বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের সময়ও রাখাইনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে বেশ কতগুলো গ্রাম। সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের সময় থেকে দু’মাসের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু চুক্তি স্বাক্ষরের কয়েক দিনের মধ্যে রোহিঙ্গাদের গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে প্রমাণ হয় রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তা স্রেফ জনগণের সঙ্গে ধোঁকাবাজি (পাবলিক রিলেশন্স স্টান্ট)। এমন মন্তব্য করেছেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্রাড এডামস। এ বিষয়ে সোমবার দীর্ঘ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।
এমন উদ্ধৃতি দিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে বৃটেনের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান, মালয়েশিয়ার দ্য স্টার সহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম।
গার্ডিয়ান শিরোনামে বলেছে, মানবাধিকার গ্রুপ বলছে- শরণার্থী চুক্তির পরও রোহিঙ্গাদের গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে মিয়ানমার। অন্যদিকে মালয়েশিয়ার দ্য স্টারের শিরোনাম রোহিঙ্গা চুক্তি জনগণের সঙ্গে একটি প্রতারণা।
এইচআরডব্লিউ তার রিপোর্টে বলেছে, এ বছর অক্টোবর ও নভেম্বরের মধ্যে পাওয়া স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, রোহিঙ্গাদের অনেক গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে এ সময়ে। শুধু এ দু’মাসে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে ৪০টি গ্রাম। আর এ সময়ে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়েছে। তারা ছুটে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে।
এতে আরও বলা হয়, ২৩ শে নভেম্বর বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ওই একই সপ্তাহে কয়েক ডজন বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ২৫ শে নভেম্বর স্যাটেলাইটে পাওয়া ডাটা বিশ্লেষণ করে দেখা যায় তখনও গ্রাম জ্বলছে। জলন্ত আগুন সনাক্ত করা হয়। রাখাইনের মংডু অঞ্চলে মিও মি চ্যাং গ্রাম তাতে জ্বলতে দেখা যায়। ২৫ শে নভেম্বর থেকে ২রা ডিসেম্বর পর্যন্ত কমপক্ষে চারটি গ্রাম জ্বলতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে ব্রাড এডামস বলেছেন, চুক্তি স্বাক্ষরের কয়েক দিন পরেও মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের গ্রাম এভাবে জ্বালিয়ে দিয়েছে। এর ফলে রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ফেরার যে প্রতিশ্রুতি ছিল তা জনগণের সঙ্গে শুধুই প্রতারণা। তিনি বলেছেন, স্যাটেলাইটে যে দৃশ্য দেখা যাচ্ছে তা মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অস্বীকার করে।
স্যাটেলাইটের ছবিতে দেখা যাচ্ছে রোহিঙ্গাদের গ্রাম অব্যাহতভাবে ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা গুরুত্বসহ মেনে নেয়া যাবে না। এইচআরডব্লিউ তার প্রতিবেদনে বলেছে, তারা স্যাটেলাইটে পাওয়া ছবি বিশ্লেষণ করেছে। এসব ছবি মংডু, বুথিডাং ও রাথিডাং থেকে ধারণ করা। এসব গ্রামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও নজরদারিকারী তাদের দোসররা রোহিঙ্গাদের ওপর হামলায় জড়িত। এভাবে কমপক্ষে ১০০০ গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫৪টি গ্রামের মধ্যে কমপক্ষে ১১৮টি ৫ই সেপ্টেম্বরের পরে আংশিক বা পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে।
অথচ মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সুচির অফিস ঘোষণা করেছিল, ৫ই সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনীর ক্লিয়ারেন্স অপারেশন্স বন্ধ হয়েছে। পরে ১৯ শে সেপ্টেম্বর সুচি নিজে প্রথম সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযান বন্ধের ঘোষণা দেন। কিন্তু এর পরে এইচআরডব্লিউ ওইসব স্যাটেলাইট চিত্র ধারণ করে। তাতে দেখা যায় নতুন করে ৪০টি বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে অক্টোবরে ২৪টি, নভেম্বরে ১১টি গ্রাম পোড়ানো হয়েছে।
সর্বশেষ ডকুমেন্টে আগুন দেয়ার যে দৃশ্য দেখা গেছে তাহলো ২৫ শে নভেম্বর থেকে ২রা ডিসেম্বরের মধ্যে চারটি গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ২৫ শে নভেম্বর মংডুর মিও মি চ্যাং গ্রাম পুড়তে দেখা যায় স্থানীয় সময় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে। এ সময়ে আরো যে গ্রামগুলোতে আগুন দেয়া হয় তার মধ্যে রয়েছে নগা/মিন বাওয়া, গোকি পি এবং অজ্ঞাত একটি গ্রাম।
সূত্র: মানবজমিন
Discussion about this post