৩৫ দিন ধরে কলেজ ছাত্র আবদুল জব্বারের কোনো খোঁজ পাচ্ছেন না তার পরিবার। পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ এসে তাঁর বাড়ি থেকে জব্বারকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যায়। তবে পুলিশ তা অস্বীকার করছে। এ ব্যাপারে পুলিশ সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) নিচ্ছে না বলে অভিযোগ জব্বারের বাবার।
সোমবার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা জানান আবদুল জব্বারের বাবা সাজ্জাদ হোসেন। এ সময় তার স্ত্রী সায়রা খাতুন ও ছোট ছেলে আবদুল হাকিম নয়ন উপস্থিত ছিলেন।
সাজ্জাদ হোসেন বলেন, থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গেলে ‘পুলিশ বলেছে নাম ও ঠিকানা রেখে যেতে। খুঁজে পেলে জানাবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো খোঁজ আসেনি।’
তিনি জানান, তিনি তালা উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের বলরামপুর গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর ছেলে আবদুল জব্বার সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক শ্রেণিতে পড়াশোনা করে।
সাজ্জাদ নিজ গ্রামের একটি মসজিদের ইমাম। একইসঙ্গে একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের ভ্যান চালান তিনি।
সাজ্জাদ জানান, তাঁর ছেলে জব্বার কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত ছিল না।
সাজ্জাদ বলেন, ‘গত ৪ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টার দিকে ছেলে আবদুল জব্বার বাড়ির উঠোনে ঘোরাফেরা করছিল। এ সময় কয়েক ব্যক্তি তাকে হাতকড়া পরিয়ে তুলে নিয়ে যান। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তাঁরা জানান, অভিযোগ আছে।’
সাজ্জাদ বলেন, ‘আমরা তালা থানায় যাই। কিন্তু পুলিশ জব্বারকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি অস্বীকার করে। অথচ যে পুলিশ কর্মকর্তা আমার ছেলে জব্বারকে তুলে এনেছিলেন আমরা তাঁকে চিনতে পারি। এমনকি যে মোটরসাইকেলে তাকে তুলে নিয়ে আসা হয় সেটিও থানায় দেখতে পাই। পুলিশের কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি তিনি তালা থানার পুলিশ পরিদর্শক ( তদন্ত) মো. মাসুদ হাসান। তবে মাসুদ হাসান আমার ছেলেকে তুলে আনার বিষয়টি বেমালুম অস্বীকার করেন।’
এরপর থেকে বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও ছেলের সন্ধান পাননি উল্লেখ করে সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘বাধ্য হয়ে গত ২৩ সেপ্টেম্বর তালা থানায় একটি লিখিত জিডি করতে যাই। কিন্তু পুলিশ তা নিতে অস্বীকার করে।’
সাজ্জাদ হোসেন ও সায়রা খাতুন বলেন, ‘ছেলের জন্য আমাদের ঘুম ও খাওয়া বন্ধ। আমরা আমাদের ছেলের সন্ধান চাই।’
সাজ্জাদ বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো অপরাধ করে থাকলে তাকে আইনে সোপর্দ করুন। চাইলে ওর বিচার হোক। কিন্তু তাকে ধরে নিয়ে গুম করা হবে কেন? আর কেনই বা গ্রেপ্তারের বিষয়টি অস্বীকার করা হবে?’
সাজ্জাদ হোসেন আরো বলেন, ‘যারা আমার ছেলেকে উঠিয়ে নিয়ে যান তাঁদের কাছে ছিল ওয়্যারলেস ও পিস্তল এবং হাতকড়া। এরপরও তারা যে পুলিশের লোক নন তা তো মানতে পারি না।’
সাজ্জাদ আরো বলেন, ‘আমার ছেলে এলাকায় ভালো ছেলে হিসেবে পরিচিত। ও কাশিয়াডাঙ্গা মাদ্রাসা ও আল আমিন মাদ্রাসায় পড়া শেষ করে পাটকেলঘাটা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে। ও কখনো কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ছিল না।’
এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে ছেলেকে সুস্থ অবস্থায় ফেরত চেয়েছেন সাজ্জাদ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি) হাসান হাফিজুর রহমান বলেন, ‘তালা থানা পুলিশ এই নামের কোনো ছেলেকে গ্রেপ্তার করেনি। তবে খোঁজ নিয়ে জেনেছি জব্বার নামের ছেলেটি দীর্ঘদিন ধরে বাড়িতে থাকে না। এলাকার লোকজনও তাই বলেছেন। তাঁর বাবা থানায় জিডি করেননি। তিনি ছেলের সন্ধান নিতে থানায় এসেছিলেন। নাম ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর রেখে দিয়েছিলাম। কিন্তু কোনো খোঁজ আজ পর্যন্ত পাইনি।’
সূত্র: শীর্ষনিউজ
Discussion about this post