দলের হাইকমান্ডের পরামর্শে ২০ দলীয় জোটের পরিধি বাড়িয়ে আরও বড় আকার দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা চলছে বিএনপিতে। নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে অন্যান্য ডান-বাম ধারার রাজনৈতিক দলগুলোকে পাশে চায় দলটি। যদিও এখন পর্যন্ত কোনও রাজনৈতিক দল বিএনপিকে পাশে থাকার নিশ্চয়তা দেয়নি। বিশেষ করে আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আন্দোলনে অনীহা আছে কয়েকটি দলের-এমন সম্ভাবনাকে মাথায় রেখেও ঐক্য চাইছে বিএনপি।
সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বলছে, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ধ্বংস হবে নিশ্চিতভাবেই। আর এ কারণে রাজপথকেই ‘ঐকমত্যে’র জায়গা ভাবছেন নেতারা। একইসঙ্গে আওয়ামী লীগের অধীনে কোনও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না বলেও মনে করছেন তারা।
জানা গেছে, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখেই উড়ো-পরামর্শে বিএনপি-জোট ভেঙে বৃহত্তর জোট গড়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। বিএনপির এই উদ্যোগে সন্দিহান খোদ ২০ দলীয় জোটের একাধিক নেতাই। তাদের ভাষ্য, জনতার জোট বা যেকোনও জোটে কেউ আসতে চাইলে, কার সঙ্গে কথা বলে দলগুলো আসবে? তবে সূত্রগুলো বলছে, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বৃহৎ রাজনৈতিক ঐক্যের কথা ভাবা হচ্ছে। দৃশ্যমান কোনও উন্নতি না হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভেতরে-ভেতরে আলোচনা চলছে। ইতোমধ্যে বিকল্প ধারা, সিপিবি-বাসদ, বাম মোর্চা, গণফোরামসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে এক কাতারে নিয়ে আসার চিন্তা এসেছে বিএনপির হাইকমান্ড থেকেই। যদিও এ নিয়ে অনেকের প্রশ্ন রয়েছে।
যদিও ‘কোনও ধরনের জোটের প্রস্তাব আসেনি’—এমন তথ্য আগেই দিলেন বিকল্প ধারার সভাপতি অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গতবার বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়নি। এবারও নির্বাচনে অংশ না নিলে যদি নিবন্ধন বাতিল হয়ে যায় বিএনপির, এই রকম অবস্থায় আমরাও আছি। আমাদেরও চলে যাবে। ফলে, নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করাটাকেই সিরিয়াসলি নিতে হবে।’
বি চৌধুরী প্রস্তাবের বিষয়ে সরাসরি না বললেও বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্যের দাবি, বি চৌধুরী সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিয়ে তার ছেলে মাহী বি চৌধুরীকেই প্রমোট করবেন। আর ড. কামালকে প্রয়োজনে দু’টি আসনে প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দিতে হবে।
নির্বাচনকে সামনে রেখে অংশগ্রহণমূলক বা সব দলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা আলোচনা এলেও খালেদা জিয়া এর আগে কয়েকবার জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়ে সাড়া পাননি। গত ২০১৬ সালে হলি আর্টিজানে হামলার পর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসায় গিয়ে দেখা করেছেন। কিন্তু এর কোনও সুফল আসেনি।
বিএনপি-জোটের অনেকের প্রশ্ন, খালেদা জিয়া বা বিএনপি এই মুহূর্তে কোন উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ঐক্যের বিষয়টি তুলবে। আবার প্রকাশ্যে কাদের সিদ্দিকীও বলে গেছেন ওই বছরই-জামায়াতকে রেখে কোনও জোটে তিনি যাবেন না। এই সমস্যার কথা একাধিকবার জানানো হয়েছে সিপিবি-বাসদ, গণফোরামের পক্ষ থেকেও। বিশেষ করে ড. কামাল হোসেন কোনও অবস্থাতেই জামায়াতকে রেখে বিএনপির সঙ্গে ঐক্যে আসবেন না।যদিও বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্যের মত—জামায়াত-প্রশ্নে ড. কামাল হোসেন দ্বিমত করবেন না।
রাজপথে আন্দোলন করতে গিয়ে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐক্যের সম্ভাবনাকে খারিজ করছেন না বাম মোর্চার সাবেক সমন্বয়ক সাইফুল হক। তার ভাষ্য, ‘আগামী দিনগুলোতে দাবি নিয়ে আমরা জোটকে তরান্বিত করবো। একই ইস্যুতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও যদি রাস্তায় থাকেন, তাহলে নিশ্চয় তাদের সঙ্গে আন্দোলনের একটা ঐক্য কোনও অবস্থাতেই গড়ে উঠবে না—এমন আশঙ্কাকে পুরোপুরি খারিজ করে দেই না। কিন্তু এটা নির্ভর করবে রাজপথের কর্মসূচির ওপর, পদক্ষেপের ওপর।’
তবে বাম মোর্চার সাবেক সমন্বয়ক ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বললেন, ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলে বাম-প্রগতিশীল দলগুলোর বিকল্প জোট নির্বাচনে উপস্থিত থাকবে। গণসংহতি আন্দোলনও অংশ নিতে চাইবো। সেক্ষেত্রে দ্বি-দলীয় বৃত্তের বাইরে জনগণের রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার জন্য দেশের প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করবো।’
গণফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী মনে করেন, ‘সরকার ছলে-বলে-কৌশলে ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে চায়। সুতরাং এই সরকারের কাছে কোনও সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনা নেই।’ তিনি বলেন, ‘তারা সাংবিধানিকতা রক্ষার কথা বলে নির্বাচন করে। ফলে, সামান্যতম সুযোগও থাকে, তাহলে নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ প্রয়োজন।’
২০ দলীয় জোটের শরিক একটি দলের প্রধান মনে করেন, বিদেশ থেকে ‘উড়ো পরামর্শে’ দেশে জোট হবে না, যদি না আগামী নির্বাচনের বিষয়টিকে গুরুত্বপূর্ণ করে না তোলা হয়।
এ জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হোক, এটা সবাই চায়। আর এই চাওয়া থেকেই একটি উদ্যোগ চলছে’।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন