প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা আজ শনিবার রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বরাবর তাঁর পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
প্রধান বিচারপতির পদত্যাগে এখন কী হবে?
এ ব্যাপারে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রথম আলোকে বলেন, এস কে সিনহা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন, এমন তথ্য বঙ্গবভবন থেকে তাঁকে জানানো হয়নি। যদি তিনি পদত্যাগ করেই থাকেন, তাহলে রাষ্ট্রপতি পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ বা অন্য কোনো কারণে ওই পদ শূন্য হলে কী হবে, তা সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদে সুস্পষ্ট বলা আছে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রতিবেদককে তিনি সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুসরণ করতে বলেন।
সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য হলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোন কারণে প্রধান বিচারপতি তাঁহার দায়িত্বপালনে অসমর্থ বলিয়া রাষ্ট্রপতির নিকট সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হইলে ক্ষেত্রমত অন্য কোন ব্যক্তি অনুরূপ পদে যোগদান না করা পর্যন্ত কিংবা প্রধান বিচারপতি স্বীয় কার্যভার পুনরায় গ্রহণ না করা পর্যন্ত আপীল বিভাগের অন্যান্য বিচারকের মধ্যে যিনি কর্মে প্রবীণতম, তিনি অনুরূপ কার্যভার পালন করিবেন।’
কবে নাগাদ প্রধান বিচারপতি নিয়োগ হতে পারে বা এ ব্যাপারে কোনো সময়সীমা আছে কি না, জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রপতি যখন নিয়োগ দেবেন, তখনই নিয়োগ হবে।
প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ছুটি নিয়ে অস্ট্রেলিয়া যান। গতকাল শুক্রবার তাঁর ছুটির মেয়াদ শেষ হয়। কিন্তু তিনি ছুটির মেয়াদ বাড়াতে কোনো আবেদন করেননি। দেশেও ফেরেননি। অস্ট্রেলিয়া থেকে তিনি সিঙ্গাপুর হয়ে গতকালই কানাডায় পৌঁছান বলে জানা গেছে।
ছুটিতে যাওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
৩ জুলাই সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন সুপ্রিম কোর্ট। এরপর পূর্ণাঙ্গ রায় গত ১ আগস্ট প্রকাশিত হয়। ওই দিনই পূর্ণাঙ্গ রায়টি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়। রায় প্রকাশের পর এ নিয়ে সরকার ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সংক্ষুব্ধ হয়। বিশেষ করে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছিলেন মন্ত্রী, দলীয় নেতা ও সরকারপন্থী আইনজীবীরা। তাঁরা প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের দাবিও তোলেন।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং তার কিছু পর্যবেক্ষণের বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নিতে জাতীয় সংসদে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। বিচারিক সিদ্ধান্তের বিষয়ে সংসদে ওই দিন প্রায় পাঁচ ঘণ্টা আলোচনা হয়, যাতে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৮ জন সংসদ সদস্য অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আদালত তাঁর এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে সংসদে পাস হওয়া সংবিধানের সংশোধনী বাতিল করেছেন।
আর বিএনপি প্রথম থেকেই বলে আসছে, সরকার প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগের জন্য চাপ দিচ্ছে। আজ এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেছেন, প্রধান বিচারপতিকে জোর করে পদত্যাগ করানো হয়েছে।
সূত্র: প্রথম আলো
Discussion about this post