চট্টগ্রাম নগরীতে প্রকাশ্য দিবালোকে স্কুলছাত্র আদনান ইসফার (১৫) কে ছুরিকাঘাত করে হত্যাকারীরা সবাই স্থানীয় ছাত্রলীগের কর্মী। তারা হত্যাকাণ্ডের পর এক ছাত্রলীগ নেতার বাসায় অবস্থান নিয়েছিল। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পিস্তলটিও এক ছাত্রলীগ নেতার বলে স্বীকার করেছে হত্যাকারীরা।
বুধবার রাতে হত্যাকাণ্ডে জড়িত ৫ কিশোরকে গ্রেফতার করার পর তারা পুলিশকে এসব তথ্য জানায়। তারা স্থানীয় চকবাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রউফ এর অনুসারী বলে জানা যায়।
হত্যাকাণ্ডের পর প্রত্যক্ষভাবে জড়িত চারজন ফটিকছড়ি উপজেলার সমিতিরহাট ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ফয়সালের বাড়িতে অবস্থান নিয়েছিল। ওই বাড়ি থেকেই পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। অপর একজনকে নগরীর বাদুরতলা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, সপ্তাহখানেক আগে মহসিন কলেজের মাঠে খেলা নিয়ে আদনান ও তার বন্ধুদের সঙ্গে জামালখানের আইডিয়াল স্কুলের দুই ছাত্রের কথা কাটাকাটি হয়। ঘটনার দিন ১৬ জানুয়ারি দুপুর ১টার দিকে আইডিয়াল স্কুলের দুই ছাত্রকে জামালখান মোড়ে দেখে ধাওয়া দেন আদনান ও তার কয়েকজন বন্ধু। আইডিয়াল স্কুলের ওই দুই ছাত্রও রউফ গ্রুপের ছাত্রলীগ কর্মী।
মঈন, সাব্বির, সাঈদ, আরমান ও মুনতাছির এবং আরও তিনজন রাজনৈতিক বড় ভাই তখন জামালখানে ‘মেজ্জান হাইলে আয়্যূন’ নামে একটি হোটেলে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন। ধাওয়া খেয়ে আইডিয়াল স্কুলের দুই ছাত্র তখন দৌঁড়ে ওই হোটেলে ঢুকে পড়ে। সেখানে আড্ডারত বড় ভাইদের সাহায্য চান তারা।
তখন মঈন, সাব্বির, সাঈদ, আরমান ও মুনতাছির হোটেল থেকে বেরিয়ে আরমানদের পাল্টা ধাওয়া দেন। তখন আদনানকে ফেলে তার বন্ধুরা পালিয়ে যায়। সাব্বির এসে আদনানের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেন এবং কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। আরমান ও সাঈদ লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকেন।
আদনান দৌঁড়ে পালানোর সময় জামালখানে খাজা আজমির ওয়ার্কশপের সামনে একটি সিএনজি অটোরিকশার সঙ্গে ধাক্কা লেগে রাস্তায় পড়ে যান। উঠে আবারও দৌঁড়ে পালানোর সময় মুনতাছির পেছন থেকে টি-শার্ট টেনে ধরলে পেছনের অংশ ছিঁড়ে রাস্তায় পড়ে থাকে। তখন মঈন সামনে থেকে এসে আদনানের পেটের একপাশে ছুরিকাঘাত করে। এরপর চারজন পেছনদিকে গণি বেকারির দিকে চলে যায়।
বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে ঘটনায় জড়িতরা আরমানের মৃত্যুর খবর পান। এরপর তারা বাদুরতলা এলাকায় চলে যান। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তারা ফটিকছড়ির সমিতিরহাটে সমিতিরহাট ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সালের বাড়িতে অবস্থান করে।
সূত্রমতে, নগরীর চন্দনপুরা পশ্চিম গলির বাসিন্দা আব্দুর রউফ গত এক বছরে চট্টগ্রাম কলেজ-মহসিন কলেজকেন্দ্রিক ছাত্রলীগ নামধারী একটি বলয় গড়ে তুলেছে। মহসিন কলেজের ছোট গেইটের পাশে আগে শিবিরের যেসব মেস ছিল, সেগুলো পুলিশ একসময় তল্লাশি চালিয়ে খালি করে। একটি মেসের দুটি কক্ষ দখলে নিয়ে রউফ কয়েকজন কর্মীকে সেখানে রাখেন। আর রউফের গ্রুপের কর্মীরা সবসময় আড্ডা দেন ‘মেজ্জান হাইলে আয়্যূন’ হোটেলে।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি-দক্ষিণ) শাহ মো.আব্দুর রউফ বলেন, হত্যাকা-ে রউফের সম্পৃক্ততা আমরা এখনও পাইনি। তবে সম্পৃক্ততার তথ্য পেলে তাকেও গ্রেফতার করা হবে। বড় ভাই, ছোট ভাই যাদের বিষয়ে তথ্য পাব, তাদের গ্রেফতার করব।
এদিকে খুনের ঘটনায় আদনানের বাবা আকতারুল আজম বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এতে গ্রেফতার হওয়া ৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আরও ৪-৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। নিহত আদনান ছিলেন কলেজিয়েট স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র।
সূত্র: শীর্ষনিউজ