অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের নির্বিচারে হত্যা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে আজ ইসলামী দলগুলোর বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম। জুম্মার নামাজের পর হেফাজতে ইসলাম ও সম্মিলিত ওলামা মাশায়েখ পরিষদসহ ইসলামী দলগুলোর হাজার হাজার নেতাকর্মী এই বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলে অংশগ্রহন করেন।
বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে আগামী সোমবার ঢাকায় মিয়ানমার দূতাবাস ঘেরাও এবং জাতিসংঘ কার্যালয়ে স্মারকলিপি দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয় ইসলামি দলগুলোর পক্ষ থেকে।
হেফাজতে ইসলাম, সম্মিলিত ওলামা মাশায়েখ পরিষদ, ইসলামি ঐক্য আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, ইসলামি যুব আন্দোলনসহ অন্যান্য ইসলামি দল এ বিক্ষোভে অংশ নেয়।
বায়তুল মোকাররম সংযুক্ত রাস্তা ব্লক করে অং সান সুচির প্রতীকী কফিন ও মিয়ানমারের পতাকায় আগুন জ্বালিয়ে মুসল্লিরা মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে থাকে। একপর্যায়ে তারা সমাবেশে মিলিত হন।
সমাবেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা নূর হোছাইন কাসেমী বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ আরাকান স্বাধীন করা। স্বাধীন আরাকান ছাড়া রোহিঙ্গাদের শান্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।’
তিনি বলেন, ‘বার্মা সরকার গণহত্যা করছে। রাখাইন এলাকায় ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণের কাছে আহ্বান জানাবো রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ান। তাদের খাদ্য, চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। রোহিঙ্গাদের আবাস ভূমিতে ফিরিয়ে দিতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখুন। বাংলাদেশ সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি, প্রয়োজনে যুদ্ধের মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিন।’
হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব জুনাইদ আল হাবীব বলেন, ‘কূটনৈতিক মিশনের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান চেষ্টা করতে হবে। ১৮ সেপ্টেম্বর মিয়ানমার দূতাবাস ঘেরাও করা হবে। যদি রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ না হয় তাহলে ৫ মে’র মতো ১৮ সেপ্টেম্বর আরেকটি শাপলা চত্বর সৃষ্টি করা হবে।’
https://www.youtube.com/watch?v=Ibkv-7HgNmI
রোহিঙ্গাদের ত্রাণ বিতরণ প্রসঙ্গে জুনাইদ আল হাবীব বলেন, ‘যারা বিনা ভোটে নির্বাচিত তাদের কিভাবে বিশ্বাস করবো। সরকারের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ করলে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা মুসলানমানরা ত্রাণ পাবে কি না যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তাই সবাইকে ত্রাণ বিতরণের সুযোগ দিতে হবে। ত্রাণ বিতরণে বাধা না দিয়ে যারা ত্রাণ দিতে চায় তাদের সুযোগ করে দিতে হবে। অন্যথায় অনেকেই ত্রাণ পাবে না।’
ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের আমির মওলানা মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী বলেন, ‘মানব সভ্যতার বিরুদ্ধে মিয়ানমার সরকারের এতবড় জঘন্য অপরাধের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের কেবল নিন্দা জানানোই যথেষ্ট হবে না। বরং তার বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সব ধরনের কূটনৈতিক, বাণিজ্যিক ও আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ করে রোহিঙ্গা মুসলমানদের তাদের পূর্বপুরুষের ভিটে-মাটিতে ফিরিয়ে নেওয়া এবং নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিতে বাধ্য করতে হবে।’
https://www.youtube.com/watch?v=57CVoMYThsM
বিক্ষোভ পূর্ব সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত ওলামা মাশায়েখ পরিষদের মহাসচিব ড. খলিলুর রহমান মাদানী, হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরীর যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা আব্দুর রউফ ইউসুফিসহ অন্যান্য ইসলামী দলগুলোর নেতৃবৃন্দ। তারা বলেন, রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর নির্যাতন বন্ধ না হলে মিয়ানমারের পণ্য বর্জন করতে হবে। ফেরাউনের সময় শিশুদেরকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছিল, ঠিক সেভাবে আরাকানেও নির্যাতন করা হচ্ছে। রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে রক্ষা করতে প্রয়োজনে লং মার্চ করা হবে জানিয়ে তারা বলেন, আমাদের ভাইদেরকে রক্ষা করতে আমরা প্রস্তুত।
ইসলামী দলগুলোর পূর্বঘোষিত এই কর্মসূচিকে ঘিরে জুমার নামাজের আগ থেকেই হাজার হাজার কর্মী জড়ো হতে থাকেন। হেফাজতসহ দলগুলোর এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন সাধারণ মানুষও। তাদের হাতে ছিলো রোহিঙ্গা মুসলিম নির্যাতনের বিভিন্ন ছবি ও নির্যাতন বন্ধের বিভিন্ন স্লোগানসহ প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার।
Discussion about this post