জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়াকে হাই কোর্টের দেওয়া জামিন আপিল বিভাগ স্থগিত রেখে গণতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
সোমবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই প্রতিক্রিয়া জানান।
তিনি বলেন, “ক্ষোভের সঙ্গে বলছি, এই আদেশে সরকারের যে ইচ্ছা, সেই ইচ্ছাই প্রতিফলিত হয়েছে। মানুষের যে আশা-আকাঙ্ক্ষার স্থল যে সর্বোচ্চ আদালত, সেই সর্বোচ্চ আদালতে আমরা ন্যায়বঞ্চিত হয়েছি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বঞ্চিত হয়েছেন।”
গণতন্ত্রকে চূড়ান্তভাবে কবর দেওয়ার উদ্দেশ্যেই খালেদা জিয়াকে এভাবে বন্দি রাখা হচ্ছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “চালু একটা কথা আছে যে, কফিনের শেষ পেরেকটি মেরে দেওয়া। কফিনে শেষ পেরেকটি মারা হয়েছে আজকে, আমি মনে করি দেশনেত্রীকে জামিন না দিয়ে।”
দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিল মঞ্জুর করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ সোমবার বিএনপি চেয়ারপারসনের জামিন ৮ মে পর্যন্ত স্থগিত রাখার আদেশ দেয়।
আওয়ামী লীগ সরকার বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে মানুষের অধিকারগুলোকে হরণ করে নিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।
“আমরা এই অন্যায়- অত্যাচার, এই বিচার বিভাগকে ব্যবহার করার তীব্র প্রতিবাদ করছি, নিন্দা জানাচ্ছি।”
খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য দেশের সব রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, গণতন্ত্রকামী মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে সরকার কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, “কৌশলটা হচ্ছে জামিন স্থগিত করে দিয়েছে, নাকচ করেনি। এরপর হিয়ারিং হবে লিভ টু আপিলের। অর্থাৎ এভাবে ক্রমান্বয়ে যেতে থাকবে এবং তাকে আটকে রাখা হবে।
“এটা জামিন দিয়েও করতে পারতো। দুর্ভাগ্যজনক যে ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধাগুলো আদালতে তিনি পাচ্ছেন না।”
সকালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ আদেশ দেওয়ার আড়াই ঘণ্টার পর নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে আসেন বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা আজকে বিক্ষুব্ধ হয়ে আপনাদের সামনে এসেছি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মিথ্যা মামলার যে রায় হয়েছিল, সেই রায়ের পরে …। আপনারা জানেন ৫ বছর সাধারণত আপিল করলেই জামিন হয়ে যায়। সেই মামলা জামিন পাওয়াটা এটা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। এটা তার আইনগত অধিকার। এখন পর্যন্ত এই ধরণের ঘটনা ঘটেনি যে, ৫ বছর জামিন পায়নি।
“আমরা দুর্ভাগ্যক্রমে প্রথম থেকে লক্ষ্য করেছি যে, দেশনেত্রীর জামিন ও তাকে কারাগার থেকে বের করে আনবার যে আইনি প্রক্রিয়া, সেই আইনি প্রক্রিয়াকে অত্যন্ত সচেতনভাবে বাধা দিচ্ছে সরকার।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে দীর্ঘদিন রেখে দেওয়ার অর্থ হচ্ছে, সরকারের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ ‘গণতন্ত্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রীকে বন্দি রেখে নীল নকশা’ অনুযায়ী একতরফা নির্বাচন দেখিয়ে আবার ক্ষমতায় চলে আসা।
“ইতিমধ্যে আপনারা শুনেছেনও। ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন যে, এটা এখন আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। এটা ডিসাইডেড, ডান। এই একটা অবস্থার মধ্যে আজকে আমরা আছি।”
ফখরুল বলেন, “সারা দেশে আমাদের নেতা-কর্মীদের এই অবস্থা। খুলনায় দলের ধর্ম বিষয়ক সহ-সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবুকে তিন দিন আগে তুলে নেওয়ার পর এখনো তার খোঁজ নেই।
“কিছুদিন আগে তেজগাঁও ছাত্র দলের নেতা জাকির হোসেন মিলন যে মারা গেল তার পরিবারের ইন্টারভিউ করার জন্য গতকাল কোন একটি বিদেশি সংবাদ মাধ্যম একটা জায়গা নিয়েছিল। সেকেন্ডের মধ্যে সেখানে পুলিশ ঘিরে ফেলেছে। পরিবারের সদস্যরা সেখানে থাকতে পারেনি।”
দেশের নিম্ন আদালতগুলো জামিন দিচ্ছে না অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “দেখেন আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কতদিন আগে গ্রেপ্তার হয়েছেন। এখন পর্যন্ত তার জামিনের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। কারণ নিম্ন আদালতকে বলে দিয়েছে শুনানি পরে হবে।
“যে কারণে এসকে সিনহা (সাবেক প্রধান বিচারপতি) সাহেবকে চলে যেতে হলো যে, নিম্ন আদালত সরকারের নিয়ন্ত্রণে না থাকে, এটা যেন সুপ্রিম কোর্টের নিয়ন্ত্রণে থাকে। সেজন্য বিধি-বিধান পরিবর্তন করতে বলা হয়েছে। সেটা সরকার করতে দেয়নি। এর ফলে কী হয়েছে? এখন আইন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে নিম্ন আদালত চলছে। তারা বলে দিচ্ছে, একমাস/দুই মাস পরে শুনানি হবে।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র: বিডিনিউজ