মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে এক রাতে ৩০টি পুলিশ পোস্টে হামলার ঘটনার পর উত্তেজনা আর শঙ্কার মধ্যে কক্সবাজার সীমান্তে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঢল নেমেছে।
উখিয়ার পালংখালী সীমান্ত দিয়ে শুক্রবার বাংলাদেশে প্রবেশের পর নাফ নদীর প্রায় চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীরে বসে আছে সহায় সম্বলহীন কয়েক হাজার মানুষ।
তারা যাতে কক্সবাজারের ভেতের ঢুকতে না পারে সেজন্য দূরে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিজিবি। আগের রাতে অনুপ্রবেশের চেষ্টার সময় আটক ১৪৬ জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে মিয়ানমারে।
বিজিবির টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফুল ইসলাম বলেছেন, মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধির পর গত সপ্তাহেই সীমান্তে নজরদারি বাড়িয়েছিলেন তারা। বৃহস্পতিবার রাতে রাখাইনের ঘটনার পর সতর্কতা আরও বাড়ানো হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে কয়েক লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করে আসছে বাংলাদেশ। গত বছরের শেষ দিকে রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন অভিযান শুরু হলে আরও ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে প্রবেশ করে বলে শরণার্থী বিষয়ক বিভিন্ন সংস্থার তথ্য।
এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন গ্রামে ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ক্যাম্পে সমন্বিতভাবে হামলার ঘটনা ঘটে, যার দায় স্বীকার করেছে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি নামে একটি সংগঠন।
মিয়ানমার সরকারের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতের ওই হামলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১২ সদস্য সহ অন্তত ৭১ জন নিহত হয়েছে।
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শরণার্থী মোহাম্মদ শফি রয়টার্সকে জানিয়েছেন, মিয়ানমারে তার খালাতো ভাইয়ের কাছ থেকে যে খবর তারা পাচ্ছেন, তাতে পরিস্থিতি খুবই খারাপ।
“চারদিকে কেবল সেনাবাহিনী। অনেক মানুষ মারা গেছে, লোকজন কাঁদছে। খুব খারাপের দিকে যাচ্ছে সব।”
মিয়ানমার সরকার দিন দশেক আগে রাখাইনে বিপুল সংখ্যক সেনা নামানোর পর থেকে বহু রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে বলে রয়টার্সের তথ্য।
বিজিবি কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে নাফ নদী হয়ে নৌকায় করে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টার সময় ১৪৬ জন রোহিঙ্গাকে তারা আটক করেন। পরে তাদের খাবার ও পানি দিয়ে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়।
উখিয়ার স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রাতে সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের ভেতরে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়। এরপর শুক্রবার ভোর থেকে সীমান্তে রোহিঙ্গাদের চাপ বাড়তে থাকে। রহমত বিল থেকে শুরু করে কয়েক কিলোমিটার এলাকায় নাফ নদী পেরিয়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পালংখালী ইউনিয়নে সীমান্তের এপারে নাফ নদীর তীরে লাইন ধরে বসে আছে রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ, শিশু। এপাশে মাছের ঘের, জলাশয় ও খোলা জমি পেরিয়ে তারা লোকালয়ের দিকে আসতে পারছে না। আর এদিকে মোটামুটি এক কিলোমিটার দূরত্বে সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন বিজিবি সদস্যরা। তাদের সঙ্গে আছে গ্রাম পুলিশ ও স্থানীয় জনতা।
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোজাফ্ফর আহমেদ বলেন, “সেনাবাহিনী নির্যাতনের ভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে এরা এসেছে। প্রায় চার কিলোমিটার এলাকায় নদী তীরে এভাবে বসে আছে তিন থেকে চার হাজার রোহিঙ্গা, কখন ভেতরে ঢোকা যাবে- এই আশায়।”
কক্সবাজার ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঞ্জুরুল আহসান খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা এদের ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করব। আর যাতে কেউ না আসতে পারে সেজন্য আমাদের নজরদারি ও টহল জোরদার করা হয়েছে।”
সূত্র: বিডি নিউজ
Discussion about this post