পুলিশের নিরাপত্তার মধ্যেও অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবালের ওপর যেভাবে হামলা হয়েছে, তা সরকার কিংবা রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
ওই হামলার ঘটনায় বিএনপিকে জড়িয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের একদিন পর সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
রিজভী বলেন, “ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবালের মতো প্রতিথযশা লেখক তার ওপর বিশ্ববিদ্যালয়ে এতো নিরাপত্তা, তার সিকিউরিটি, এর মধ্যে একজন সাহস করল, সাহস করে তার মাথায়-পিঠে-ঘাড়ে ছুরিকাঘাত করল। এটাতে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে মানুষের মনে- এটা কী করে সম্ভব? রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা না থাকলে, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকলে কী করে সম্ভব?
“যাকে ধরা হয়েছে তার শুধু আওয়ামী লীগের কানেকশন পাওয়া যাচ্ছে , অন্য কোনো কানেকশন নাই। এখন আঘাতকারীর যত পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে ততই আওয়ামী কানেকশন সুস্পষ্ট হয়ে উঠছে। এটা আওয়ামী লীগই করতে পারে।”
গত শনিবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চে একটি অনুষ্ঠান চলাকালে এক তরুণ ছুরি নিয়ে অধ্যাপক জাফর ইকবালের ওপর হামলা চালায়। হামলার পরপরই ফয়জুল নামের ওই তরুণকে ধরে ফেলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
এ ঘটনায় ফয়জুলের মামা-চাচা ও বাবা-মাসহ এ পর্যন্ত মোট ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। আটকদের মধ্যে ফয়জুলের মামা ফজলুর রহমান সুনামগঞ্জ জেলা কৃষক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক।
রোববার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়াদুল কাদের বলেন, “এই হামলা যে একটা চক্রান্ত এটা সত্য। চক্রান্ত তাদের, যাদের বিএনপি পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে। কে ঘটনা ঘটিয়েছে, কারা কারা তাকে দিয়ে ঘটনা ঘটিয়েছে এ বিষয়টা ইতোমধ্যে পরিষ্কার। এ কথা, সে কথা বলে বিভ্রান্তি যারা সৃষ্টি করে, তারা আজকে দেশের স্বার্থের পক্ষে কাজ করছে না”
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, “নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ নূর বাবুকে স্থানীয় ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্তৃক ধারালো ছুরি দিয়ে হত্যা ও সশস্ত্র ধাওয়ায় প্রাণ বাঁচাতে ঊর্ধ্বশ্বাসে পলায়নরত কিশোর শ্রমিক বিশ্বজিৎকে ছাত্রলীগের ছুরিকাঘাত করে হত্যার ঘটনার সাথে অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবালের হত্যাচেষ্টার হুবহু সাদৃশ্য রয়েছে।
“ওবায়দুল কাদের সাহেবের কথা শুনে সারা জাতি বিস্ময়ে বাক্যহারা। তবে আওয়ামী লীগের নিখুঁত মিথ্যাচার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। তার (ওবায়দুল কাদের) বক্তব্যেকে পুঁথি সাহিত্যে বর্ণিত উদ্ভট ও সামঞ্জস্যহীন কাহিনীর মতো মনে করে। ”
তিনি আরো বলেন, “আপনারা পুঁথি সাহিত্য পড়েছেন, নিশ্চয় মনে আছে- ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ হাটিয়ে চলিল, লাখে লাখে সৈন্য মরে কাতারে কাতার.. এই যে সামঞ্জস্যহীন-উদ্ভট এরকমই হচ্ছে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য। অনর্গল, উড়ো, অবান্তর প্রচারে নিরন্তর নিবেদিত নেতা ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী নেতা হরদম বিরোধী দলের বিরুদ্ধে এমন কল্পকাহিনী প্রচার করে শুধুমাত্র নিজেদের নানাবিধ পাপ ঢাকার জন্য।”
রিজভী বলেন, “সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের করা হয়নি, তদন্ত হয়নি, প্রকৃত অপরাধী শনাক্ত করা হয়নি, অথচ এই রক্তাক্ত ঘটনায় চটজলদি প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে আওয়ামী নেতারা বিএনপির ওপর দায় চাপিয়ে দেন। জনমানসকে বিভ্রান্ত করতেই মোক্ষম চাল হিসেবে বিএনপির ওপর এই দায় চাপানো হয়।”
দেশে সব জঙ্গি হামলা, শিক্ষক, ব্লগার, পুরোহিত, যাজক, প্রকাশক, মসজিদের ইমাম, মোয়াজ্জিন হত্যায় ‘সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা’ ছিল বলে অভিযোগ করেন তিনি।
নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবুল খায়ের ভুঁইয়া, আতাউর রহমান ঢালী, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র: বিডিনিউজ