রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ আজ রোববার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরদোগানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তিনি মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য জাতিসংঘের উদ্যোগে এবং ওআইসির মতো সংগঠনগুলোর সহায়তায় একটি ‘নিরাপদ অঞ্চল’ গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছেন।
আজ কাজাখস্তানের রাজধানী আস্তানাতে ওআইসির প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্মেলনের ফাঁকে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এরদোগানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় এই বৈঠকে আবদুল হামিদ বলেন, ‘মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করতে মিয়ানমারের এই বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর জন্য জাতিসংঘ অথবা ওআইসি ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা পরিচালিত একটি নিরাপদ অঞ্চল গড়ে তোলা যেতে পারে।’
রাষ্ট্রপতি মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান।
আবদুল হামিদ বলেন, নিপীড়ন থেকে বাঁচার জন্য মিয়ানমার থেকে বিপুল রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসছে। এই জনস্রোতে ঘন জনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশের আর্থসামাজিক ও পরিবেশের জন্য বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করছে।
রাষ্ট্রপতি মিয়ানমারের নাগরিকদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে এবং পূর্বপুরুষের ভূমিতে তাদের সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করতে দেশটির সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগে তুরস্কের নেতার পাশাপাশি বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান।
এ সময় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেখতে সম্প্রতি তুরস্কের ফার্স্ট লেডি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের জন্য এরদোগানকে ধন্যবাদ জানান।
রোহিঙ্গারা বিগত কয়েক বছর থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে কক্সবাজারে আশ্রয় নিচ্ছে। সর্বশেষ গত ২৫ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া চলমান সহিংসতায় প্রায় ৩ লাখ শরণার্থী নতুন করে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।
রাষ্ট্রপতি ওআইসি সম্মেলনে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেওয়ায় তুরস্কের প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানান।
প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলেন, তুরস্ক এরই মধ্যে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তায় বাংলাদেশে এক হাজার টন মানবিক সাহায্য পাঠিয়েছে। তিনি অবিলম্বে আরো ১০ হাজার টন ত্রাণ সাহায্য পাঠাবেন বলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিকে আশ্বাস দেন।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য অন্যান্য দেশগুলোও যেন সাহায্যের হাত প্রসারিত করতে পারে সে জন্য ইস্তাম্বুল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলে জানান এরদোগান।
বৈঠকে বাংলাদেশ ও তুরস্কের সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। বিশেষ করে একবিংশ শতাব্দীতে দ্রুত এই অগ্রগতির ফলে সমাজে কাজকর্ম ও যোগাযোগ বৃদ্ধি, সময় ও দূরত্বের প্রতিবন্ধকতা দূর এবং গতি ও উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, প্রযুক্তি উন্নয়নের মাধ্যমে একটি জাতি বদলে যেতে পারে এবং একই সঙ্গে প্রযুক্তিতে এগিয়ে থাকা ও প্রযুক্তির উদ্ভাবনে অন্যের প্রতিযোগিতাও হতে পারে।
রাষ্ট্রপতি হামিদ মনে করেন, ‘পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক উদ্ভাবন কাউকে পেছনে ফেলে দেয় এবং বিভাজন সৃষ্টি করে কাউকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।’
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বিজ্ঞানসম্মত জীবনের আলোকে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্ব নিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, অতীতে একসময়ে মুসলমানরা জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নয়ন ও উদ্ভাবনে নেতৃত্ব দিতো, যার সুফল একদিন তারা ভোগ করেছে, সেই ঐতিহ্য আমাদের ফিরিয়ে আনতে হবে।
আস্তানায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট নুরসুলতান নাজারবায়েভ, ওআইসি মহাসচিব ড. ইউসুফ আল ওথাইমীন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোগান ও ওআইসিভুক্ত প্রায় ২০টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানগণ বক্তব্য দেন।
সূত্র: এনটিভি অনলাইন
Discussion about this post