বিএনপির সভা-সমাবেশ আয়োজনে অনুমতিজনিত প্রতিবন্ধকতা তৈরির সমালোচনা করেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেছেন, দেশে আইনের দুই রকম প্রয়োগ হচ্ছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উনারা ও উনাদের আপনজনরা জনসভা করলে কোনো দোষ হবে না। কিন্তু বিএনপি করতে চাইলে অনুমতি দেয়া হবে না। উনারা (সরকারি দল) যখন রাস্তা বন্ধ কইরা মিটিং-মিছিল করেন তখন ওটা হালাল। আর আমরা ফুটপাতে দাঁড়িয়ে মিছিল-মিটিং করতে গেলেও হারাম।
জলকামান থেকে পানি দেয়া, পুলিশ দিয়ে পেটানো এসব তো গণতন্ত্র নয়। গণতন্ত্রের ‘গ’ ও নয়। এটা অন্য তন্ত্র হতে পারে, গণতন্ত্র না। বিএনপির সাবেক মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘ঘুরে দাঁড়াও বাংলাদেশ’ আয়োজিত এক স্মরণসভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, দেশে আইনের দুই রকম প্রয়োগের কারণটা কী? একটাই কারণ। খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখেও তারা (সরকার) ভরসা পাচ্ছে না। মনে করছে, বিএনপির সভা হয়ত তাদের চেয়েও বড় হয়ে যাবে। তখন মানুষ বলবে- এই সর্বনাশ।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মিথ্যা মামলায় কারাগারে আছেন। অনেক চেষ্টা হবে খালেদা জিয়াকে আটকে রাখার। কিন্তু সেটি সফল হবে না। ইনশাআল্লাহ তিনি বের হয়ে আসবেন। আর তাঁর নেতৃত্বে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জনগণের সরকার গঠন করব।
তিনি বলেন, ওয়ান ইলেভেনের সময় বিএনপি ও ২০ দল ভাঙার চেষ্টা হয়েছে। ৫ই জানুয়ারির আগে অনেককে লোভ দেখিয়ে ভোটে নেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেয়ার পর মনে করেছিল, বিএনপি ও জোট ভেঙে যাবে। কিন্তু কোনো ষড়যন্ত্র সফল হয়নি। বিএনপি ও ২০ দল ভাঙা যাবে না।
তিনি বলেন, বর্তমানে জনগণ কঠিন সময় পার করছে। এর থেকে মুক্ত হতে চাইলে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে, জনগণের কাছে দায়বদ্ধ সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর সবসময় খালেদা জিয়া এ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন আওয়ামী লীগের পছন্দ নয়। তারা চায় বিএনপি সংঘাতের রাজনীতি করবে আর তারা সুযোগ নিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের নির্যাতন করবে। কিন্তু আমরা সরকারের ফাঁদে পা দেইনি। সে জন্য উসকানি দিচ্ছে সরকার।
দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরে প্রবীন এ শ্রমিক নেতা বলেন, পত্রিকায় দেখলাম বাংলাদেশ মানবাধিকার বিষয়ে চার ধাপ নিচে নেমে গেছে। এমনিতেই ছিলাম বোধহয় ১১২/১১৪, এখন ১১৫’তে এসেছি। মানে শেষের দিকে আরকি। অন্যদিকে ঢাকা শহর বিশ্বের নিকৃষ্টতম শহরের একটায় পরিণত হয়েছে। পত্রিকায় দেখলাম, পরিবেশ আন্দোলন একটা রিপোর্ট করেছে বাংলাদেশে পরিবেশ রক্ষা বিষয়ে কিছুই হচ্ছে না।
তিনি বলেন, উন্নয়ন হচ্ছে, পত্রিকায় বের হয়, বাংলাদেশে সড়ক বা সেতু নির্মাণে যে অর্থ খরচ হয় দুনিয়ার কোথাও এতো খরচ হয় না। এতো বেশি টাকা খরচ করে যে রাস্তা বা সেতু বানানো হচ্ছে এসব কি মাটি দিয়ে বানানো হচ্ছে, নাকি ইট-পাথর দিয়ে, নাকি অন্যকিছু দেয়া হচ্ছে। সোনা-রূপা না দিলে তো এতো টাকা খরচ হওয়ার কথা নয়।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, কোথায় যাচ্ছে এসব টাক? শোনা যায় মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডে সেকেন্ড হোম হচ্ছে, কানাডায় বেগমপাড়া হচ্ছে। সুইস ব্যাংকের অ্যাকাউন্টধারীদের জামানত বাড়ছে। এই যে শোনা যায় এই মানুষগুলো কারা?
সংগঠনের সভাপতি কাদের সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহ-যুববিষয়ক সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী, কেন্দ্রীয় নেতা ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁঁইয়া, এনডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য মনজুর হোসেন ঈসা বক্তব্য দেন।
সূত্র: মানবজমিন