অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের কথিত দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের সাজা দিয়ে কারাগারে নেয়ার পর থেকে তার মুক্তির দাবিতে দলটি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত হরতাল-অবরোধের মতো বড় ধরণের কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করেনি বিএনপি।
গত বৃহস্পতিবার মামলার রায়ের দিন বিএনপির কয়েক হাজার নেতাকর্মী দলের চেয়ারপারসনকে শোভাযাত্রার মাধ্যমে বকশিবাজারের বিশেষ আদালতে নিয়ে এসেছিল। ওই দিন তারা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করে বকশিবাজার আসছিল। বিনা উস্কানিতে রাস্তায় কয়েক জায়গায় ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও পুলিশ তাদেরকে বাধা দিয়েছে। এ সময় বিক্ষিপ্ত কিছু সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এমনকি পুলিশ-ছাত্রলীগ বাধা না দিলে তাও হতো না।
এরপর খালেদা জিয়ার রায় ঘোষণার পর বিএনপি ২ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে। শুক্র ও শনিবার দুই দিনের প্রতিবাদ-বিক্ষোভও ছিল শান্তিপূর্ণ। বিভিন্ন স্থানে পুলিশ তাদের প্রতিবাদ সমাবেশে হামলা ও লাঠিচার্জ করেছে। কিন্তু বিএনপি কর্মীরা বড় ধরণের কোনো সহিংসতায় লিপ্ত হয়নি।
এরপর বিএনপি আবার মানববন্ধন, অবস্থান ও অনশন কর্মসূচি ঘোষণা করে। এর মধ্যে সোমবার সারাদেশে তারা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপির মানববন্ধন এক পর্যায়ে জনসমুদ্রে পরিণত হয়। এখানেও তারা কোনো সহিংস কর্মকাণ্ড করেনি। এরপরও মানববন্ধন শেষে পুলিশ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুকে আটক করে নিয়ে যায়। কিন্তু, প্রতিবাদে বিএনপি কোনো বিক্ষোভ বা ভাঙচুর করেনি।
এদিকে, দলের চেয়ারপারসনের মুক্তির দাবিতে যখন বিএনপি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে ঠিক তখনি কুমিল্লায় দায়ের করা ৩টি নাশকতার মামলায় কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে আবার শ্যোন অ্যারেস্ট দেখালো পুলিশ। উচ্চ আদালতে আপিল ও জামিন আবেদনের জন্য যখন রায়ের কপি চেয়ে আবেদন করা হলো তখন ৩টি মামলায় আবার গ্রেফতার দেখানোর বিষয়টি মানুষকে বিস্মিত করেছে। এনিয়ে প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে সরকার কি পরিকল্পিতভাবে বিএনপি জোটকে সহিংসতার দিকে নিতে চাচ্ছে? কারণ, খালেদা জিয়ার রায়ের আগে সরকার কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। সরকারের রণপ্রস্তুতি দেখে মনে হচ্ছিলো দেশে বড় ধরণের কোনো যুদ্ধ সংঘটিত হতে যাচ্ছে। আর বিএনপি বার বারই বলে আসছিল যে তাদের আন্দোলন হবে অহিংস ও শান্তিপূর্ণ। রায়ের পর সেটা তারা বাস্তবেও প্রমাণ করে দেখিয়েছেন।
রাজনীতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকার যদি খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিয়ে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে আটকে রাখার চেষ্টা করে তাহলে দলের চেয়ারপারসনকে মুক্ত করার জন্য তারা হরতাল-অবরোধের মতো বড় ধরণের কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে। আর হয়তো বা সরকারও এমন কিছু চাচ্ছে। যাতে বিএনপি বড় ধরণের আন্দোলনে গেলে সরকার নিজেদের লোক দিয়ে নাশকতা সৃষ্টির সুযোগ পাবে। এরপর বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে গণহারে গ্রেফতার করে জেলে ভরবে।
তারা এটাও মনে করছেন, বিএনপি জোট এবার সরকারের পাতানো ফাঁদে পা দেবে না। বিএনপি বুঝতে পারছে যে সরকার দেশে সহিংস কর্মকাণ্ড চাচ্ছে। বিএনপি এবার সরকারকে সেই সুযোগ দেবে না। তারা শান্তিপূর্ণভাবেই দলের চেয়ারপারসনের মুক্তির দাবিতে আন্দোলন করে যাবে।