বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও খালেদা জিয়ার প্যানেল আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার ১ হাজার ১৬৮ পৃষ্ঠার রায়ে পাঁচ ভাগের চার ভাগ একেবারেই অবান্তর। সেগুলো কোনও গ্রাউন্ডস না, কিন্তু সবই দিয়েছেন বিচারক।
মঙ্গলবার বিকালে খালেদা জিয়ার আপিল আবেদন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে উপস্থাপনের পর সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় সাংবাদিকদের উদ্দেশে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘রায়ের সত্যায়িত কপি সোমবার বিকালে পেয়েছি। সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের আইনজীবীরা আপিল প্রস্তুতির কাজে লেগে যান। আমরা রায়টি পড়ে অবাক হয়েছি। একটা উদাহরণ দেই আপনাদের, ‘‘আপনারাও টেলিভিশনে স্ক্রলিং করেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন, তিনি তা স্বীকার করে নিয়েছেন’। এমন একটা মিথ্যা, সম্পূর্ণ অসত্য কথা রায়ের মধ্যে লিখে সারা দেশের মানুষের মধ্যে প্রচার করা হলো। এটাও একই ষড়যন্ত্রের অংশ। কোনও আসামি কি বলে, আমি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছি? সেখানে একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন ছিল।’’
বিএনপির এই আইনজীবী অভিযোগ করে বলেন, ‘‘খালেদা জিয়া এক জায়গায় বলেছেন, ‘অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে নির্বিচারে গুলি করে। প্রতিবাদী মানুষদের হত্যা করা হচ্ছে। ছাত্র ও শিক্ষকদের হত্যা করা হচ্ছে। এগুলো কি ক্ষমতার অপব্যবহার নয়? ক্ষমতার অপব্যবহার আমি করেছি?’ সে প্রশ্নবোধক চিহ্নটাকে উঠিয়ে দিয়ে এখানে একটা দাঁড়ি দিয়ে দিয়েছে।’’
‘শেয়ারবাজার লুট করে লক্ষকোটি টাকা তছরুপ হয়ে গেল। নিঃস্ব হলো নিম্নআয়ের মানুষ। ব্যাংকগুলো লুটপাট করে শেষ করে দেওয়া হচ্ছে। সুতরাং এই যে আজকে রায়ের মধ্যে একটা মিথ্যা কথা বলে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রশ্নবোধক চিহ্নটাকে তুলে দিয়ে সেখানে দাঁড়ি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অরিজিনালি খালেদা জিয়ার যে বক্তব্য, সেটা পরীক্ষা করে দেখেছি। সেখানে প্রশ্নবোধক চিহ্নটা আছে এবং সেটা রেকর্ডে আপনারা পাবেন। যখন বিচার হবে আমরা রেকর্ড কল করাব, যেন এটা পরীক্ষা করে দেখা যায়।’
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘কোনও আসামি এই পর্যায়ে গিয়ে বলতে পারে না, আমি নিজে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছি। তিনি প্রথমে বলতে গিয়ে দ্বিধাবোধ করতেন। সুতরাং সম্পূর্ণভাবে অবাস্তব ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এটা করা হয়েছে, যেন তার ভাবমূর্তি নষ্ট করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘যাই হোক আজকে আমরা আপিল ফাইল করেছি। এই আপিলের নম্বরও পড়েছে। আপিল নম্বর ১৬৭৬/১৮। আমরা আজ বারের সভাপতির (অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন) নেতৃত্বে স্লিপ দিয়েছি। কারণ দুটি আদালত আছে এ ধরনের মামলা শুনানি করার জন্য। আমরা সিনিয়র বেঞ্চে গিয়েছি। বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম একজন সম্মানিত ব্যক্তি। আমরা সবাই তাকে শ্রদ্ধা করি। আমরা সেই সিনিয়র বেঞ্চে গেছি। জয়নুল আবেদীন সেই স্লিপ দিয়েছেন। সেই স্লিপ আদালত গ্রহণ করেছেন। আমাদের সব সিনিয়র আইনজীবীর সঙ্গে তরুণ আইনজীবীরাও ছিলেন।
বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার জামিন চাইবেন উল্লেখ করে এই আইনজীবী-রাজনীতিবিদ বলেন, ‘আপিলটা মঞ্জুর করাব। সঙ্গে সঙ্গে জামিন প্রার্থনা করব। শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল সেখানে ছিলেন। তিনি বলেছেন, তাকে কপি দিতে হবে। আমরা বলেছি, কপি তার কাছে পৌঁছে দেব। দুদকের আইনজীবীও ছিলেন। তাকেও আমরা কপি দিয়ে দেব। আশা করি, বৃহস্পতিবার তার (খালেদা জিয়ার) আপিল গ্রহণ হবে। সেদিন তিনি জামিনও পেতে পারেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে, এটা প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি। তাই তিনি নির্দোষ। আপিলে খালাস পাবেন।
সূত্র: যুগান্তর