অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বিএনপি-জামায়াতের এক নেতা সুইডেনে বসে দেশে কিলিং গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করছে বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ওই নেতার নাম নাহিদ বলেও দাবি করেছেন তিনি। খবর বাংলা ট্রিবিউনের।
রবিবার রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির উদ্যোগে বিএনপি-জামায়াতের অগ্নি সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের খণ্ডচিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এদিকে ওবায়দুল কাদের এমন বক্তব্যে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে। কারন একই ব্যক্তি কি করে বিএনপি এবং জামায়াতের নেতা হতে পারেন? এমন প্রশ্ন করেছেন সাধারণ মানুষ। তাদের মতে, মানুষ এখন আর বোকা নেই যে যা ইচ্ছা বলে দিবেন আর আমরা বিশ্বাস করবো। তারা বলেন, বাংলাদেশে সরকারি বাহিনীর হাতে কিভাবে গণহারে বিরোধী নেতাকর্মীরা গুম ও খুনের শিকার হচ্ছেন, কারা কিলিং বাহিনী পরিচালনা করছেন, তা আজ শুধু বাংলাদেশেই নয় বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সংগঠনগুলোও সুস্পষ্টভাবে অবগত আছেন।
বাংলা ট্রিবিউন জানায়, প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘যারা গণতন্ত্রের মুখোশ পড়ে আছে তাদের মুখোশ জাতির সামনে উম্মোচন করতে হবে। বিএনপির-জামায়াতের নেতৃত্বে সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে রুখতে হবে। আবার তাদের পরাজিত করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারকে ক্ষমতায় আনতে হবে। বিএনপি-জামায়াতের এই বর্বরতাকে তুলে ধরে এদের মুখোশ উম্মোচন করতে হবে। বর্বর এ অপশক্তির বিরুদ্ধে ঘৃণার আগুন ছড়িয়ে দিতে হবে।’
পাকিস্তানির দোসররা এখনও বাংলার মাটিতে বিষ বাষ্প ছড়াচ্ছে মন্তব্য করে কাদের বলেন, ‘তারা এখনও রক্তের হলিখেলা খেলছে। যারা পাকিস্তানি কায়দায় জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে তারা পাকিস্তানি প্রেত্মাত্মা। এরাই আবার গুম খুনের কথা বলে। গুমের নাটক যারা সাজায় এরাই গুমের অভিযোগ দিতে দ্বিধা করে না। দেশে হঠাৎ হঠাৎ লাশ পরে থাকে। যারা ৯ বছর আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে তারাই দেশের গুমের ঘটনা ঘটাচ্ছে। তাদের একজন সুইডেনে বসে কিলিং গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করছে। তার নাম নাহিদ। স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরও খুনের ঘটনা দেখছি।’
তিনি বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত দেশে মানবিকতাকে অপমান করেছে হিংস্র দানবতার মাধ্যমে। তারা দেশের মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে, এখন তারা কোন মুখে দেশের মানুষের কাছে ভোট চায়? ২০১৮ সাল সাম্প্রদায়িকতার পরাজয়ের বছর। তাদের পরাজয় হবে।
প্রচার ও প্রকশনা উপ-কমিটির চেয়ারম্যান এইচটি ইমামের সভাপতিত্বে ও আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলামের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন উপ-দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কার্যনিবার্হী সদস্য এবিএম রিয়াজুল কবির কাওছার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ প্রমুখ।
আলোচনা সভায় বিএনপির আন্দোলনের সময় ক্ষতিগ্রস্ত মাইশার মা ও নুরুজ্জামানের স্ত্রী মাফরুহা বেগম, ট্রাক ড্রাইভার পটল মিয়া, পুলিশ কনস্টেবল মোর্শেদ আলম, আলু ব্যবসায়ী রেজাউল করিম, সেলসম্যান মোশাররফের স্ত্রী লাভলী আক্তার কথা বলেন। উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আগুন সন্ত্রাসের জন্য বিএনপি জামায়াতকে দায়ী করা হলেও অধিকাংশ বাসে অগ্নিসংযোগ যে আওয়ামী লীগ নিজেরাই পুলিশ দিয়ে করিয়ে বিএনপির ওপর চাপিয়েছে তা অনেকটাই প্রমাণীত। এছাড়া এক বক্তব্যে ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামানও বলেছেন সরকার টিকিায়া রাখছে পুলিশ। বিগত আন্দোলনে বাসে আগুন দিয়েছে পুলিশ।(নিচের ভিডিওতে শুনুন)
https://www.youtube.com/watch?v=0ptD5rV2jsc
অনেকেই গুম হয়ে ফিরে আসছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এই এলাকার মাহফুজ বাবু ফিরে আসেনি। যারা ভিক্টিম তাদের মুখে যে বর্ণনা তারপর আর বক্তব্য দেওয়ার কিছু থাকে না। বঙ্গবন্ধুর কন্যা আপনাদের পাশে আছে, থাকবে। শেখ হাসিনা বিপন্ন মানবতার বাতিঘর। পরে মন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব তহবিল থেকে নগদ অর্থ প্রদান করেন। সেইসঙ্গে তাদের সার্বিক সহায়তার আশ্বাস দেন।
সভাপতির বক্তব্যে এইচ টি ইমাম বলেন, বিএনপি-জামায়াতের এসব হত্যা, আগুন সন্ত্রাস এবং নৈরাজ্যের বিষয় শুধু ঘরের মধ্যে বললেই হবে না। এর ব্যাপক প্রচার দরকার। প্রযুক্তির সদ্ব্যবহার করে সুন্দর ছক ব্যবহার করে জেলা, উপজেলা ও তৃণমূল পর্যায়েই প্রচার করতে হবে। তিনি বলেন, যারা আগামীতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী তারা নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে এখন থেকে বিএনপি-জামায়াতের অপকর্ম প্রচার প্রচারণা শুরু করতে পারেন। এতে আপনাদের মনোবল প্রমাণ হবে। আপনারা আমাদের কাছ থেকে ভিড়িও নিয়ে গিয়ে নিজ নিজ এলাকায় দেখান। এ প্রচার নিয়মিত দেখানো হলে ২০০৮ সালের নির্বাচনে যে বিজয় হয়েছিল তার পুনরাবৃত্তি এবারও হবে, এবার আরও বড় আকারে হবে।
এইচটি ইমাম বলেন, আমাদের হাতে সময় খুব কম, নির্বাচনের আর বেশি দেরি নাই। দেখতে দেখতে কয়টা মাস পার হয়ে যাবে। একবার যখন নির্বাচনের জোরালো প্রস্তুতি শুরু হবে, তখন সবাই এর প্রচারের কথা ভুলেও যেতে পারে। তাই এখন থেকে জনমত যদি আমাদের পক্ষে আনতে হয় সেক্ষেত্রে আমাদের শেখ হাসিনার উন্নয়ন ও বিএনপি-জামায়াতের আগুন সন্ত্রাসের কথা তুলে ধরলে নির্বাচনের বিজয় আমাদের জন্য সহজ হয়ে যাবে।