বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির নেতাকর্মী ও অন্যদের খেয়ালখুশি মতো গ্রেপ্তার ও আটক বন্ধ করা উচিত বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের। এক্ষেত্রে বিক্ষোভে পুলিশিংয়ের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে চলতে প্রকাশ্যে নির্দেশ দেয়া উচিত বাংলাদেশ সরকারের।
এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। এতে বলা হয়েছে, আজ ৮ই ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, তার ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান সহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে একটি দুর্নীতি মামলার রায় হচ্ছে। এ রায়কে সামনে রেখে শত শত মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদেরকে আটক রাাখা হয়েছে।
ওই বিবৃতিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্রাড এডামস বলেছেন, বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ থেকে বিরত রাখার মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার মত প্রকাশের স্বাধীনতা লঙ্ঘন করছে। তারা বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার অধিকারও লঙ্ঘন করছেন।
ব্রাড এডামস আরো বলেন, যখন সব দলের নেতার উচিত তাদের সমর্থকদের সহিংসতায় জড়িত হওয়ার বিষয়ে সতর্কতা করা উচিত, তখন এটা সরকারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীকে সব সময় সংযত থাকার পরামর্শ দেবে সরকার।
ওই বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দুই লাখ ৫০ হাজার ডলার দুর্নীতির দায়ে যদি খালেদা জিয়াকে অভিযুক্ত হিসেবে সাব্যস্ত করা হয় তাহলে তার জেল হতে পারে এবং ২০১৯ সালের শুরুর দিকে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনে তাকে অযোগ্য ঘোষণা করা হতে পারে। তিনি যদি অভিযুক্ত হন তাহলে তার নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করতে পারে এ বিষয়টি মাথায় রেখেই পুলিশ অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করেছে। সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে। বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করেছে। বিএনপির বেশ কিছু সিনিয়র নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে। এর আগেও বাংলাদেশ রাজনৈতিক বিক্ষোভ সমাবেশকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত ও বৈষম্যমুলকভাবে শক্তি প্রয়োগ করেছে। এর আগে বিক্ষোভকালে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীরা লোকজনকে আহত, হত্যা ও অগ্নিসংযোগ করেছে। এর জবাবে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা গ্রেপ্তার, নির্যাতন, হত্যা ও জোরপূর্বক গুম করেছে কয়েক শত মানুষকে।
৭ই ফেব্রুয়ারি ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন বেগম জিয়া। এ সময় তিনি সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, তাকে ও তার পরিবারকে হয়রান করার জন্য সরকার মিথ্যা অভিযোগ এনেছে। তবে তিনি নেতাকর্মীদেরকে শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ক্ষমতাসীনরা প্রতিবাদ বিক্ষোভের অধিকারকে খর্ব করেছে। নিষিদ্ধ করেছে মিছিল। প্রশাসনিক নির্দেশে এটা করা হয়েছে। আমরা রায় নিয়ে যতটা শঙ্কিত তার চেয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে এতে।
ঢাকা ভিত্তিক মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপ আইন ও সালিস কেন্দ্র বলেছে, গত আট দিনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৭৮৬ জনকে। বিরোধী দলীয় একজন মুখপাত্র হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেছেন, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও তাদের জোটের সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য দলের সদস্য সহ কয়েক হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উদ্বেগ দেখা দিয়েছে যে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থকরা সহিংসতায় উস্কানি দিতে পারেন। একে অন্যের সমর্থকদের টার্গেট করতে পারেন।
তাই বাংলাদেশ সরকারের কাছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আহ্বান জানিয়ে বলেছে, জাতিসংঘের বেসিক প্রিন্সিপাল অন দ্য ইউজ অব ফোর্স অ্যান্ড ফায়ার আর্মস মেনে চলতে আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের প্রতি প্রকাশ্যে যেন নির্দেশ দেয় সরকার। ব্রাড এডামস বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার দাবি করছে তারা মুক্ত ও গণতান্ত্রিক। কিন্তু তারা রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন পীড়নের মাধ্যমে সেই দাবিকে অন্তঃসারশূন্য করে তোলা হচ্ছে। সহিংসতা প্রতিরোধ ও সর্বনিম্ন রাখার দায়িত্ব রয়েছে সরকারের। তবে তা করতে হবে মৌলিক অধিকারের প্রতি সম্মান দেখিয়ে, সেগুলোকে অবজ্ঞা করে নয়।
সূত্র: মানবজমিন