ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন উপনির্বাচনে সর্বশক্তি দিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। একইসঙ্গে দলটির আইনজীবীরা এই শঙ্কাও করছেন, আসন্ন নির্বাচনে ক্ষমতাসীনরা হেরে যাওয়ার পরিস্থিতি দেখলে নির্বাচন বন্ধে রিট হতে পারে। এ কারণে নির্বাচনি কৌশলের অংশ হিসেবে আগে থেকেই এ বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলার পরামর্শ উঠে এসেছে। রবিবার (১৪ জানুয়ারি) রাতে ঢাকার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে তার সঙ্গে দলীয় আইনজীবী ও বুদ্ধিজীবীদের পরামর্শসভায় এ নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠক থেকে বেরিয়ে রাত সাড়ে ১২টার পর বিএনপির এক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, তাদের মধ্যে চলমান রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বুদ্ধিজীবীদের কাছ থেকে পরামর্শ শোনেন খালেদা জিয়া। এরপর আইনজীবীদের সঙ্গে প্রায় আধঘণ্টার বেশি আলোচনা হয় তার।
এই আইনজীবী আরও জানান, বৈঠকে ডিএনসিসি নির্বাচনে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে মাঠে নামার বিষয়ে মোটামুটি সিদ্ধান্ত পাকা হয়েছে। খালেদা জিয়া নিজেই দলের মেয়র প্রার্থীর জন্য প্রচারণায় অংশ নেবেন। এছাড়া নির্বাচনি কৌশল নিয়েও আলোচনা হয়।
কৌশল প্রসঙ্গে বিএনপির আরেক আইনজীবী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘খালেদা জিয়ার কাছে দলের আইনজীবীরা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন— সরকার নির্বাচনে হেরে যাওয়ার কোনও ইঙ্গিত পেলে বা ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম দেখলে নির্বাচন বন্ধে একাধিক ব্যক্তির পক্ষ থেকে রিট করা হতে পারে। আর রিট হলে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেলের পক্ষ থেকেও কোনও বাধা আসবে না।’
এ বিষয়টি তোলার পর খালেদা জিয়া আইনজীবীদের কাছে জানতে চান, এক্ষেত্রে করণীয় কী? পরে আইনজীবীরা পরামর্শ দেন— ক্ষমতাসীন দল এমন করতে পারে, এ বিষয়টিকে নেতাদের বক্তব্যের মাধ্যমে সামনে আনতে হবে।
বৈঠক সূত্র আরও জানিয়েছে, খালেদা জিয়া দলের বুদ্ধিজীবীদের কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উত্থাপিত বিদেশে সম্পদ থাকার অভিযোগ প্রসঙ্গে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন। তিনি জানান, বিদেশে তার ও তার পরিবারের কোনও সদস্যের সম্পদ নেই।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বৈঠকে অংশ নেওয়া বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিভিন্ন শ্রেণিপেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। এখানে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক বিষয় উঠে আসে।’
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির প্রচার সম্পাদকের বক্তব্য হলো, ‘বৈঠকে আইনজীবীরাও ছিলেন। তাদের সঙ্গে মামলার বিভিন্ন আইনি দিক নিয়ে আলোচনা করেছি। সত্যি বলতে সবার সঙ্গে দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি ভাগাভাগি করা হয়েছে।’
চেয়ারপারসনের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রবিবার রাত প্রায় ৯টার থেকে বৈঠকটি শুরু হয়। এতে আমন্ত্রিত হিসেবে অংশ নেন অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ, অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক সদরুল আমীন, ইব্রাহিম খলীল, অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ খন্দকার চৌধুরী, কবি আবদুল হাই শিকদার।
বিএনপি নেতাদের মধ্যে ছিলেন আবদুল্লাহ আল নোমান, অ্যাডভোকেট মাহবুব হোসেন, সাংবাদিক শওকত মাহমুদ, রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী অ্যানি, সানাউ্লাহ মিয়াসহ অনেকে।
এর আগে রাত সাড়ে ১১টার দিকে বৈঠক থেকে বেরিয়ে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসনকে পরামর্শ দিয়েছি, তিনি যেন তার মামলাগুলো নিয়মিত আদালতে শুনানির ব্যবস্থা করেন। এটা তাকে রোজ আটকে রাখার জন্য সরকারের কৌশল।’
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন