অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল-সমাবেশের সময় আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় পৌর সদর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ সময় পাকুন্দিয়া থানার ওসিসহ ৫ পুলিশ ও এক কাউন্সিলরসহ অর্ধশতাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
সোমবার বিকাল থেকে পাকুন্দিয়া পৌর সদরে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। সকাল থেকেই পাকুন্দিয়া পৌর সদর বাজারের সব দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। খবর যুগান্তরের।
এদিকে সংঘর্ষের সময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হাতে দেশীয় অস্ত্র হিসেবে ব্যপকহারে লগি বৈঠা দেখা গেছে। ২০০৬ সালের এই অক্টোবরেরই ২৮ তারিখ রাজধানীতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এই লগি বৈঠা দিয়েই ইতিহাসের নৃশংসতম তাণ্ডব চালিয়েছিলো। যেই তাণ্ডবে রাজধানীতেই অন্তত ৬ জনসহ সারাদেশে ১৮ জন প্রাণ হারিয়েছিলো।
যুগান্তর সূত্রে জানা গেছে, একই স্থানে আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যান গ্রুপের সমাবেশ-শোডাউন আহ্বানকে কেন্দ্র করে পাকুন্দিয়া উপজেলা সদরে রোববার সন্ধ্যার পর দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে দুই গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি সামাল দিতে রাতে ১৪৪ ধারা জারি করে উপজেলা প্রশাসন।
রোববার রাত ১০টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত পৌর এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ, শোডাউন ও মিছিল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে উপজেলা প্রশাসন।
সোমবার বিকাল ৩টায় পাকুন্দিয়া পৌর সদরের ঈদগা ময়দানে এ দুই গ্রুপের সমাবেশ-শোডাউনের কর্মসূচি ছিল।
উল্লেখ্য, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রচার-প্রচারণার অংশ হিসেবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি অ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দিন ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মো. রফিকুল ইসলাম রেনু-সমর্থিত গ্রুপ সোমবার একই সময় স্থানীয় ঈদগা ময়দানে পাল্টাপাল্টি সভা আহ্বান করে।
এ নিয়ে দুই পক্ষের লোকজন পূর্বঘোষিত সমাবেশকে সফল করতে রোববার সকালে মিছিল করলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। রোববার সন্ধ্যার পর পুনরায় এমপি-সমর্থিত গ্রুপ মিছিল বের করলে উপজেলা চেয়ারম্যান গ্রুপের লোকজনের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় সিনিয়র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু তাহের মোহাম্মদ সাঈদের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এ পরিস্থিতির ক্রমাবনতির কারণে রোববার রাত ৯টায় ১৪৪ ধারা জারি করে উপজেলা প্রশাসন।
১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রফিকুল ইসলাম রেনুর সমর্থক শত শত নেতাকর্মী লগি বৈঠার দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে কর্মসূচী সফল করতে আসলে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
অ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দিন যুগান্তরকে জানান, রফিকুল ইসলাম রেনু একক সিদ্ধান্তে এ সমাবেশ আহ্বান করেছিলেন। অন্যদিকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ আহূত কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের সব স্তরের নেতাকর্মীদের সমর্থন ছিল। এ সময় তিনি উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।
অপরদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রেনু জানান, আমার পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি সফলের সব প্রস্তুতি যখন শেষ পর্যায়ে তখন রোববার রাতে এমপি-সমর্থিত গ্রুপের মদদে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।
তিনি দাবি করেন, কর্মসূচি সফল করতে ১৪৪ ধারার মধ্যেও পৌর সদরের আশপাশে ৬০ থেকে ৭০ হাজার নেতাকর্মী-সমর্থক জড়ো হয়েছিল। কিন্তু এমপির নির্দেশে পুলিশ নেতাকর্মীর ওপর হামলা চালায়।
অপরদিকে আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু তাহের মোহাম্মদ সাঈদ জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট ছুড়তে হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
Discussion about this post