নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন্, ‘হতাশার কোনো সুযোগ নাই। রাত পোহালে সূর্য উঠবে। এর ব্যতিক্রম নাই। অন্ধকারকে দূরীভূত করে সকালের আলো ছিনিয়ে আনতে হবে। খালেদা জিয়ার কাছে জেল নতুন কিছু নয়। তিনি জেলে গেছেন। নির্যাতন সহ্য করেছেন। তিনি রাজনীতিতে উড়ে এসে জুড়ে বসেননি। তিনি লড়াই করেছেন। লড়াইয়ে জয়ী হয়েছেন।’
‘জনগণ ভোট দেওযার সুযোগ পেলে গণেশ উল্টে দেবে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, “ভারতে সরকার পরিবর্তনের সময় ওই দেশের জনগণ বলেন ‘গণেশ উল্টে দেব।’
সোমবার রাজধানী নয়াপল্টনে ভাসানী ভবনে ঢাকা মহানগর বিএনপির দক্ষিণের কর্মীসভায় মির্জা ফখরুল এমন মন্তব্য করেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়কে ইঙ্গিত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘জেল তার কাছে (খালেদা জিয়া) কোনো ব্যাপার নয়। ওয়ান ইলেভেনের সময় তিনি এক বছর জেলে ছিলেন। শত চাপ সত্ত্বেও দেশের মাটি ছেড়ে কোথাও যাননি। দেশনেত্রী খালেদা লড়তে জানেন। তিনি কখনো পরাজিত হবেন না।’
উল্লেখ্য, আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের দিন নির্ধারণ করেছেন আদালত। এ রায়কে ঘিরে বিএনপির নেতাকর্মীরা বেশ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।
এদিকে এই দিনে যাতে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা না ঘটে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও প্রস্তুতি নিচ্ছে।
মিজা ফখরুল বলেন, ‘যখন আমরা নির্বাচনের জন্য তৈরী হচ্ছি, আমরা যখন বলছি নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে ও সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে ঠিক সে সময়ে মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায়ের দিন ধার্য করা হয়েছে। অথচ দেশের মানুষ অপেক্ষা রয়েছে ভোট ব্যালটে সিল মেরে গনেশ (সরকার) উল্টে দিবে বলে।’
‘এই সরকার ক্ষমতায় এসে দমন নিপীড়নের মাধ্যমে বিরোধী মতকে স্তব্ধ করতে আইন কানুন মানছে না। এরা দানবে পরিণত হয়েছে। এই দানবকে পরাজিত করতে হবে। নতুবা বাংলাদেশের মানুষ মুক্তি পাবে না। এজন্য আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে,’ দলীয় কর্মীদের এভাবেই নির্দেশনা দেন ফখরুর।
কর্মীদের চাঙ্গা করতে তিনি বলেন, ‘ভয় কিসের। জনগণ আমাদের সাথে আছে। তাদেরকে একত্রিত করে ঐক্যের তরঙ্গের ন্যায় সুনামি সৃষ্টি করতে হবে। কারণ সুনামির কাছে অস্ত্র পরাজিত হতে বাধ্য।’
বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে গেলে আওয়ামী লীগ টিকতে পারবে না। তাই বিএনপিকে উৎখাত করতে চায় তারা। খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখতেই এই মিথ্যা মামলা।’
‘খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চলমান মামলায় সাক্ষ্য দেয়া ৩১ জনের কেউবা প্রমাণ করতে পারেননি যে এই মামলাগুলোর সাথে খালেদা জিয়ার সম্পৃক্ততা রয়েছে। শুধু তাই নয়, যে নথির উপর ভিত্তি করে মামলা পরিচালনা হচ্ছে সেটিও জাল। নথিতে কোথাও খালেদা জিয়ার স্বাক্ষর নেই। মূলত খালেদা জিয়াকে কোনভাবে মামলার মাধ্যমে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতেই এমন টার্গেট করেছে সরকার,’ মন্তব্য করেন ফখরুল।
অতীতের খালেদা জিয়ার জেলখাটার ইতিহাস টেনে ফখরুল আরো বলেন, ‘এক এগারো সরকার খালেদা জিয়াকে জেলে আটকে রেখেছিল। আওয়ামী লীগও বার বার চেষ্টা করছে বিএনপিকে ধ্বংস করতে। কিন্তু ধ্বংস করতে পারেনি। বরং খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি টিকে আছে, থাকবে। সামনে আরো শক্তিশালী হবে। শত চেষ্টা করেও তাকে (খালেদা জিয়া) পরাজিত করা যাবে না।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে সাংগঠনিক সভায় বক্তব্য রাখেন মহানগর দক্ষিণের নেতৃবৃন্দ এতে বক্তব্য দেন। সঞ্চালনা করেন দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাসার।
উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পর আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি মামলার রায়ের দিন ধার্য করেছেন আদালত।
সূত্র: পুর্বপশ্চিমবিডি