বাংলাদেশে এখন সৌদি আরবের সংস্কৃতিতে ইসলাম ধর্ম পালন করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্সের (এলএসই) অধ্যাপক নায়লা কবির।
এই বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেছেন, একজন মহিলার গায়ে বোরকা, মাথায় হিজাব, হাতে পায়ে মোজা, চোখে সানগ্লাস-এটা সৌদি আরবের সংস্কৃতি।
শনিবার মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টার মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশে নারী ও পুরুষের শ্রম বাজার: বাধা, বিকল্প ও চ্যালেঞ্জসমূহ’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন নায়লা কবির। বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতে এই বিষয়ের উপর গবেষণা করছেন তিনি।
দিল্লি স্কুল অব ইকোনমিক্সের অর্থনীতির অধ্যাপক অশ্বিনী দেশপান্ডের সভাপতিত্বে কর্মশালায় নায়লা কবির বলেন, “নিজস্ব সংস্কৃতির উপর ভর করেই বাংলাদেশে ইসলাম ধর্ম এসেছিল। কিন্তু সেই ইসলাম এখন নেই। এখন এদেশে সৌদি ভার্সনের ইসলাম চলছে। যেমন বোরকা, হিজাব, চোখে সানগ্লাস, হাতে পায়ে মোজা দিয়ে পুরো শরীর আবৃত করে চলাফেরা করা। এভাবেই ধর্মীয় শৃঙ্খলার নামে নারীকে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে।”
পরিবারের কর্তা পুরুষের কারণে এমনটা হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “মুসলিম নারীদের নানা রকমের জেনা (ব্যাভিচার) বা যৌনতার দোহাই দিয়ে নারীকে ঘরে বন্দী করে রাখতে চায়। আবার সেই পুরুষরাই বাসে, বাজারে, অফিসে বা যাতায়াতের সময় সুযোগ পেলেই নারীর প্রতি যৌন হয়রানি করছে। সুযোগ পেলেই নারীর দিকে চাহনি, স্পর্শ বা কথায় যৌনতা করছে।”
তিনি বলেন, “এদেশের নারীরা স্বামীর নির্দেশে পর্দা মেনে ঘর থেকে বের হয় না। আবার নারীর সেই বোরকার ভিতরে লুকিয়ে ভারত থেকে অবৈধ পণ্য চোরাচালান করাচ্ছে সেই পুরুষরাই।
“বিরাট সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আমাদের অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ এভাবে যৌনতা দিয়ে আবদ্ধ করে রেখেছে তারা।”
এজন্য নারীদেরও দায় রয়েছে বলে মনে করেন নায়লা কবির।
তিনি বলেন, “অনেক নারী নিজের কাজের ক্ষেত্রে স্ববিরোধী আচরণ করে। যেমন, বাড়ির কাছের বাজার হলে সে যেতে পারবে না। কারণ তার পরিচিত লোকজন তাকে দেখবে। আবার দূরের বাজারে যাচ্ছে ঠিকই।”
‘পর্দা মনের ভিতরে, কাপড়ে নয়’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “পর্দা কখনই কাজ থেকে বিরত থাকার কথা বলে না।”
অনুষ্ঠানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেন্ডার অ্যান্ড সোশ্যাল ট্রান্সফরমেশনের (সিজিএসটি) প্রধান সিমিন মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ পরিচালিত শ্রম জরিপের তথ্য অনুযায়ী দেশে মাত্র ৩৬ শতাংশ নারী শ্রমে জড়িত। কিন্তু ২০০৮ ও ২০১৫ সালে তাদের পরিচালিত দুটি জরিপেই ৬৭ শতাংশ নারীর শ্রমে জড়িত থাকার তথ্য উঠে এসেছে।
তিনি বলেন, “ফরিদপুর, চাপাইনবাবগঞ্জ ও মৌলভীবাজারসহ দেশের আটটি জেলায় ২০০৮ সালে ৫ হাজার ১৯৮ জন মহিলার উপর জরিপ চালানো হয়েছিল। ওই জরিপে ৬৭ শতাংশ নারী শ্রমে জড়িত বলে তথ্য উঠে এসেছিল।
“পরবর্তীতে ২০১৫ সালে আরেকটি জরিপ পরিচালনা করা হয়, যেখানে ২০০৮ সালের জরিপে অংশ নেওয়া ৪ হাজার ৪০৬ জন নারী অংশগ্রহণ করে। শেষের জরিপে ২ হাজার ৫০০ জন পুরুষের কাছ থেকেও তথ্য নেওয়া হয়।
“দুটি জরিপেই ৬৭ শতাংশ মহিলা শ্রমে জড়িত বলে তথ্য পাওয়া গেছে।”
বাংলাদেশে এত নারী কীভাবে শ্রমে জড়িত তার বিস্তারিত জানার আগ্রহ প্রকাশ করে অশ্বিনী দেশপান্ডে বলেন, “ভারতেও এত নারী শ্রমের সঙ্গে জড়িত নয়। বাংলাদেশে এত নারী শ্রমের সঙ্গে যুক্ত এটা নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। শ্রমের সঙ্গে যুক্ত এসব নারীর জন্য কী করা যায় সে বিষয়ে ভাবতে হবে।”
সূত্র: বিডিনিউজ
Discussion about this post