রোহিঙ্গা সংকট শুরুর পর থেকে বাংলাদেশ আশা করেছিল সমস্যা সমাধানের জন্য ভারত হয়তো কোন ভূমিকা রাখবে।
২০০৯ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক বেশ জোরালো বলে মনে করা হয়। দুই দেশের নেতারা বিভিন্ন সময় এ কথা বলেছেন।
কিন্তু রোহিঙ্গা সংকটের শুরুর পর ভারত যেভাবে মিয়ানমারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে সেটি বাংলাদেশ সরকারের ভেতরে অনেকেই বেশ অবাক করেছে।
মিয়ানমারের উপর ভারতের এক ধরনের প্রভাব রয়েছে।
বাংলাদেশ ধারণা করেছিল, সে ‘প্রভাব’ কাজে লাগিয়ে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের জন্য ভারত হয়তো কোন ভূমিকা রাখবে। কিন্তু দৃশ্যত সে ধরনের কিছু ঘটেনি।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনার জন্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক এখন দিল্লি সফরে আছেন।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এ সংকট সমাধানের জন্য ভারত কতটা ভূমিকা রাখতে পারে।
ভারতের সাবেক কূটনীতিক পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী মনে করেন, ভারতের পক্ষে খুব বেশি কিছু করা সম্ভব নয়। মি: চক্রবর্তী একসময় বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বিবিসি বাংলার সাথে এক সাক্ষাৎকারে মি: চক্রবর্তী বলেন, ” রোহিঙ্গা তো আমাদের প্রবলেম নয়। এটা তো বিটউইন মায়ানমার ও বাংলাদেশ ।”
ভারতের সাবেক এ কূটনীতিক বাংলাদেশকে পরামর্শ দিচ্ছেন চীনের সহায়তা নেবার জন্য।
চীনকে বাংলাদেশের ‘বিশেষ বন্ধু’ হিসেবে উল্লেখ করে মি: চক্রবর্তী বলেন, ” চায়না (চীন) ওদের (বাংলাদেশের) বিশেষ বন্ধু হয়েছে এখন। চায়না কে জিজ্ঞেস করুক। ওরা কিছু করুক। যখন দরকার হয় তখন তো চায়নার কাছে ছুটে যা ওরা (বাংলাদেশ)। … কিছু রোহিঙ্গা চায়না নিয়ে নিক না।”
রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন সরাসরি সমর্থন জানিয়েছে মিয়ানমারকে। অন্যদিকে চীন ও ভারত পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী।
মি: রঞ্জনের কথায় চীনের প্রতি এক ধরনের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পাচ্ছে।
ভারতের কাছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয়েই বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ।
রোহিঙ্গা সমস্যা ভারতীয় কূটনীতির জন্য ‘উভয় সংকট’ তৈরি করেছে বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন।
রোহিঙ্গা সংকট শুরুর পর দুই দেশের কূটনীতির সাথে ভারত কি ভারসাম্য আনতে পেরেছে?
এক্ষেত্রে ভারসাম্য আনা মুশকিল বলে মনে করেন ভারতের সাবেক এ রাষ্ট্রদূত।
বাংলাদেশ চাইছে যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার ফিরিয়ে নেবে।
এক্ষেত্রে ভারত কি কোন সাহায্য বা মধ্যস্থতা করতে পারে?
” বাংলাদেশের একটা ধারণা যে আমরা মিয়ানমারের উপর প্রেশার দিয়ে সব করিয়ে দেব। মানে ওদের প্রবলেম (সমস্যা) আমরা সলভ (সমাধান) করে দেব। এটা তো হবে না,” বলছিলেন মি: চক্রবর্তী।
তিনি মনে করেন, মিয়ানমারের উপর চাপ প্রয়োগ করা ভারতের উচিত হবে না। কারণ মিয়ানমারের সাথে ভারতের একটি ‘ নিজস্ব সম্পর্ক’ রয়েছে।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য ভারতীয় ত্রাণ পাঠানো মিয়ানমারের রাখাইন পূর্ণগঠনের জন্য ভারত সহায়তা দিতে চেয়েছে বলে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এর বেশি ভারতের পক্ষে করা সম্ভব নয় বলে মি: চক্রবর্তী বলেন।
রোহিঙ্গা সংকটে মিয়ানমারকে চীনের সমর্থনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ” চায়না (চীন) তো একেবারে এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওরা তো এসব হিউম্যানিটেরিয়ান আর এসবের ধার ধারে না।”
এমন প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশের বেশি কিছু আশা করা ঠিক হবে না বলে তিনি মনে করিয়ে দেন।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
Discussion about this post