অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টেস্টের বাংলাদেশ দলে রাখা হয়নি মুমিনুলকে। সাম্প্রতিক ফর্ম শুরুর মত দুর্দান্ত না হলেও তার ব্যাটিং গড় এখনও দলের সেরা। সবশেষ দুই টেস্টে ভালো করতে পারেননি বটে। তবে তার আগের টেস্টেই ওয়েলিংটনের কঠিন কন্ডিশনে খেলেছেন ৬৪ রানের ইনিংস। দেশের মাটিতে সবশেষ টেস্টেও করেছিলেন ৬৬। তামিম ইকবালের সঙ্গে তার জুটি বড় ভুমিকা রেখেছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দলের দারুণ জয়ে।
মুমিনুলের বাদ পড়া তাই জন্ম দিল অনেক প্রশ্নের। সংবাদ সম্মেলনে ১৯টি প্রশ্ন করা হয়েছে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীনকে। ১৩টিই ছিল একজনকে নিয়ে। কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহের কাছে প্রশ্ন ছিল ১৩টি। ১০টি সেই একজনকে নিয়েই। সেই একজন হলেন মুমিনুল হক।
গুঞ্জন আছে, কোচের চাওয়ার কারণেই দলে নেই মুমিনুল। সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন সরাসরি না বললেও “দল নির্বাচনে কোচও ছিলেন” বলে মুমিনুলের বাদ পড়ার প্রশ্নে ইঙ্গিত দিয়েছেন বারবার। প্রশ্নে প্রশ্নে জর্জরিত হাথুরুসিংহে এক পর্যায়ে বিরক্ত কণ্ঠে দিলেন জবাব।
“এসব প্রশ্ন তুলে আপনারা ক্রিকেটারদের কাজটাই কঠিন করে তুলছেন। কোনো ক্রিকেটারের প্রতি আমাদের কোনো অনুরাগ নেই। আমরা সেরা ক্রিকেটারদেরই নেওয়ার চেষ্টা করি এবং তাদের সেরাটা বের করে আনার চেষ্টা করি।”
২০১৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে আচমকাই কোচ বলেছিলেন, শর্ট বলে দুর্বলতা আছে মুমিনুলের। গত শ্রীলঙ্কা সফরে গল টেস্টে দুই ইনিংসে দিলরুয়ান পেরেরার বলে আউট হওয়ার পর প্রশ্ন তোলেন অফ স্পিনে মুমিনুলের সক্ষমতা নিয়েও। প্রথম ৭ টেস্টে যার ছিল তিনটি সেঞ্চুরি, হাথুরুসিংহে কোচ হয়ে আসার পর তার ১৫ টেস্টে সেঞ্চুরি একটি। হাথুরুসিংহে কোচ হওয়ার আগে মুমিনুলের টেস্ট গড় ছিল ৭৫.৫০। হাথুরুসিংহের জমানায় গড় ৩৫.৮৮।
একজন ক্রিকেটার ভালো খেলেছেন মানে তার প্রতিভা ও সামর্থ্য আছে এই পর্যায়ে ভালো করার। হুট করে ফর্ম হারালে বা ভুল করতে থাকলে সেটি শোধরানোর মূল দায়িত্ব কোচের। মুমিনুলের সমস্যা কাটাতে কোচ হিসেবে হাথুরুসিংহে কতটা কাজ করেছেন, সেই প্রশ্নও উঠল। এখনকার ভুলগুলো শুধরে দেওয়ায় কোচের ব্যর্থতা কতটুকু? কিছুটা নিজে নিলেও দায় বেশিরভাগটা মুমিনুলকেই দিলেন কোচ।
মুমিনুলকে নিয়ে প্রশ্নের তোড়ে জর্জরিত প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন এক পর্যায়ে সংবাদকর্মীদের উদ্দেশে বললেন, “আপনারা যদি নিয়ে যদি এভাবে জিজ্ঞেস করেন, তাহলে কিন্তু উত্তর দিতে পারব না…একজনকে নিয়ে এভাবে জিজ্ঞেস করতে পারবেন না।” প্রধান নির্বাচক হয়ত ভুলে গিয়েছিলেন, একজনকে নিয়ে এভাবে প্রশ্নের ঝড় না তুললে বিশ্বকাপ খেলা হতো না তার নিজেরই!
১৯৯৯ বিশ্বকাপের বাংলাদেশ স্কোয়াডে শুরুতে ছিলেন না মিনহাজুল। দেশের সংবাদমাধ্যমের তীব্র সমালোচনার মুখে পরে সেই সিদ্ধান্ত বদলে যায়। আগে ঘোষিত দল থেকে উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান জাহাঙ্গির আলমকে বাইরে রেখে মিনহাজুলকে দলে আনা হয়। মিনহাজুল পরে সেটির প্রতিদান দিয়েছিলেন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম জয়ে ম্যাচ সেরা হয়ে।
কিন্তু নিজে যখন নির্বাচকের ভূমিকায়, ১৮ বছর আগের প্রাপ্তির প্রতিদান কতটুকু ফিরিযে দিতে পারলেন মিনহাজুল? কোচের শক্ত ভূমিকা যদি থেকেও থাকে, প্রধান নির্বাচক পারতেন পাল্টা যুক্তি ও দাবিতে শক্ত থাকতে।
এবার আসা যাক অধিনায়কের কথায়। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, শ্রীলঙ্কা সফর থেকে ফেরত পাঠানো হচ্ছিলো মাহমুদউল্লাহকে। টেস্টের পর ওয়ানডে থেকেও বাদ দেওয়ার আয়োজন করা হয়েছিল। সে সময় জোর লড়াই করেছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। গো ধরেছিলেন, মাহমুদউল্লাহ দলে না থাকলে যাবেন না শ্রীলঙ্কায়।
শুধু শ্রীলঙ্কা সফরই নয়, মাশরাফির ভাবনায় ছিল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিও। ওয়ানডেতে এমন একজনের অভিজ্ঞতা হারাতে চাননি অধিনায়ক। সেই প্রতিদান মিলেছে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে, প্রতিদান মিলেছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। মুমিনুলের জন্য টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম কি ততটা লড়াই করেছেন? নির্বাচক প্যানেল বা কোচ যতোই চান, অধিনায়ক কাউকে প্রবলভাবে চাইলে পেতে পারেন, সেই নজির মাশরাফি আগেও রেখেছেন। মুশফিক কি রাখতে পারছেন? এখনও তিনি চাইলে মুমিনুলকে ফেরাতে পারেন প্রথম টেষ্ট স্কোয়াডে।
গোটা ক্রিকেট দুনিয়াতেই কখনও কখনও কারও কারও জন্য থাকে আলাদা কিছু। বাংলাদেশ দলে আগেও ছিল সেই ব্যবস্থা, ছিল হাথুরুসিংহের সময়ও। সেটা যৌক্তিকও। বিশেষ প্রতিভার জন্য থাকে বিশেষ ব্যবস্থা। তাদের পরিচর্যা হতে হয় নিবিড়। বাংলাদেশের জন্য টেস্টে সেই বিশেষ প্রতিভা মুমিনুল। টেস্ট স্পেশালিস্টের তকমা এই কোচই দিয়েছিলেন। কিন্তু কী পেলেন? বিশেষ ব্যবস্থা তো অনেক দূর, মুমিনুল পেলেন না প্রাপ্যটিই!
Discussion about this post