভাবেই তাদের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি করবে। শুধু চীনের নয়,এই অঞ্চলের স্বার্থ রক্ষার্থেও তাদের এটা করতে হবে।’

ভারত দেরিতে হলেও এই ব্যাপারটা আমলে নিতে শুরু করেছে। দিল্লি এখন বুঝতে পারছে, প্রতিবেশীদের সঙ্গে চীনের বাণিজ্যিক ও অবকাঠামোগত সহায়তা বাড়তে থাকলে এর কৌশলগত রূপও দেখা যাবে, যার মধ্যে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা অংশীদারিও থাকতে পারে। কংগ্রেস সরকার চীনের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড প্রকল্পকে আপত্তিসহকারে মেনে নিলেও নরেন্দ্র মোদির সরকার তা প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর সম্পর্কেও সমালোচনামুখর হয়ে উঠেছে। ভারত আন্তঃসীমান্ত যোগাযোগ ও প্রতিরক্ষা কূটনীতিও জোরদার করেছে। এতে বেইজিং ও দিল্লির মধ্যে রাজনৈতিক সঙ্ঘাত বাড়বে। ভারত যে উপমহাদেশে চীনের ক্ষমতা বিস্তারের ব্যাপারে এত দিন পরে কার্যকরভাবে সাড়া দিলো, সেটাই বরং বিস্ময়ের ব্যাপার। পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের বহু দিনের সামরিক সম্পর্ক। দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোতে ক্রমবর্ধমান হারে চীনের অস্ত্র বিক্রিকে ভারত এত দিন ভালোভাবে না নিলেও তারা আশপাশের দেশগুলোতে চীনের কৌশলগত প্রভাব বৃদ্ধির ব্যাপারে একেবারেই অপ্রস্তুত ছিল। দিল্লি অনেক দিন থেকেই উপমহাদেশে নিজের স্বাভাবিক শক্তি সম্পর্কে আত্মসন্তুষ্ট ছিল।

স্বাধীনতার পর ভারত তার আশপাশে পশ্চিমা, বিশেষ করে ইঙ্গ-মার্কিন সামরিক প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন ১৯৮০ সালে আফগানিস্তান দখল করে নেয়, তখন সে খুবই সতর্কতার সঙ্গে ব্যাপারটা পর্যবেক্ষণ করেছে। কিন্তু বহু দূরের যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত প্রভাব আজ ২১ শতকে ক্ষয়ে যাচ্ছে। এখন চীনের সামরিক শক্তি ভারতকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি দেশীয় অস্ত্র উৎপাদন ও রফতানির কথা বলেছেন, কিন্তু প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আলস্য দূর করাতে পারেননি।

এমনকি তিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে প্রতিরক্ষা কূটনীতির ব্যাপারটা গ্রহণ করাতে পারেননি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সামরিক বাহিনী বারবার অনুনয়-বিনয় করা সত্ত্বেও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে ব্যাপক পরিসরে সামরিক বিনিময় করতে পারেনি। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মনোভঙ্গি না বদলালে ‘ভারতীয় আঞ্চলিক আধিপত্য’ ও ‘উপমহাদেশের কৌশলগত একতা’ নিয়ে দিল্লির বাগাড়ম্বর দূর করতে বেইজিংয়ের তেমন একটা বেগ পেতে হবে না।

বড় বড় হামবড়া কথার বিরুদ্ধে গ্রাম দেশে একটা কথা প্রচলিত আছে, ‘ট্যাকা লাগব চাচা! এমনি হইব না!’ আমাদের প্রধানমন্ত্রী এই সমগ্র দিক সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো ওয়াকিবহাল। আমাদের গোলটেবিল-ওয়ালারা চুক্তি করার হাওয়াই সাহস দিচ্ছেন তাকে। কঠিন সত্যিটা হলো, চুক্তির বাস্তবতাই নেই- এটা তাদের কে বুঝাবে!

লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক

goutamdas1958@hotmail.com

সম্পর্কিত সংবাদ

স্বাধীনভাবে ভোটার হওয়ার অধিকার আর থাকছে না
মতামত

স্বাধীনভাবে ভোটার হওয়ার অধিকার আর থাকছে না

অক্টোবর ১২, ২০২২
টি২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশ: ব্যর্থতার ১১ কারন
Home Post

টি২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশ: ব্যর্থতার ১১ কারন

সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২২
খুনের নেশায় মত্ত হাসিনা
slide

ইস্যু ডাইভার্টে শেখ হাসিনার নাটকীয়তা!

আগস্ট ১৯, ২০২২

Discussion about this post

জনপ্রিয় সংবাদ

  • বসুন্ধরার মালিকের পরিবারে চাঞ্চল্যকর যত খুন

    বসুন্ধরার মালিকের পরিবারে চাঞ্চল্যকর যত খুন

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • মামুনুল হক স্ত্রীসহ লাঞ্ছনার ঘটনা ক্ষমতাসীনদের পূর্ব পরিকল্পিত

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • শাহ আব্দুল হান্নান : একটি নাম একটি ইতিহাস

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে নয় বিরোধিতা করে জেলে গিয়েছিল মোদি

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • আ.লীগ নেতারাই পূজা মন্ডপে কোরআন রেখেছিল

    0 shares
    Share 0 Tweet 0

সাম্প্রতিক সংবাদ

মন্ত্রীর আশ্রয়ে সোনা চোরাচালান

মন্ত্রীর আশ্রয়ে সোনা চোরাচালান

মার্চ ২৫, ২০২৩
আজ শহীদ শায়খ আহমেদ ইয়াসিনের শাদাতবার্ষিকী

আজ শহীদ শায়খ আহমেদ ইয়াসিনের শাদাতবার্ষিকী

মার্চ ২২, ২০২৩
নতুন কারিকুলামের নামে মাউশি’র তামাশা

নতুন কারিকুলামের নামে মাউশি’র তামাশা

মার্চ ১৪, ২০২৩
এমন জনপ্রিয়তার দৃষ্টান্ত বাংলাদেশে অদ্বিতীয়, বিশ্বে বিরল

এমন জনপ্রিয়তার দৃষ্টান্ত বাংলাদেশে অদ্বিতীয়, বিশ্বে বিরল

ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৩
পিলখানা ট্রাজেডি, অন্তরালের কিছু কথা!

পিলখানা ট্রাজেডি, অন্তরালের কিছু কথা!

ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৩
  • Privacy Policy

© Analysis BD

No Result
View All Result
  • মূলপাতা
  • বিশেষ অ্যানালাইসিস
  • রাজনীতি
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • মতামত
  • কলাম
  • ব্লগ থেকে

© Analysis BD