একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন নিয়ে দরকষাকষিতে বসতে যাচ্ছে দলটির শরিক দলগুলো। মহাজোটগতভাবে নির্বাচন হলে জাতীয় পার্টি চাইবে ৭০ বা ততোধিক আসন। আর ১৪-দলীয় শরিকরা চাইবে ৩০টির মতো আসন। মোট শতাধিক আসন দাবি করা হবে আওয়ামী লীগের কাছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে এ প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জোটের শরিক দলের নেতারা জানিয়েছেন।
সূত্রমতে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটে বর্তমানে ১৩টি রাজনৈতিক দল রয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছে ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, ন্যাপ, তরীকত ফেডারেশন ও জাতীয় পার্টি (জেপি)। এর মধ্যে ন্যাপের একজন সংরক্ষিত, ওয়ার্কার্স পার্টির সংরক্ষিতসহ সাতজন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের ছয়জন, তরীকত ফেডারেশনের দুজন, জাতীয় পার্টির (জেপি) দুজন রয়েছেন।
দশম সংসদ নির্বাচনের সময় শরিকরা আওয়ামী লীগের কাছে ৬০টি আসন দাবি করে। দেওয়া হয় ১৮টি। এবার প্রত্যেকেই দ্বিগুণ আসন দাবি করবে বলে জানা গেছে। তবে তাদের কটি দেওয়া হবে তা জানার জন্য নির্বাচনের আগমুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ইতিমধ্যেই ঘোষণা দিয়ে আসছেন এককভাবে নির্বাচন করবে তার দল। তবে বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত হলে জাতীয় পার্টির মহাজোটগতভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সম্ভাবনাই বেশি বলে মনে করেন দলটির নেতারা। কারণ, মহাজোট থেকে বেরিয়ে গেলে জাতীয় পার্টি খুব একটা সুবিধা করতে পারবে না বলে মনে করেন তারা। সে কারণে মহাজোটগতভাবে নির্বাচন করলে আওয়ামী লীগের কাছে ৭০-এর বেশি আসন দাবি করবে।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি এককভাবে অংশ নেবে। আমরা সেভাবেই প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। ভোটের মাঠে জাতীয় পার্টি এখন একটা বড় ফ্যাক্টর। সারা দেশে জাতীয় পার্টির প্রতি মানুষের আস্থা বেড়েছে।’
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ একাংশ) সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আসন কতটি চাইব তা বড় বিষয় নয়, নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে তা-ই বিষয়।’ তিনি বলেন, ‘মহাজোট না ১৪-দলীয় জোট, তার ওপর নির্ভর করবে প্রার্থী নিয়ে দরকষাকষি।’
ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের দলের সাতজন এমপি রয়েছেন। তারা সংসদ ও নির্বাচনী এলাকায় দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন। জোটগতভাবেও তাদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। আগামীতে ১০টির বেশি আসন আমরা দাবি করব।’
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ একাংশ) সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আসন নিয়ে এখনো আমাদের আলাপ-আলোচনা হয়নি। তবে গতবার যা পেয়েছিলাম তার চেয়ে বেশি আশা করি জোটপ্রধানের কাছে। আসন ভাগাভাগির চেয়ে আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আগামী নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক জঙ্গিগোষ্ঠী নির্বাচনে থাকবে কি থাকবে না তা। সে বিষয়গুলো বিবেচনা করেই আমরা নির্বাচনী মাঠ সাজাব।’
গণতন্ত্রী পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. শহীদুল্লাহ সিকদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা প্রধান শরিক আওয়ামী লীগের কাছে ১০টি আসন চাইব। সে অনুযায়ী তালিকাও প্রস্তুত করছি। আগের চেয়ে আমাদের সাংগঠনিক শক্তিও বেড়েছে।’
তরীকত ফেডারেশনের মহাসচিব লায়ন এম এ আউয়াল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘১০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো সাংগঠনিক সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। আগামীতে ১০টি আসন দাবি করব।’
ন্যাপের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা জোটগতভাবেই নির্বাচনে অংশ নেব। চলতি মাসের শেষের দিকে আমাদের দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক আছে। ওই বৈঠকেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব আমরা আওয়ামী লীগের কাছে কত আসন চাইব।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জোটের শরিক দলের একজন শীর্ষ নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সামনে আমাদের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ১৪ দলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কত আসন পেলাম তা বড় কথা নয়, বড় কথা হচ্ছে এই নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে পরাজিত করা। সে কারণে জোটের শরিকদের জন্য কোন আসন তা নিশ্চিত করা হলে ভালোভাবে মাঠ গোছানো যায়। এজন্য আগামী ফেব্রুয়ারিতেই জোটপ্রধান আওয়ামী লীগের কাছে আসন ভাগাভাগির বিষয়ে আলোচনা শুরু হবে।’
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন