আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের প্রার্থী তালিকায় ১০০ নতুন মুখ খুঁজছেন চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এ প্রার্থী তালিকায় প্রবীণ ও নবীন রাজনীতিবিদদের সমন্বয় ঘটাতে চান তিনি। প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের দুটি অভিজ্ঞ ও শতভাগ পেশাদারি সংস্থার মাধ্যমে এই তালিকাটি তৈরি করাচ্ছে বিএনপি। এতদিন অনেক কিছু শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত উল্টে যাচ্ছে বিএনপির নির্বাচনী গণিতের পাতা। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে, আগামী নির্বাচনের এই প্রার্থী তালিকায় বিগত ২০০১ এবং ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে দলীয় টিকিটে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের মধ্য থেকেই বেশিরভাগ প্রার্থী বাছাই করা হচ্ছে। এর মাঝে সাবেক ছাত্রদল নেতা ও ব্যবসায়ীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
সর্বমোট ৩০০ প্রার্থীর মধ্য থেকে জোটের শরিকদের মধ্যে বণ্টন প্রক্রিয়াসহ বিভিন্ন কারণে প্রায় শতাধিক প্রার্থী পরিবর্তন হতে চলেছে। এক্ষেত্রে নতুন মুখের প্রার্থী খুঁজছে দলটি। দলের চেয়ারপারসন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে দেশি ও বিদেশি দুটি পেশাদারি সংস্থা কাজ করছে। এবারের প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সংস্কারপন্থি, মূলধারা, বয়োজ্যেষ্ঠতা, জামায়াতসহ শরিক দল, বিগত নির্বাচনে পুরনো প্রার্থীসহ ভোটের সংখ্যা ও ভোটের পার্থক্য এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়েই চূড়ান্ত করা হচ্ছে প্রার্থী তালিকা।
জানা গেছে, যারা ইতিমধ্যে মারা গেছেন কিংবা এতটাই বয়োজ্যেষ্ঠ হয়ে পড়েছেন যে— শারীরিকভাবে একেবারে অক্ষম, তারা সবাই এবারের প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছেন। এ ছাড়াও যারা এর মধ্যে দল ছেড়ে চলে গেছেন কিংবা দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তারাও এবারের তালিকা থেকে বাদ পড়তে যাচ্ছেন। তবে মৃত কিংবা বয়োজ্যেষ্ঠ অক্ষম নেতাদের এলাকায় তাদের স্থলে তাদের যোগ্য কোনো উত্তরাধিকারী কিংবা সংশ্লিষ্ট এলাকার যোগ্য ও সামর্থ্যবান নেতাদের মধ্য থেকেও মনোনয়ন দেওয়ার কথা চিন্তা করা হচ্ছে।
এদিকে সংশ্লিষ্ট অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে ২০-দলীয় জোটের শরিক দলের আসন চাহিদা মাথায় রেখেই চলছে এই প্রার্থিতা বাছাইয়ের কাজ। জাতীয় সংসদে বিগত দিনে প্রতিনিধিত্ব করেছে— এমন শরিক দলগুলো ছাড়াও নতুন আরও বেশ কয়েকটি দলের শীর্ষ কয়েকজন নেতাকেও এবার মনোনয়ন দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে বিএনপি। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের প্রধান শরিক দল জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে এখন দুভাবে চিন্তা করছে বিএনপি। এক. জামায়াতের নিবন্ধন যদি ঠিক থাকে— আর তারা তাদের দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে যেতে সক্ষম হয়, তবে সেক্ষেত্রে বিএনপি সর্বোচ্চ ৩০টি আসনে ছাড় দেওয়ার কথা ভাবছে।
আর যদি নিবন্ধন এবং দলীয় প্রতীক দুটোই হারায়— তবে সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৫টি আসনে ছাড় দিতে পারে বিএনপি। বিগত ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৪০টি আসনে জোটের মনোনয়ন পেয়েছিল জামায়াতে ইসলামী। কিন্তু এবার তার অর্ধেক আসন পেতে পারে দলটি। কারণ বিএনপি ধরেই নিয়েছে জামায়াত শেষ পর্যন্ত তাদের দলীয় নিবন্ধন ও দলীয় প্রতীক ফিরে পাচ্ছে না। আর যদি ফিরে পায় তবে সেটি হবে সরকারের বদান্যতা। আর তখন তাদের নিয়ে আলাদাভাবে হিসাব-নিকাশ করতে হবে বিএনপিকে।
তবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবার বলেছেন অন্য কথা। তিনি পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, জামায়াত জোটে ছিল, এখনো আছে এবং আশা করছি ভবিষ্যতেও থাকবে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে গেলেই তারা ভালো, আর বিএনপির সঙ্গে থাকলে খারাপ— ক্ষমতাসীনদের এসব ভাঁওতাবাজি জনগণ ভালো করেই বুছে গেছে। স্বৈরাচারি এরশাদকে নিয়ে সরকার গঠন করলেও তাদের কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা শুধু বিএনপির সঙ্গে আসলেই। বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। নির্বাচনে জনগণের ভোটের মাধ্যমেই সরকার পরিবর্তনে আমরা বিশ্বাসী। আর প্রার্থী বাছাইয়ের বিষয়টিও নির্বাচনী প্রক্রিয়ারই একটি অংশ। বিএনপি যে কোনো সময়ে নির্বাচনের জন্যই প্রস্তুত। তবে সে নির্বাচন হতে হবে— নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু। অন্যথায়— এবার আর কোনো প্রহসনের নির্বাচন এদেশের জনগণ বরদাশত করবে না। সরকার যদি মনে করে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের মামলা-হামলা দিয়ে আর গুম, খুন করে ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটা নির্বাচন করে আবারও ক্ষমতা ধরে রাখবে তাহলে সেটি হবে তাদের দুঃস্বপ্ন।
এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপির সব কার্যক্রমই এখন নির্বাচনমুখী। দল গোছানো থেকে শুরু করে সাংগঠনিক কার্যক্রম পর্যন্ত সব কিছুরই লক্ষ্য আগামী জাতীয় নির্বাচন।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন